সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের নামে পাহাড়ে ইউপিডিএফের নতুন ষড়যন্ত্র

সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের নামে পাহাড়ে ইউপিডিএফের নতুন ষড়যন্ত্র

সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের নামে পাহাড়ে ইউপিডিএফের নতুন ষড়যন্ত্র
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পাহাড়ে একটি নতুন গজিয়ে উঠা পাহাড়ি সংগঠন। সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবার) সকালে জেলা সদরের জিরোমাইল এলাকার এক রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তুষিতা চাকমা নামের একজন।

লিখিত বক্তব্যে তুষিতা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সংঘটিত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবির পাশাপাশি পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা উদ্দেশ্য মূলক ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগষ্টের গণ অভ্যুত্থানের পর সমতলের পাশাপাশি পাহাড়েও বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষার্থীরা ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে একটি প্লাটফরম তৈরী করে। যার উদ্দেশ্য পাহাড়ে বৈষম্যহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করা।

তবে, সম্প্রতি পাহাড়ের বেশ কয়েকটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত তথা অনাকাঙ্খিত ঘটনায় ঘুরে ফিরে এই কথিত সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের নাম বেরিয়ে আসছে একাধিক তদন্তে।

প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফ ও এর সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ হিল উইমেন্স ফেডারেশন এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম এর নেতা-কর্মীরাই এই নতুন কথিত সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কোটা প্রথা বিলুপ্ত করতে গিয়ে দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতন করে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পাহাড়ে চলছে ব্যাঙের ছাতার মত প্ল্যাটফর্ম। এসব প্ল্যাটফর্ম আঞ্চলিক দলগুলোর বি-টিম হিসেবে কাজ করছে বলে ধারনা বিশ্লেষকদের। গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসব হামলার মূলে ছিল বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন নামের এই প্ল্যাটফর্ম।

গত ৫ আগষ্টের আগে সারাদেশে কোটাবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন গড়ে উঠলেও ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ বেশ কয়েকটি পাহাড়ি সংগঠন সেসময় ৫ শতাংশ উপজাতি কোটা বহাল রাখার জন্য বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলন করে। কিন্তু ৫ আগষ্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সুযোগ বুঝে সুর পাল্টায় সংগঠনটি।

স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিরা বলছেন, ইউপিডিএফ চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুমসহ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে আজ ঘৃণার পাত্র। তাই তারা সরাসরি জনগণের সম্মুখীন হতে পারছে না। পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন তারা। বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পাহাড়ে সেনাবাহিনী, বাঙালি ও পার্বত্য পরিস্থিতির উপর মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জাতিগত সংঘাত ও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তৈরি করেছে এই সংগঠন। বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন ব্যানার থেকে সাধারণ পাহাড়িদের উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে তারা।

খাগড়াছড়িতে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের নামে ইউপিডিএফের নতুন ষড়যন্ত্র

আজকের সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিতি বিশ্লেষন করে দেখা যায়, সংবাদ সম্মেলনে যেসব পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন, তারা সবাই ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপের সহযোগী অঙ্গ-সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক সংবাদকর্মী জানান, আজকের সংবাদ সম্মেলনে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার মত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনসহ এ অঞ্চলে সহাবস্থান তৈরি হয় এমন বক্তব্য রাখেনি, বরং বরাবরই ইউপিডিএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বক্তব্য রেখেছেন। যেখানে জাতিগত ভেদাভেদ, হিংস্রা ও সংঘর্ষ সৃষ্টি হওয়ার মত বক্তব্য ছাড়া পাহাড়ি জাতিসত্তা তথা রাষ্ট্রের কল্যাণে কোন বক্তব্য স্থান পায়নি।

পাহাড়ের অপর একটি আঞ্চলিক সংগঠনের নেতারা জানান, ইউপিডিএফ বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে পাহাড়িদের বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করছে। একইসাথে পাহাড়ি জাতিসত্তাকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করার জন্য গভীর চক্রান্ত বাস্তবায়নে ইউপিডিএফের বি-টিম হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে ব্যানারটি। পাহাড়ে এখন খ্যাতি অর্জন আর মাঠ দখলের একটা হাতিয়ার হচ্ছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম দিয়ে প্ল্যাটফর্ম খোলা। তাই ইউপিডিএফ নিজেদের খেয়াল খুশি ও রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য আদায়ে তথাকথিত পাহাড়ি ছাত্র সংগঠনকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ব্যবহার করছে।

স্থানীয়দের দাবি, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির জাতিগত সহিংসতার ঘটনায় বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন ব্যানার থেকে উস্কানিমূলক স্লোগান ও মিছিল সভা-সমাবেশ ও সেনাবাহিনী, বাঙালি বিদ্বেষমূলক আচরণ থেকেই সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরে খাগড়াছড়িতে এক ফার্নিচার ব্যবসায়ীকে মোটরসাইকেল চোর আখ্যায়িত করে উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কর্তৃক পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জেলা সদর, দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সহিংসতায় প্রত্যক্ষ মদদ ছিলো সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের। ঘটনার পর এটিকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন উপজাতি উগ্র সংগঠনকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলো ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত এই সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন। যা, সেসময়কার বিভিন্ন সংবাদ এমনকি রাঙামাটে জেলা জেএসএস এর পক্ষ হতেও পরিষ্কার করা হয় গণমাধ্যমের কাছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।