সন্ত্রাসী পাম্পুকে পিপি নিয়োগ দেয়ায় উত্তাল রাঙামাটি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির স্মারকলিপি
![]()
নিউজ ডেস্ক
স্বঘোষিত রাজাকার পরিবারের সদস্য ও জেএসএস সন্ত্রাসী এ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পুকে রাঙ্গামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় উত্তাল রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুদ্ধ রাঙামাটির আইন অঙ্গন থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ।
অবিলম্বে এ নিয়োগ বাতিল করতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পৃথক ভাবে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও রাঙামাটি জেলা বিএনপি।
সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানকে এ স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়ক শাহজামান, এমদাদ হোসেন, হ্লামং মারমা, নুর হোসেনসগ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর দুপুরে একই দাবিতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসকের কাছে আরও একটি স্মারক লিপি প্রদান করেন। এসময় জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ভুট্টোসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৩-১০-২০২৪ইং তারিখে এক নিয়োগ পত্রে রাঙামাটির পাবলিক প্রসিকিউটর হিসাবে প্রতীম রায় পাম্পুকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। প্রতীম রায় পাম্পু বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদসহ আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ এর সদস্য, তিনি আওয়ামী দুঃশাসনে শেখ হাসিনার আমলে একাধিবারে আওয়ামীলী প্যালেন থেকে সভাপতি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা’র পতিত সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশ ব্যাপী বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের বিরুদ্ধে রাজপথে আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ এর পক্ষ হইতে পালন করা হয় মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণসহ পতিত স্বৈরাচার এর দোসর হিসাবে স্বরব ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগের দোসর উক্ত ব্যাক্তি সাবেক বিনা ভোটের এমপি দীপংকর তালুকদারের সুপারিশে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। প্রতীম রায় পাম্পু ২০১০ সালে অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বিএনপি প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন। প্রতীম রায় পাম্পু একজন আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থিত ব্যাক্তি ও বিগত দিনের প্রহসনের জাতীয় নির্বাচনে রাঙ্গামাটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনার অন্যতম ব্যাক্তি।

এছাড়া, প্রতীম রায় স্বঘোষিত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পরিবারের সদস্য। যুগ যুগ ধরে বে-আইনী ভাবে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ার দখল করে এটিকে জেএসএস এর প্রাতিষ্ঠানিক শাখায় রূপান্তর করা সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পরিষদের আইন উপদেষ্টা প্রতিম রায় পাম্পু ২০০৯ সালে রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস এর সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন। এর আগে তিনি জেএসএস এর অঙ্গ সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিও ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, পিসিপির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে অপরাজনীতি, সংঘাত-সহিংসতাসহ নানা অপরাধের দায়ে তিনি আটক হয়ে জেলও খেটেছেন।
বর্তমান জেএসএস এর কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক কমিটিতে থাকা পাম্পুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনি রাঙামাটির সমতা ঘাটের রাং রাং রেষ্টুরেন্টে নিয়মিত নারী নিয়ে মদের আসর বসান এবং সেখান থেকে জেএসএস এর কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসভবনে মনোরঞ্জনের জন্য সুন্দরী নারী সাপ্লাই দিয়ে থাকেন। এছাড়াও তাদের পক্ষে কাজ করা বিভিন্ন এ্যাডভোকেসি গ্রুপ; যেমন… তথাকথিত মানবাধিকার, পরিবেশবাদী সংগঠন, বুদ্ধিজীবি, আইনজীবি, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট লোকজন, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদদের সাথে কথিত ষড়যন্ত্র আদিবাসী আন্দোলনসহ রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের সমন্বয়, অর্থ লেনদেন এবং তাদের মনোরঞ্জনের জন্য নারী সরবরাহ প্রভৃতি বিষয়ে সমন্বয় করেন বলে জানা যায়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও শুধুমাত্র সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর আশির্বাদ থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সাহস দেখায় নি রাঙামাটির প্রশাসন।
এছাড়া, পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনীতির আরেক নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত আত্নস্বীকৃত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্র ও বর্তমান চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়ের সাথে মিলে, নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রসহ আটক জেএসএস সন্ত্রাসীদের মুক্তি, পাহাড়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ইস্যুতে চলা মামলা ও পাহাড়ে বাঙ্গালী এবং নিরাপত্তাবাহিনী সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে জেএসএস এর হয়ে আইনগত দিকগুলো পরিচালনা করেন এডভোকেট প্রতিম রায় পাম্পু। এছাড়া জেলার বিভিন্ন দপ্তরসহ রাজনৈতিক নেতাদের দূর্নীতি ও অনিয়মের মামলাগুলো পরিচালনায় তার নাম থাকে সবার উপরে। আদালতে দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থ লেনদেন এর মাধ্যমে মামলা প্রভাবিত করার ব্যাপারে তার সবচেয়ে বেশী দূর্নাম রয়েছে।
সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় কর্তৃক বিতর্কিত সিএইচটি রেগুলেশন বাতিল করার পর চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়ের আপন চাচা প্রতিম রায় পাম্পু এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রেখেছেন বলে জানা গেছে। ভাতিজা দেবাশীষ রায়ের সাথে মিলে পাহাড়ে নিরীহ উপজাতিদের উস্কে দিয়ে সিএইচটি রেগুলেশন বহালের দাবিতে মাঠে নামানোর কারিগরও এই পাম্পু। বিতর্কিত সিএইচটি রেগুলেশন-১৯০০ বাতিল করার পর চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায় এবং তিনি এটি পুনর্বহালের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। তিনি দেবাশীষ রায়ের সাথে মিলে পাহাড়ের উপজাতিদের উস্কে দিয়ে সিএইচটি রেগুলেশন বহালের দাবিতে আন্দোলন করানোর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী।
জানা যায়, প্রতিম রায় পাম্পুর ছেলে এহিত রায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে। তার ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী এবং বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক বক্তব্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী এবং বাঙ্গালীদের প্রত্যাহার করার বিষয়ে উস্কানীমূলক বক্তব্য ও প্রচারনা পোস্ট করতে দেখা যায়।
এদিকে, স্মারকলিপি প্রদান শেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ও বিক্ষুব্ধ জনতা যৌথভাবে সমাবেশ করে সেখান থেকে সাম্প্রদায়িক ও জেএসএস সন্ত্রাসী প্রতীম রায় পাম্পুর নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।