পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬ বছর: পাহাড়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি - Southeast Asia Journal

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬ বছর: পাহাড়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদন হয়। পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের ২৬ বছরে পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও স্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, নিশ্চিত হয়নি এলাকার মানুষের শাসনতান্ত্রিক অংশীদারত্ব।

পাহাড়ে অন্যতম প্রধান সমস্যা ছিল পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যকার ভূমি বিরোধ। কিন্তু শান্তিচুক্তির ২৬ বছরেও ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারেনি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন। এসব কারণে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

শান্তিচুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ এ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের শাসনতান্ত্রিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত করা। পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে সংরক্ষণ করা। পার্বত্য জেলার বিশেষ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়েও জেলা বা আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন হয়নি।

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা বলেন, শান্তিচুক্তির ২৬ বছর পূর্তিতে পাহাড়ের মানুষকে এখনো চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানাতে হচ্ছে। দীর্ঘ এ সময়ে চুক্তির অনেকগুলো দিক বাস্তবায়ন হলেও বাস্তবায়ন হয়নি বেশ কিছু মৌলিক বিষয়। এর মধ্যে জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন না দেওয়া, অকার্যকর পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন। পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গঠন করা হয়নি মিশ্র পুলিশসহ একাধিক মৌলিক বিষয়। এগুলো না হওয়ায় পাহাড়ি বাঙালি সবাই চুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত।

রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, চুক্তির ফলে গঠিত জেলা পরিষদের কাঠামো যথাযথ হয়নি। এখানে পাহাড়িদের একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান পাহাড়ি হবে ঠিক আছে। যদি ভাইস চেয়ারম্যান বাঙালি রাখা হতো, তাহলে পরিষদের ভারসাম্য যথাযথ হতো। তাই জেলা পরিষদের কাঠামো পরিবর্তন করা দরকার।

রাঙামাটি জজ কোর্টের আইনজীবী হারুনর রশীদ বলেন, চুক্তির ২৬ বছর ধরে জেলা পরিষদগুলো নির্বাচনবিহীন। হচ্ছে না আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনও। এখানে পাহাড়ি কিংবা বাঙালি সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ বা অংশীদারত্ব নেই। আমরা সেখানে জনপ্রতিনিধিও হতে পারছি না। ভোটও দিতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে পাহাড়ে হতাশা-বঞ্চনা শেষ হবে না।

রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজীব চাকমা বলেন, চুক্তির পর পাহাড়ে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে ঠিক, কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। উন্নয়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, বরং দেশে অন্যান্য অঞ্চলে যা উন্নয়ন হয়েছে তা পার্বত্য এলাকায় হয়নি। চুক্তির মূল বিষয় ভূমি, পুলিশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বেসামরিকীকরণ এগুলো হয়নি। ফলে এখানে সমস্যা জিইয়ে রয়েছে। তাতে সমস্যা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। চুক্তি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে তত মঙ্গল।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করতে করতে হয়রান হয়ে পড়েছি। আমাদের যেন আর বলতে না হয়। সরকারের কাছে দাবি রাখব, এ এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা হোক।’

সরকারি দলের নেতারাও স্বীকার করছেন পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা দরকার। চুক্তির অনেকগুলো বিষয় বাস্তবায়ন হলেও মূল বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে শক্তিশালী হতে পারছে না পার্বত্য চুক্তির ফলে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন চুক্তির মূল বিষয় বাস্তবায়ন হয়নি এটি একেবারে সঠিক। এখানে নির্বাচন না হওয়ার কারণে চুক্তির ফলে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন জবাবদিহি নেই। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে না। মিশ্র পুলিশ গঠনের কাজটি হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নটা দরকার।

পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের ২৬ বছরে এ এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও প্রতিষ্ঠা হয়নি স্থায়ী শান্তি। চুক্তিকে পুঁজি করে সৃষ্টি হয়েছে একাধিক আঞ্চলিক সংগঠন।