প্রসঙ্গঃ সোনার বাংলা বির্ণিমানে পার্বত্য জেলা পরিষদের ভূমিকা - Southeast Asia Journal

প্রসঙ্গঃ সোনার বাংলা বির্ণিমানে পার্বত্য জেলা পরিষদের ভূমিকা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

 

খগেশ্বর ত্রিপুরাঃ

১৯৭১ ইং সনে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে জন্মলাভ করে। এই স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পৃথিবীর ইতিহাসে অতি অল্প সময়ে মাত্র ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছেন তা ইতিহাসে বিরল। স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ দিনের মাথায় স্বাধীনতা যুদ্ধে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বিশাল সেনা-বাহিনীকে ১৯৭২ ইং সনে ১২ মার্চ তারিখ হতে এদেশ থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম শুরু করে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীকে চমক দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ইতিমধ্যে এদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ববাসীকে আরো অনেক চমক দেখাতে সক্ষম হতেন। বিধিবাম স্বাধীনতা অর্জনের অল্পসময়ের মধ্যে ১৯৭৫ইং সনের ১৫ আগষ্ট কালরাত্রিতে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র কিছু বিপদগামী লোক নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। কিন্তু হত্যা করতে পারলেও বঙ্গবন্ধুর আর্দশ, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে হত্যা করতে পারেনি, যার জন্য বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিচক্ষনতা, তার স্বপ্ন বাংলাদেশ যতদিন রবে, ততদিন থাকবে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করেন ‘‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন কাজ’’ এবং এই কঠিন কাজ সুষ্ঠ সম্পাদন করতে হলে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়োজন; অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হলে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারলেই বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধর রাজনৈতিক বিচক্ষনতা দেখে তৎকালীন বিশ্বের অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্র নায়কেরা ভূয়সী প্রশংসা করে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন। কিউবার অবিসংবাদিত রাষ্ট্র নায়ক প্রেসিডেন্ট ফিডেল কাস্ট্রো দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন ‘‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি’’। তার এই কথার মমার্থ হচ্ছে তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃংঙ্গ হিমালয় পর্বত না দেখলেও পৃথিবীর শীর্ষ ব্যক্তিকে দেখেছেন। তৎকালীন বিশ্বের আরও অনেক রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিবিদগন ফিদেল কাস্ট্রোর এই বক্তব্যের প্রতি নানা ভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ইং সনে প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিডক্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে ২টি প্রশ্ন করেছিলেন: আপনার শক্তি কোথায়?, আপনার দুর্বলতা কোথায়? উত্তরে বঙ্গঁবন্ধু বলেছিলেন: আমার শক্তি আমি আমার জনগনকে ভালোবাসি ও আমার দুর্বলতা আমি আমার জনগনকে খুববেশী ভালোবাসি।

বঙ্গবন্ধু এদেশের জনগনকে ‘‘ভালোবাসা’’ এবং ‘‘খুববেশী ভালোবাসা’’ হচ্ছে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন এবং রাজনৈতিক শক্তি। দর্শনের উপজীব্য বিষয় যেমন ‘‘জগৎ ও জীবন’’ অর্থাৎ জগৎ ও জীবনকে নিয়ে যেমন দর্শনের সৃষ্টি এবং দর্শন আবর্তিত, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে ‘‘বাংলাদেশের জনগন ও বাংলাদেশের জনগনের মুক্তি’’। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব অনেক চড়াই উতরায় পেরিয়ে আসার প্রায় ২১ বছর পর ১৯৯৬ইং সনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার পিতা বঙ্গবন্ধুর ন্যায় জননেত্রী শেখ হাসিনাও এদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য গভীর ভাবে চিন্তা করেন। তিনিও তার পিতার ন্যায় বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করার কথা সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখেন। আর এই সোনার বাংলা রূপান্তর হলে দেশের সকল অংশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করতে হবে। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তার পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংখ্যালঘু অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ সমাজকে বিকশিত করতে হবে এবং তাদের বিকশিত ব্যতিরেকে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা মোটেই সম্ভব নহে। তিনি আরো বিশ্বাস করতেন ‘‘শান্তি উন্নয়নের পূর্বশর্ত’’ শান্তি স্থাপন ছাড়া কোন এলাকায় উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব নয়। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহনের সঙ্গে সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহন করেন। অথচ তাঁর আগের অনেক সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসাবে না দেখে অন্যভাবে সমাধান করতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তাদের পক্ষে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি। অনেক রাজনীতিবিদ ও অভিজ্ঞ মহলের মতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ব্যতীত অন্য সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসাবে হয়ত চিহ্নিত করতে পারেনি, না হয় ইচ্ছা করে চিহ্নিত করেনি। তাই তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে লোক দেখানোর দায়সারা মনোভাব নিয়ে প্রক্রিয়া দেখিয়েছেন মাত্র, যা আমরা রক্ত দোষের মধ্যে মলম মালিশ করে সাময়িক উপশম করার প্রক্রিয়ার সামিল হিসাবে গণ্য করতে পারি। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহনের সাথে সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে এখানকার সমস্যা রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে তিনি মহান জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ কে প্রধান করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেন এবং সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে সংলাপের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি সদরের সাবেক চেয়ারম্যান হংস ধ্বজ চাকমাকে আহবায়ক এবং পানছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ সদস্য মো: শফি এবং রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মথুরা লাল চাকমাকে সদস্য করে ৩ (তিন) সদস্য বিশিষ্ট্য ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রাম যোগাযোগ কমিটি’’ গঠন করেন। যোগাযোগ কমিটির অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবং জনসংহতি সমিতি ও সরকারের স্বদিচ্ছায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ব্যতীরেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং জনসংহতি সমিতির স্বদিচ্ছায় ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ইং সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়। সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন জাতীয় কমিটির আহবায়ক মহান জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুলাহ্ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসাধারনের পক্ষে স্বাক্ষর করেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি বর্তমান আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা। এই চুক্তি সম্পাদনের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে বিদেশে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছেন, এবং অনেক পুরষ্কারে ভূষিত হওয়ার পাশাপাশি ইউনেস্কোর মতো আর্ন্তজাতিক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।

১৯৯৬ ইং সনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০০৮ ইং সনে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় দফা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশকে নিন্মমধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে গড়ার জন্য পরিকল্পনা করেন। ২০২১ সালের রূপকল্পকে সামনে রেখে দেশ পরিচালনা করে বাংলাদেশকে অনেকদূর সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম হন এবং এই সক্ষমতার কারনে দশম সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ আসনে জয়লাভ করে তৃতীয় বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হয় এবং তিনি(জননেত্রী শেখ হাসিনা) ৩য় বারের ন্যায় প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন।

এবারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনা হলো ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। একই সাথে জননেত্রী শেখ হাসিনা আরও একটি ভিশন হলো তিন পার্বত্য জেলাকে আরও অধিক গতিশীল করে এখানকার মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করে সোনার বাংলার সাথে সোনার পার্বত্য জেলা গড়ে তোলা। কারন কোন একটি মানব দেহকে সম্পূর্ন সুস্থ রাখার জন্যে যেমনি তার শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থ রাখা প্রয়োজন, তেমনি কোন একটি দেশকে কোন বিশেষ লক্ষ্যে পৌছাঁতে হলে সেই দেশের সমগ্র অঞ্চল ও সমগ্র জনগোষ্ঠী এবং জনগনকে নিয়ে সেই লক্ষ্যে পৌছাঁতে হবে। কোন একটি অঞ্চল কিংবা কোন জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে বিশেষ কোন লক্ষ্যস্থলে পৌঁছা কোন ভাবে সম্ভব নয়। তেমনি বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১ সালের নিন্মমাধ্যম আয়ের দেশ ২০৪১ সালের মধ্যম আয়ের দেশ গড়া কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। তাই সরকারের এই ভিশনকে বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে তিন পার্বত্য জেলার পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর অংশের মানুষকে এখানকার বাস্তব অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

যেহেতু তিন পার্বত্য জেলার তিনটি পৃথক পার্বত্য জেলা পরিষদ এখানকার মানুষের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু এবং সরকার বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে এখানকার অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ অংশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থার অংশ হিসাবে পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মাধ্যমে এখানকার মানুষের উন্নয়নের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করেন, সেহেতু এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে তিনি প্রথমে অর্ন্তবতীকালীন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে ৫(পাঁচ) সদস্য হতে ১৫(পনের) সদস্যে উন্নিত করেন। দর্শনের মূল উপজীব্য বিষয় ‘‘জীবন ও জগৎ’’ এবং যুক্তি ও সুক্ষ বিচার বিশ্লেষন, তেমনি কাব্য সাহিত্যের উপজীব্য বিষয় হলো হৃদয়ের অনুভূতি ও আপ্লুত আবেগ। মাস্তিস্ক যেমন দর্শনের বাহন তেমনি হৃদয় হলো কাব্য সাহিত্যের বাহন, তাই মস্তিক ও হৃদয়ের সেই দুটি বাহন একত্রিত করতে না পারলে কোনদিন দর্শন ও সাহিত্যের পূর্ণতা হয় না। কারন দর্শনের পথ যুক্তির পথ হলেও সেই যুক্তিকে হৃদয়াঙ্গম করার জন্য প্রয়োজন হৃদয়ের অনুভূতি ও আবেগ এবং দর্শনকে হৃদয় দিয়ে অনুভূতির জন্য প্রয়োজন সাহিত্য। সাহিত্যকে যুক্তি সম্মত করার জন্য দরকার মস্তিস্ক বা দর্শন। যুক্তি ও অনুভূতি দুইটি পক্ষ পারস্পরিক সহায়কের ভূমিকা নিয়ে একত্রিত হয়ে সাহিত্যকে যেমনি সু-সাহিত্যে পরিনত করে, তেমনি দর্শনকেও অত্যন্ত জনপ্রিয় ও যুক্তিবাদী করে তোলে। তখনই কবি প্রকৃত কবি, সাহিত্যিক সু-সাহিত্যিক এবং দর্শন প্রকৃত দর্শন, দার্শনিক সত্যিকার দার্শনিক হিসাবে মর্যাদা লাভ করে। এখানে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ, নিন্মমধ্যম আয়ের দেশ ও মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যক্রম এবং তিন পার্বত্য জেলার অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ জনগনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পরিকল্পনা দর্শন ও সাহিত্যের উপজীব্য বিষয়ের পারস্পরিক সর্ম্পকের ন্যায় ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। দর্শনকে বাদ দিয়ে যেমনি সাহিত্য পূর্ণতা হয়না, তেমনি সাহিত্যকে বাদ দিয়ে দর্শন যুক্তিবাদী ও জনপ্রিয়তা অর্জন করা যায় না। অনুরূপ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন ব্যতীত তিন পার্বত্য জেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হবে না; তিন পার্বত্য জেলার ভাগ্য উন্নয়ন ব্যতীত বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। সাহিত্য ও দর্শন পারস্পরিক সর্ম্পক যুক্ত হয়ে যেমনি উভয়েই ইতিবাচক পূর্ণতা অর্জন করে তেমনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বা পারিকল্পনার সাথে তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধনসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন এর ক্ষেত্রে একমাত্র ইতিবাচক পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব। সেই ইতিবাচক পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই জননেত্রী শেখ হাসিনা অর্ন্তবতীকালীন তিন পার্বত্য জেলার (পৃথক তিনটি) অর্ন্তবতীকালীন পরিষদের কালেবর ৫(পাঁচ) সদস্য হতে ১৫(পনের) সদস্যে বৃদ্ধি করেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন ৫(পাঁচ) সদস্যের স্থলে যদি ১৫(পনের) সদস্যে বৃদ্ধি করার মাধ্যমে অর্ন্তবতীকালীন (পৃথক তিনটি) পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করে পরিষদের কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করলে যেমনি গতিশীলতা আসবে, তেমনি এখানকার অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি সত্তা সমূহের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ভবিষ্যতে অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী হতে নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দেশ ও জাতির কল্যানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সুফল আসবে। এক কথায় জননেত্রী শেখ হাসিনা তিন পার্বত্য জেলাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন যে স্বপ্ন দেশের অপরাপর অঞ্চলের মানুষের ন্যায় এতদাঞ্চলের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করে সোনার বাংলা বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সোনার পার্বত্য জেলা বিনির্মাণ করা। সুতরাং জননেত্রী শেখ হাসিনার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য জনগনের কল্যানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে পার্বত্য জেলা পরিষদকে কাজ করতে হবে। যেমনি তৈলকে নিঃশেষ করে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে, বৃক্ষ যেমন প্রস্ফুটিত হয়ে সুগন্ধি ছড়ায় তেমনি পার্বত্য জেলার অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ মানুষের কল্যান ও মঙ্গলের জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদকে কাজ করা প্রয়োজন। তজ্জন্য পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পরিষদে যারা নীতি নির্ধারক তাদের এমন কোন আচরণ করা যাবে না, যা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যক্তি, শ্রেনী ও জাতিসত্তা পর্যায়ে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। সংকীর্ণতাবোধ পরিহার করে পরিষদের কার্যাবলী গণমুখী করা এবং ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে পরিষদের বিধান ও পরিধি অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহন, বাজেট উপস্থাপন, সভা অনুষ্ঠান, উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নসহ সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে খোলামেলা আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। রুটিন কাজ এবং চেয়ারম্যান, সদস্য ও কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট আইনের ধারায় সুনির্দিষ্ট এখতিয়ারভূক্ত কাজ ব্যতীত একক সিন্ধান্ত বা কারো খেয়াল খুশিমতে যেন কোন কাজ না হয়, সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া সৃজনশীল, গণমুখী এবং বেকার সমস্যা দূরীকরণের জন্য সময় সময় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করা এবং গৃহীত উদ্যোগটি স্বচ্ছতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা, যা কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ করে মানুষের উপকার হয়। মনে রাখতে হবে যে, জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য এলাকার পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সার্বিক কল্যান সাধনের জন্য ৫(পাঁচ) সদস্য হতে ১৫(পনের) সদস্য কলেবর বৃদ্ধি করেছেন, তাই পরিষদের সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিষদের আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে যাতে বাস্তবায়ন হয় এবং এই বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াতে আইনের সাথে সামাঞ্জস্য রক্ষা করে মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে সকল সদস্য এবং সকল জন-গোষ্ঠীর মধ্যে যেন বৈষম্য সৃষ্টি না হয়, সেই দিকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। প্রেমের চুম্বুকের ন্যায় জড় পরমানু রাশি যেমন পারস্পরের প্রতি আকর্ষন হয়, তেমনি পরিষদের কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময় পারিষদ বর্গের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষন থাকতে হবে। ভারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বমতে ‘‘জগতে সব কিছুই প্রবাহমান ও পরিবর্তনশীল এবং এই পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত বর্তমান অবস্থা হচেছ পূর্ববর্তী অবস্থার ক্রম বিকাশের ফল’’। কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের মতে ‘‘ধর্ম মানেই মনুষ্যত্ব। যেমন আগুনের ধর্ম অগ্নিত্ব, পশুর ধর্ম পশুত্ব, তেমনি মানুষের ধর্ম মানুষের পরিপূর্ণতা; তাই মানুষের জন্য ধর্ম; ধর্মের জন্য মানুষ নয়’’।

ভারউইনের বিবর্তনবাদ এবং কবিগুরুর বক্তব্যের সাথে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যক্রম বিষয়ে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা যায়। ভারউইনের মতবাদ বর্তমান অবস্থা পূর্ববর্তী অবস্থার ক্রম বিকাশের ফল। এক্ষেত্রে পার্বত্য জেলা পরিষদ যদি ইতিবাচক কার্যাবলী সম্পাদন করে, তাহলে এখানকার মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তন হবে, আর যদি নেতিবাচক কার্যাবলী সম্পাদন করে তবে নেতিবাচক ফল সৃষ্টি হবে। অপরদিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তিমতে বলতে পারি যে, পার্বত্য জেলা পরিষদ-ই পার্বত্য চুক্তি, পার্বত্য চুক্তি-ই জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নই পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যক্রমের ইতিবাচক বাস্তবায়ন করতো। এই ইতিবাচক বাস্তবায়নের মাধ্যমে এখানকার পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসাবে অবদান রাখবে। রবীন্দ্রনাথের উক্তি ‘‘যেমনি মানুষের জন্যে ধর্ম, ধর্মের জন্যেই মানুষ নয়’’ তেমনি ‘‘পার্বত্য বাসীদের জন্যই পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদের জন্যই পার্বত্যবাসী নয়’’। অপরদিকে মানুষের ধর্ম মানুষের পরিপূর্ণতা, তেমনি পার্বত্য জেলা পরিষদের ইতিবাচক কার্যাবলী সম্পাদনের মধ্যেই পার্বত্য জেলা পরিষদের পরিপূর্ণতা। বষ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় এর মতে ‘‘ধর্ম বলি আর দর্শন বলি প্রত্যেকটিরই লক্ষ্য ব্যক্তির সুখ সাধন। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হয় কর্ম দিয়ে, ধ্যান-অনুধ্যান দিয়ে নয়। কিন্তু কোন কর্ম যথোচিত এবং কোন কর্ম অনুচিত তা নির্নয় করার জন্যে থাকা চাই সুনির্দ্দিষ্ট নৈতিক মানদন্ড। বষ্কিমের মতে- এই মানদন্ড হলো ‘‘ইউটিলিটি’’ বা উপযোগীতা যাকে তিনি ‘হিত’ হিসাবে হিতবাদের অবলম্বনে রচনা করেছেন ‘‘কর্মবাদী জীবন দর্শন’’।
বষ্কিমচন্দ্রের কর্মবাদী জীবন দর্শনের মতে: কোন একজন ব্যক্তির যে পরিমান হিত সাধন করতে পারে, সেই হিত দিয়ে শতজনের প্রত্যেকের এক চর্তুথাংশ হিত সাধিত হতে পারে। এ স্থলে একজনের হিত হবে ১০০ এবং শতজনের হিত হবে = ২৫। এক্ষেত্রে ১ জনের হিত ১০০ হলেও সেই ১০০ হিত বাস্তবায়ন না করে ১০০ জনের জন্য ২৫ হিত টি বাস্তবায়ন বা সাধন করাই হচ্ছে বেশী ধর্ম বা উপকৃত হবে। বষ্কিম চন্দ্রের এই হিতবাদ তত্ত্বের সূত্রমতে পার্বত্য জেলা পরিষদের আইন ও বিধিবিধানের সাথে মানবিক মূল্যবোধের সামঞ্জস্য রক্ষা করে দায়িত্ব কর্তব্য সম্পাদন করতে পারলে তিন পার্বত্য জেলাকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে এখানকার মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত হয়ে সোনার বাংলার অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হিসেবে সোনার পার্বত্য জেলায় পরিণত হবে। তখনই সোনার বাংলা বিনির্মাণে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের ভূমিকা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে দাবি করা যাবে। অন্যথায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও কাঙ্খিত লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যাবে না। অতএব, জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলের শুভ বুদ্ধি উদয় হউক, অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ মানুষের কল্যাণের জন্যে কাজ করতে মানসিকতা তৈরী হউক শুভ কামনা করছি।

লেখক: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য, লতিবান ইউপি’র পরপর তিনবার সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।