টানা বর্ষণে কক্সবাজারে ভাঙছে ঝাউবন প্লাবিত ২০০ গ্রাম
নিউজ ডেস্ক
লঘুচাপের প্রভাবে কয়েক দিন ধরেই উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। টানা বৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পূর্ণিমার জোয়ার। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে সমুদ্রসৈকতের ঝাউবনে। স্রোতে ভেঙে পড়ছে ঝাউগাছ। অব্যাহত বৃষ্টিতে জেলার অন্তত ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে উখিয়া উপজেলা।
লাবণী পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক সাগর মোহনা ঘুরে দেখা গেছে, ঢেউয়ের আঘাতে জিও ব্যাগ ধসে পড়েছে। বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত ঝাউগাছ ভেঙে পড়ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনাও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, টানা বৃষ্টি, পূর্ণিমার জোয়ার ও লঘুচাপের কারণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঢেউয়ের তীব্রতা বেড়েছে। কূলে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের আঘাতে ধসে পড়ছে জিও ব্যাগ। মাটি নরম হয়ে একে একে ভেঙে যাচ্ছে ঝাউগাছগুলো। এভাবে চলতে থাকলে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও বালিয়াড়ির ছোট-বড় স্থাপনাও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সমুদ্রে দায়িত্বরত বিচকর্মী মোহাম্মদ কালাম বলেন, ‘দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সমুদ্রসৈকতে পর্যটক নেই বললেই চলে। পরিস্থিতি যা-ই হোক আমাদের দায়িত্ব পালনে সৈকতে থাকতে হয়। টানা বৃষ্টি, তার ওপর সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এ কারণে সাগরের পাড় ভেঙে ঝাউগাছগুলো পড়ে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সীমানা ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখেছি অনেক ঝাউগাছ পড়ে রয়েছে।’
সাগরে মাছ ধরতে আসা নূরনবী বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বেশি ঝাউগাছ ভেঙে পড়েছে। ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে ঝাউগাছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন হয়। তবে এবারের মতো এত বেশি ক্ষতি আগে দেখা যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙন রোধে বালিয়াড়িতে জিও ব্যাগ দিলেও রক্ষা করা যাচ্ছে না ঝাউগাছগুলো।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরওয়ার আলম জানান, জোয়ারের কারণে নাজিরারটেক, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, শৈবাল পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রায় ২০০টি বড় এবং ১ হাজার ৪০০টি ছোট ঝাউগাছের চারা উপড়ে গেছে। ভাঙন রোধে গাইডওয়াল ও টেকসই বনায়ন করলে এ বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হতে পারে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিথুন ওয়াদ্দাদার জানান, সমুদ্রের তীর ভাঙন প্রতিরোধে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শিগগিরই অত্যাধুনিক ফ্লাডওয়াল ও ব্লক নির্মাণ করা হবে। এ কাজ সম্পন্ন হলে রক্ষা পাবে ঝাউবাগান।
এদিকে কক্সবাজারে কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী তিনদিন ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান।
টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজার পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দেখা গেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কেও।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের শিক্ষক মোস্তফা সরওয়ার জানান, কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাক পাড়া, নাজিরারটেকসহ আটটি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব এলাকায় ১০ হাজারের বেশি পরিবার রয়েছে। এছাড়া প্লাবিত হয়েছে শহরের গোলদীঘিরপাড়, বৌদ্ধ মন্দির এলাকা, কলাতলী, সদর ইউনিয়নের ঝিলংজা ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রাম। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হয়ে অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বাড়িঘরের আসবাব ও দোকানের মালপত্র নষ্ট হচ্ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম তারিকুল আলম জানান, জলাবদ্ধতা শহরে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে পৌর পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। তারা এরই মধ্যে ড্রেন দখল করে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করা শুরু করেছে।
বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে উখিয়া উপজেলা। সেখানে দেড় শতাধিক গ্রামের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা।
হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস জানান, তার ইউনিয়নে ২০টি গ্রামের তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে, যেখানে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড পুরোটাই পানিতে নিমজ্জিত।
রাজাপালং ইউনিয়নের মেম্বর হেলাল উদ্দিন জানান, এ ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকাও পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া পালংখালী ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা। এ অঞ্চলে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।