পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের আঞ্চলিক রাজনীতি কোন পথে যাচ্ছে? – পর্বঃ ১
![]()
ফিচার ডেস্কঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীদেরকে ঘিরে বিভিন্ন মহল থেকে পরস্পরবিরোধী মূল্যায়ন পাওয়া যায়। পাহাড়ীদের একাংশ, যারা সক্রিয়ভাবে আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তারা বাঙ্গালীদের বড় একটি অংশকে “সেটেলার” বলে দাবি করে। তারা পার্বত্য অঞ্চলকে একটি “বিশেষ অঞ্চল” বলে প্রতীয়মান করে, বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো সকল নাগরিকদের প্রচলিত অধিকারের বিষয়টি মানতে চায়না। অপরদিকে বাঙ্গালীদের মধ্যে যারা সক্রিয় আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তারা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের অধিকার সমান, এমন যৌক্তিক দাবি করছে। এছাড়া গত শতকের ৮০’র দশকে তৎকালীন সরকার প্রদত্ত যেসকল ভূমি অসহায় বাঙ্গালীদেরকে বন্দোবস্তি দেয়া হয়েছে তার পূর্নবাস্তবায়নসহ সম অধিকার চায় তারা। তবে আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাঙ্গালীদের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করে তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। বাঙ্গালীদের মধ্যে এই অনৈক্যর সুযোগ নিচ্ছে উপজাতি আঞ্চলিক দলগুলো। অপরদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণ উপজাতিদের মধ্যে যে পরিমান আগ্রহ রয়েছে বাঙ্গালীদের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে গুনগতমান ধরে রাখার বিষয়ে ঐ পরিমান আগ্রহ নেই। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা সরকার প্রদত্ত বিশেষ কোটা সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি নিজ যোগ্যতাতেও দেশে ও বিদেশে সুনামের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। অপরপক্ষে বাঙ্গালীরা আন্তঃকলহ, গুনগত শিক্ষা অনুপস্থিতি এবং সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেইভাবে এগুতে পারছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন অবস্থানের পরেও বাঙ্গালীদের মধ্যে থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের গুনগত নেতৃত্ব বেড়ে উঠার ক্রমধারা মন্থর গতিতে এগুচ্ছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীলতা অনয়নে বাঙ্গালীদের মধ্যে থেকে যোগ্য নেতৃত্ব এবং বাঙ্গালী ভিত্তিক আঞ্চলিক দলের ঐক্যবদ্ধ সক্রিয় কর্মকান্ড একান্ত প্রয়োজন।
সাউথইস্ট জার্নালের পক্ষ হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীদের মধ্যে থেকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে যারা উল্লেখযোগ্য ভাবে সম্পৃক্ত তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের প্রথম পর্বে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্রপরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাদাৎ হোসেন কায়েশের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হলো। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত আছেন। এছাড়া তিনি ছাত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথেও সম্পৃক্ত রয়েছেন।
সাউথইস্ট জার্নালের সাথে তার কথোপকথন নিম্নরুপঃ
সাউথইস্ট জার্নাল: বর্তমানে পাহাড়ে বাঙ্গালীদের রাজনীতির বর্তমান গুনগত মান এবং এর ভবিষ্যৎ কি বলে মনে করেন?
কায়েশ: আসলে একটি দুঃখ জনক বিষয় হচ্ছে, পার্বত্যাঞ্চলের বাহিরে যে খবরগুলো রটে সেটা আমরা অনেকেই অবগত আছি। সেটা হচ্ছে অনেকেই মনে করে পাহাড়ে যে বাঙ্গালী সংগঠনগুলো আছে সেগুলো লিয়াজো মেন্টেইন করে চলে, বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করে এবং জামাত-শিবিরের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে বলে বাহিরে রটায়। আসলে পাহাড়ের একজন নিঃস্বার্থ কর্মী হিসেবে কথা গুলো শুনলে খুবই দুঃখ লাগে। কারণ, পার্বত্য অঞ্চলে যে বাঙ্গালী সংগঠনগুলো রয়েছে সেগুলো আসলে পার্বত্যাঞ্চলের শিক্ষিত সমাজ দিয়ে পরিচালিত হয়। আমাদের সাথে ছাত্রসমাজ রয়েছে, শিক্ষিত সমাজ রয়েছে, আমরা শুধুমাত্র আমাদের জাতির স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি এবং এই ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্যও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখ লাগে তখনই, যখন শুনি কিছু কিছু বাঙ্গালী সংগঠন অন্যান্য স্বার্থ নিয়ে কাজ করে। এটি আসলেই সত্য নয় হতাশাজনক কথা।
সাউথইস্ট জার্নাল: বাঙ্গালীদের যে আঞ্চলিক রাজনীতি আছে সেটার সাথে জাতীয় রাজনৈতিক দলের কোন সাংঘর্ষিক অবস্থা আছে কি? অনেকেই মনে করেন ইতিপূর্বে বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনেকের সাথেই বিএনপি-জামাতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
কায়েশ: পাহাড়ের আঞ্চলিক বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর সাথে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর কোন সম্পৃক্ততা নেই আবার কোন সাংঘর্ষিক ভূমিকাও ছিলোনা কখনো। আমরা আসলে যেটা মনে ধারণ করি, সেটা হলো অখন্ড বাংলাদেশের সার্ভভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ এবং তার যে নীতি-আদর্শ এবং স্বাধীনতায় তার যে ভূমিকা, সে ভূমিকাকে আমরা মনে ধারণ করে আমাদের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের জাতির মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জানেন, আমাদের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলায় যারা নেতা-কর্মীরা রয়েছেন তারাও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ গুলোতে ভূমিকা রাখছে। আমরা নিঃসন্দেহে বলতে চাই কোন রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকান্ডের মধ্যে যে কাজগুলো বাংলাদেশ সরকারের বিরোধী বা স্বার্থ বিরোধী, দেশদ্রোহী যে কাজ সে কাজে আমরা প্রশ্রয় দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। আমরা নীতিগত দিক থেকে আমাদের কাজগুলো করে যাবো। এছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই, কোন সাংঘর্ষিক ভূমিকাও থাকবে না। অতীতে আমাদের বা আমাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে যে কথাগুলো রটেছে, আমরা নতুন প্রজন্ম যারা আছি সেগুলো নিঃসন্দেহে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। আমরা নতুন প্রজন্ম, নতুন ভাবে, পুরো উদ্যমে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে রাখতে চাই এবং এই পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রেখে, অসাম্প্রদায়িক অবস্থান সৃষ্টি করে আমরা আমাদের আন্দোলন জারি রাখতে চাই এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আমরা আমাদের সম্পূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।
সাউথইস্ট জার্নাল: অনেক বাঙ্গালী আছে যারা আঞ্চলিক রাজনীতি করে, তাদের বিরুদ্ধেতো এলাকার জনগনই মামলা করেছে, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির কারণে! এবিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
কায়েশ: আপনারা জানেন, দশজন মানুষ যখন একসাথে থাকে তখন দশজনের মেন্টালিটি একরকম থাকেনা, দশজনের মধ্যে দুই-এক জনের মানসিকতা এমন হয়ে যায়। আমরা যদি দেখি পুলিশ বিভাগে, সেখানে দুই-এক জনের খারাপ কর্মকান্ডের কারণে পুরো পুলিশ বিভাগকে কলঙ্কিত হতে হয়। ঠিক সেই ভাবে আমি বলবো পাহাড়ে বাঙ্গালী আন্দোলনের যে প্রেক্ষাপট সেখানে গুটি কয়েক কর্মী খারাপ কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ইতিমধ্যেই অনেকে সংগঠন থেকে বহিস্কৃতও হয়েছেন। এরকম কিছু কর্মকান্ড করে তারা পুরো সংগঠনের নামে বাজে কথা-বার্তা রটিয়েছে। জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পরেও যারা এ ধরণের কর্মকান্ডে জড়িত হয় তখনই আমরা চেষ্টা করি তাদেরকে বুঝিয়ে ভালো পথে আনতে অথবা সংগঠন থেকে তাদের বিরুদ্ধে অতীতেও আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করেছি, ভবিষ্যতেও শক্ত হাতে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
সাউথইস্ট জার্নাল: পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটনাক্রমে আপনাদের উপস্থিতিটা সামগ্রিকভাবে কম, আর যে অংশটার কথা আপনি বলছেন সে অংশটার উপস্থিতি বেশী এবং সক্রিয়, এটা কেন বলে মনে হয় আপনার?
কায়েশ: আমরা যদি বর্তমান অবস্থার দিকে তাকাই, আমাদের ছাত্র সংগঠনে ছাত্রদের উপস্থিতিই বেশী, অতীতে কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেটার বিচারে আমরা এখন নেই। আমি আহবান করবো এই মুহূর্তে আমাদের বর্তমান ছাত্র সমাজের যে ভূমিকা সেটাকেই সবাই প্রাধান্য দিক।
সাউথইস্ট জার্নাল: আপনার কাছে কি মনে হয়, বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর মধ্যে যে বিভেদ আছে সেগুলি একসময় ঐক্যে রুপান্তর করা সম্ভব?
কায়েশ: অবশ্যই সম্ভব। বাঙ্গালী যে সংগঠন গুলো রয়েছে, এর মধ্যে কিছু সংগঠন রয়েছে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে আবার কিছু সংগঠন রয়েছে নিজেদের স্বার্থউদ্ধারে কাজ করছে। সকলকে একসাথে নিয়ে, তাদের সবাইকে এক টেবিলে বসিয়ে যদি সবার পরামর্শগুলো গ্রহন করে ঐক্যে গঠনে যদি চেষ্টা করা হয় অবশ্যই ঐক্য গঠন হবে বলে আমি মনে করি এবং পাশাপাশি সেই ঐক্যের মধ্যে দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে বাঙ্গালীদের ভালো একটা অবস্থান তৈরী হবে বলে মনে করি।
সাউথইস্ট জার্নাল: স্থানীয় অনেকেরই শঙ্কা, বাঙ্গালী আঞ্চলিক রাজনীতির নামে আরেকটি চাঁদাবাজ ইউপিডিএফের সৃষ্টি হলো কি না? এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি ?
কায়েশ: সেরকম কিছু নয়, আসলে বিষয়টি সামগ্রিকভাবে দেখলে চাঁদাবাজিটা বাঙ্গালী সংগঠনের গুটি সংখ্যক কয়েকজনের কাজ। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর যারা কর্মী রয়েছে তারা যাতে অন্য কারো স্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহৃত না হয়, যাতে পাহাড়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সম্প্রীতি রক্ষা করে একটা সহাবস্থান সৃষ্টি করা যায়, বিশেষ করে বাঙ্গালীরা যে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সাউথইস্ট জার্নাল: বাঙ্গালী সংগঠনগুলোতে শিক্ষিত ও উন্নত মানসিকতার কর্মীর অভাব রয়েছে কি?
কায়েশ: আমরা পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ বা পাহাড়ের অন্য বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর কথা যদি বলি, সেক্ষেত্রে কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করলেও পার্বত্য অঞ্চল শিক্ষার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। বর্তমানে জেলা-উপজেলার বাঙ্গালী ছাত্ররা এখন অনেকটাই উজ্জল নক্ষত্রের মতো। এ প্লাস পাচ্ছে, গোল্ডেন জিপিএ পাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অভাবনীয় পরিবর্তন চলে এসেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজ না থাকায় দেখা যাচ্ছে এখানে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শেষ করে শহরে গিয়ে পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম চালানো আমাদের বাঙ্গালীদের পক্ষে আর্থিক বা সামাজিক ভাবে সম্ভব হয়না। একজন জেলে বা শ্রমিকের ছেলে গোল্ডেন জিপিএ পাওয়ার পর পরবর্তী স্টেপে গিয়ে লেখাপড়া চলানো সম্ভব হয়না। আমরা চাইবো সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যদি এসব ছাত্রদের লেখাপড়ায় একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে বাঙ্গালীরাও পাহাড় থেকে সমানতালে এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।
সাউথইস্ট জার্নাল: গ্রাম পর্যায়ে যারা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে তাদের বিষয়ে আপনাদের কোন পদক্ষেপ আছে কি ?
কায়েশ: আসলে গ্রাম পর্যায়ে সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে অনেকেই এগিয়ে যেতে পারছে না। মনে করেন, ” আমি যদি পড়ালেখার একটা স্টেজে এসে আটকে যাই, আমার ছোট ভাই কিন্তু আমার স্টেজে আসারও সাহস পাবেনা” সে কারনেই কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ার হারটা বেশী। আমরা আসলে বাঙ্গালী সংগঠন করতে এসে কোন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও নিজেদের পকেট থেকে আর্থিক যোগান দিতে হয়। যেহেতু আমরা চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ত নই সেকারনেই নিজেদের সাধ্যমতো প্রতিবছর আমরা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গরীব ও অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের বই-খাতা, পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম বিতরণ করে থাকি। আমরা মনে করি আমরা যদি কোন আর্থিক সাপোর্ট পাই বা সরকারের নিকট হতে পৃষ্টপোষকতা পাই তাহলে যারা প্রতিবছর শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়ছে তাদের একটা সাপোর্ট দিয়ে আবারো শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে পারবো। আমরা আসলে বুঝতে পারি একটা জাতি গঠনে শিক্ষাগ্রহণ কতটা জরুরী। আর শিক্ষিত সমাজ গড়ে না উঠলে কোন সংগঠন কখনোই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেও পারবেনা, সফলতাও পাবে না।
সাউথইস্ট জার্নাল: শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেতে আপনাদের গ্রাম পর্যায়ে কোন পরিসংখ্যান কমিটি আছে কি না?
কায়েশ: আপনারা জানেন, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও আমাদের কমিটি রয়েছে। এছাড়া একটা সময় আমরা শিক্ষাখাতে পিছিয়ে থাকলেও বর্তমান সরকারের শিক্ষাখাতে অভূতপূর্ব পদক্ষেপে ইউনিয়ন লেভেলে বাঙ্গালীরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। অলরেডি যারা শুরুতেই কিংবা মাঝপথে ঝড়ে যাচ্ছেন তাদের সহায়তায় আমরা পরিসংখ্যান শুরু করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামীতে যারা এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করবে তাদের পারিবারিক অবস্থান নির্নয় করে উচ্চ শিক্ষায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিবো।
সাউথইস্ট জার্নাল: বাঙ্গালীদের ও বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর মানোন্নয়নে আপনি কি স্বপ্ন দেখেন?
কায়েশ: আমি বাঙ্গালী আঞ্চলিক সংগঠনের একজন সদস্য হিসেবে এবং একজন ছাত্র হিসেবে আমি দেখতে চাই, যেসব ছাত্ররা নতুন ভাবে পাহাড় নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখেন তারা যেনো দ্বিগুন উদ্যমে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যান, আমি স্বপ্ন দেখি পার্বত্য চট্টগ্রামে কারখানা স্থাপন হবে, যেখানে এই শিক্ষিত জাতির কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের প্রতিটা ঘরে শিক্ষিত সমাজ তৈরি হোক, সেই স্বপ্নটাই আমি দেখি। সেটার জন্য সকল বাঙ্গালী সংগঠনকে এক হয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার বিকল্প নেই বলেও আমি মনে করি।
সাউথইস্ট জার্নাল: চাকমা সমাজে দেখা যায়, বর্তমানে ২০-২৫ জন পিএইচডি হোণ্ডার আছেন যারা দেশে-বিদেশে কর্মরত আছেন। বাঙ্গালীদের শিক্ষার হারটা ঐ পর্যায়ে যেতে পারছে না কেন? যে পর্যায়ে গেলে ভালো নেতৃত্ব দিতে পারবে?
কায়েশ: আগের তুলনায় বাঙ্গালীরা কিছুটা শিক্ষিত হলেও আসলে এটা সত্য যে, পার্বত্যাঞ্চলে উপজাতি বিশেষ করে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের চেয়ে বাঙ্গালীরা উচ্চ শিক্ষায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি শিক্ষাক্ষেত্রের অভাবটা পূরণ করতে। আমরা সংগঠনের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় ও শিক্ষিত করে তুলতে কাজ করছি। এছাড়া আমরা উপজেলা-জেলা কেন্দ্রীক বিতর্ক প্রতিযোগীতার মাধ্যমে নতুন নতুন বক্তা ও নেতৃত্ব তুলে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি, আমরা যে পদক্ষেপগুলো হাতে নিয়েছি এবং সরকারের মহতি উদ্যেগগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারলে আমরাও আগামীতে পাহাড় থেকে অনেক পিএইচডি হোল্ডার তৈরী করতে পারবো। বাঙ্গালীরাই দেশ-বিদেশে আমাদের সুনাম ছড়িয়ে দিবে। এগিয়ে যেতে পারবে সরকারী-বেসরকারী দপ্তরে।
সাক্ষাৎকারের ভিডিও: