খাগড়াছড়িতে রাতভর গোলাগুলি ইউপিডিএফের, নিহত ৩

খাগড়াছড়িতে রাতভর গোলাগুলি ইউপিডিএফের, নিহত ৩

খাগড়াছড়িতে রাতভর গোলাগুলি ইউপিডিএফের, নিহত ৩
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

গত বুধবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার পানখাইয়াপাড়ায় চুরির অভিযোগ এনে স্থানীয় এক বাঙ্গালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার বিচার চেয়ে জেলার দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দীঘিনালা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দীঘিনালা সরকারী কলেজ গেইট থেকে একটি মিছিল বাজার প্রদক্ষিন করে শহরের লারমা স্কয়ার প্রদক্ষিন করার সময় পাহাড়ের আঞ্চলিক উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গঠনের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়, গুলি করে। এসময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

তবে মুহূর্তেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। পাশ্ববর্তী বাঘাইছড়ি, লংগদু ও সাজেক এলাকা থেকে চাঁদের গাড়ি যোগে বহিরাগত শতশত উপজাতি যুবক এসে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মালিকানাধীন দোকানপাটসহ বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা চালায় বাঙ্গালী ছাত্র ও বাজার ব্যবসায়ীদের উপর। এ সময় উপজাতিদের পক্ষ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। এসময় সংঘর্ষে ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) নামের একজন আহত হন। পরে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষনা করেন।

এদিকে, দীঘিনালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যার পর জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে সহিংসতার পরিকল্পনা করে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। রাত বাড়ার সাথে সাথে নারায়নখাইয়াসহ পানছড়ি সড়কে অতর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘরে হামলা চালায় তারা। এসময় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কয়েকশ রাউন্ড গুলি ছোড়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা।

রাত ১১টার দিকে পানছড়ি সড়কের নালকাটা এলাকায় ইউপিডিএফের নেতৃত্বে উপজাতি সশস্ত্র একটি গ্রুপ স্থানীয় উপজাতি যুবকদের উসকে দিয়ে সড়কে সেনাবাহিনীর একটি গুরুতর রোগী বহনকারী দলকে ঘেরাও করে গতিরোধ করে। এসময় খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করার জন্য সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি জোন থেকে আরেকটি সেনাবাহিনীর টহল দল উক্ত স্থানে গেলে স্বনির্ভর বাজার এলাকায় তাদেরকেও উপজাতি সসন্ত্রাসীরা ঘেরাও করে ফেলে। এরই মধ্যে ইউপিডিএফ এর কতিপয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জনতার মধ্যে ঢুকে গিয়ে সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া আরম্ভ করে।

তাৎক্ষনিক সেনাদলটিকে উদ্ধার করার জন্য জোন থেকে আরো একটি সেনাদল উক্ত স্থানে গমন করার উদ্দেশ্যে বের হলে তাদেরকেও সন্ত্রাসীরা ঘেরাও করে নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া শুরু করে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্বেও তারা ঘেরাও অব্যাহত রাখে ও তারা শত শত টর্চ লাইট প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সেনা টহল দলের সদস্যদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একই সাথে ইউপিডিএফ এর দুর্বৃত্তরা সেনা টহল দলকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী প্রথমে মেগা ফোনের মাধ্যমে বারংবার তাদেরকে সতর্ক করে ও পরবর্তীতে আকাশের দিকে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে সতর্ক করার চেষ্টা করে।

এতে উত্তেজিত উপজাতি সন্ত্রাসীরা নিবৃত্ত না হয়ে সেনা দলের উপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে। এ পর্যায়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে আরও দুইটি বিজিবি টহল দল উক্ত স্থানে যায়। রাতের অন্ধকারে উত্তেজিত পাহাড়িদের মধ্য থেকে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাৎক্ষনিক ভারী অস্ত্র দিয়ে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে গুলি করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময়ে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র সাতজন সন্ত্রাসী হাতে-পায়ে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আহতদেরকে নিরাপত্তাবাহিনী উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে একজন সন্ত্রাসী মারা যায়। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনী সাত জন দুষ্কৃতিকারীকে আটক সহ ইউপিডিএফের ব্যবহৃত একটি অস্ত্রের ম্যাগাজিন উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আটককৃত ব্যক্তিদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

এছাড়া ওই সময়ে ইউপিডিএফের দিকবিদিক গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও এক উপজাতি যুবক আহত হন। পরে সেনা সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

সাউথইস্ট জার্নালের হাতে আসা বেশ কয়েকটি ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাতে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কয়েকশ রাউন্ড গুলি ছোড়ে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, রাতে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ১৬ জনকে আনা হয়। তারা বেশিরভাগই সদর উপজেলা থেকে রাতে এসেছেন। এর মধ্যে তিন জন মারা যান। নিহত ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্ত শেষে বলা যাবে। বর্তমানে হাসপাতালে আরও ৯ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

রিপল বাপ্পি চাকমা আরও জানান, রাতেই চার জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একজন বাঙালি রয়েছেন। আহত বাকি ৯ পাহাড়িকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান বলেন, রাতে গোলাগুলি হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন জনের লাশ পাওয়া গেছে। মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। আহত হয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থল দীঘিনালায় যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবো। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, আগুনে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকায় ১০২টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চাকমা সম্প্রদায়ের ৭৮টি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে। ভাঙচুর হয় চারটি দোকান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মিলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোর রাতে খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়াপাড়ায় চুরির অভিযোগ এনে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা কিছু পাহাড়ি। সে খাগড়াছড়ি সদরের শালবন মধ্যপাড়ার মৃত নুরনবীর ছেলে। মামুনকে পিটিয়ে হত্যার একটি ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ নিয়ে দীঘিনালা সরকারি কলেজের ছাত্ররা মিছিল বের করলে উপজাতি সন্ত্রাসীদের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে বিক্ষিপ্তভাবে বোয়ালখালি বাজারের প্রায় ৭০-৮০ টি দোকানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তৎক্ষনাৎ সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে প্রায় ১৫-২০ ব‍্যক্তি আহত হয়েছেন। অগ্নিনির্বাপনের জন‍্য দীঘিনালা এবং খাগড়াছড়ি সদরের ফায়ার সার্ভিস সেখানে গমন করার চেষ্টা করলেও উপজাতি সন্ত্রাসীদের বাধার কারণে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। সেনাবাহিনীর নিজস্ব চেষ্টায় এবং পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।