দেশ গঠন ও ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

লে. কর্নেল কামরুজ্জামান পাভেল
স্বাধীনতা যুদ্ধে জন্ম লাভ করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে এক আস্থার প্রতীক। এই সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ হচ্ছে দেশকে বহিঃশত্রম্নর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। সেনাবাহিনী একটি দেশের সামরিক শক্তির মেরুদন্ড। সামরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেনাবাহিনী সব সময় নিজেদের প্রস্তুত রাখছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়ন, মানবিক সহায়তা এবং শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের যে কোনো সংকটে সেনাবাহিনীর ভূমিকা আরও বেশি অনুভূত হয়। যুদ্ধের প্রস্তুতির পাশাপাশি শান্তিকালীন সময়েও তারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। ‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা, দেশের তরে’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী নিজস্ব প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেশ গঠন ও দেশের ক্রান্তিলগ্নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রতিটি কাজে দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এবং দেশের শেষ ভরসাস্থল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
দেশ গঠনে সেনাবাহিনী
স্বাধীনতার পরবর্তীকাল থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করছে। বহিঃশত্রম্নর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ। ‘কঠোর প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ’ এই নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কঠোর প্রশিক্ষণ ও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ক্রমাগত আধুনিকায়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র ও সরঞ্জাম সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বহু গুণে বৃদ্ধি করেছে। দূরপালস্নার মিসাইল, আধুনিক ট্যাঙ্ক ও অস্ত্র সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বহুগুণে সহায়তা করেছে। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’ অর্থাৎ যুদ্ধ ব্যতীত সূচের অগ্রভাগ পরিমাণ ভূমিও বহিঃশক্রর কাছে হস্তান্তর না করা, এই মূলমন্ত্র সর্বদা সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য মনে ও প্রাণে ধারণ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিএনসিসি ও ক্যাডেট কলেজের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীকে সেনাবাহিনীর মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে, যেন দেশের প্রয়োজনে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরাও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বহিঃশত্রম্নর যে কোনো আক্রমণ মোকাবিলা করতে সক্ষম।
বাংলাদেশের মানুষের বহু আকাঙ্ক্ষার পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে এই পদ্মা সেতুর কাজ সম্পাদন করেছে। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বল্প সময়ে দেশের প্রাণ কেন্দ্র ঢাকাতে পৌঁছাতে পারছে। এছাড়া, পদ্মায় রেলসেতু তৈরির মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। মানুষ স্বাচ্ছন্দে, নিরাপদে ও স্বল্প সময়ে ট্রেনে যাতায়াতের মাধ্যমে ঢাকায় গমনাগমন করতে পারছে। এই সেতু দুটির মাধ্যমে আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যেভাবে উপকৃত হয়েছে সেভাবেই সচল হয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক চাকা। এছাড়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফ্লাইওভার ও রাস্তা নির্মাণ করেছে। নির্দিষ্ট বাজেটে সঠিক সময়ে অথবা কখনো কখনো সময়ের পূর্বেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফ্লাইওভার ও রাস্তার কাজ অত্যন্ত সফলভাবে সম্পাদন করেছে। হাতিরঝিল সংযোগ সড়ক ও পূর্বাচলের ৩০০ ফিট রাস্তা একটি যুগান্তকারী উদাহরণ। এই দুটি রাস্তা ঢাকা শহরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি ও ট্র্যাফিক জ্যাম নিরসন ছাড়াও এর নান্দনিক সৌন্দর্য মানুষকে বিমোহিত করেছে। এই স্থান দুটি ঢাকা শহরের মানুষের কাছে চিত্তবিনোদনের জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হিসেবে স্থান পেয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পের আকর্ষণীয় স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম। দুর্গম পাহাড়ে রাস্তা নির্মাণ এবং কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করে সেনাবাহিনী পর্যটন শিল্পে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে অন্যতম। জাতিসংঘ মিশন হতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্থান প্রথম সারিতে। সেনাবাহিনী কর্তর্ৃৃক জাতিসংঘ মিশন থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করে। সেনাসদস্যরা বৈদেশিক মিশনে নিরলস পরিশ্রম ও প্রয়োজনে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েও দেশের উন্নয়ন ও সুনাম বৃদ্ধির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বাংলাদেশকে স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার নিজস্ব কোন জমি খালি রাখছে না। অব্যবহৃত সব জায়গায় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি থেকে শুরু করে বনজ, ঔষধি ও ফলমূলের গাছ রোপণ করেছে। এছাড়া, বিভিন্ন পুকুর ও জলাভূমি ব্যবহার করে সেনাবাহিনী বিভিন্ন ধরনের মাছ ও হাঁস চাষ করছে। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনী কর্র্তৃৃক পরিচালিত বিভিন্ন মিলিটারি ফার্মে গরু এবং ছাগল পালিত হচ্ছে। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়েও সেনাবাহিনী দেশের মানুষের শাকসবজি, ফলমূল ও আমিষের প্রয়োজন মিটাচ্ছে। ফলে, সেনাবাহিনী যেমন স্বনির্ভর হচ্ছে তেমনই দেশের জিডিপি উন্নয়নে সহায়তা করছে।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি সেনানিবাসে সেনাবাহিনী কর্র্তৃৃক পরিচালিত একাধিক স্কুল রয়েছে, যেখানে বহু ছাত্রছাত্রী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, এমআইএসটি, বিইউপি ছাড়াও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় সেনাবাহিনী কর্তর্ৃৃক পরিচালিত হচ্ছে। সেনাবাহিনী কর্তর্ৃৃক পরিচালিত প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার মান অত্যন্ত উচুমানের। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সেনাবাহিনী গুরুত্বের সঙ্গে শিক্ষার মান বজায় রাখছে এবং কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করছে। প্রতিটি সেনানিবাসে প্রয়াস স্কুল প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশের প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম এবং তাদের সাধারণ জীবন গঠনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। সমতল ভূমি ছাড়াও সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় স্কুল-কলেজ পরিচালনা করে শিক্ষার আলো পাহাড়িদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে দেশ গঠন ও উন্নয়নে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি পরিচালিত হচ্ছে, যেমন: বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ), বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ), বাংলাদেশ ডিজেল পস্ন্যান্ট (বিডিপি) এবং সেনা কল্যাণ সংস্থা। বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি সেনাবাহিনী ছাড়াও বাংলাদেশে অন্যান্য বাহিনীর গোলাবারুদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। যার ফলে, অন্য সব বাহিনীকে বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে তৈরিকৃত গোলাবারুদ বিদেশ হতে ক্রয় করতে হচ্ছে না, এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। এখানে উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি সেনাবাহিনীর সব ধরনের গোলাবারুদ (মিসাইল ও আর্টিলারি গোলাবারুদসহ) প্রস্তুত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে। ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর বড় আয়তনের গোলাবারুদও বিদেশ থেকে ক্রয় করার প্রয়োজন পড়বে না। বিএমটিএফ এবং বিডিপি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন, যন্ত্রপাতি, গাড়ির ফিল্টার, ফুটওয়্যার আইটেমসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সেনাবাহিনীর প্রয়োজন মিটিয়ে বাইরেও সরবরাহ করছে। সেনা কল্যাণ সংস্থা বিভিন্ন ধরনের খাবারসামগ্রী ছাড়াও তাঁবু, কাপড় ও অন্যান্য আইটেম সাধারণ জনগণের কাছে সরবরাহ করছে। অতএব, সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়তা করছে।
ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী
প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনে- যা মানুষের জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস এবং খরার মতো দুর্যোগগুলো একটি দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী অসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মপদ্ধতি, দ্রম্নত প্রতিক্রিয়া, প্রচারের দক্ষতা এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দুর্যোগ মোকাবিলাকে সহজ ও কার্যকর করে তোলে। ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে সিডর, আইলা, আম্ফান ইত্যাদি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী সময়ে সেনাবাহিনী উপকূলীয় জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া, মাইকিং করা থেকে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ, ওষুধ সরবরাহ, রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি দেশে বিভিন্ন সময়ের (যেমন ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের) বন্যাসহ সব বন্যায় সেনাবাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অতি সম্প্রতি সিলেট, সুনামগঞ্জ, ফেনী ও কর্তৃমিলস্নার বন্যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজের জীবন বাজি রেখে বন্যার্তদের উদ্ধার করেছে। দুর্গম এলাকায় নিজ হাতে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি মেডিকেল সহায়তা প্রদান করেছে। এখানে উলেস্নখ্য, কর্তৃমিলস্না এবং ফেনীর বন্যার সময় গর্ভবতী মায়েদের উদ্ধার করে সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় প্রেরণ করেছে। এছাড়াও, বন্যা পরবর্তী সময়ে বন্যার্তদের জন্য ঘরবাড়ি, রাস্তা ও সেতু ইত্যাদি নির্মাণ করে জনগণকে সুষ্ঠ?ু ও সুন্দর জীবনযাপনে সহায়তা করেছে।
সাভারে ২০০৫ সালে স্পেকট্রাম গার্মেন্টস ও ২০১৩ সালে রানা পস্নাজার ধসে অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী তৎক্ষণাৎ উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের পাশাপাশি সাভার সেনানিবাসের সেনা সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সেনাবাহিনী সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সঠিকভাবে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রচুর মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। এছাড়াও, অত্যন্ত দ্রম্নততম সময়ে ওই বিল্ডিং দুটির ধ্বংসাবশেষ স্থানান্তর করে জায়গা দুইটি পরবর্তী ব্যবহারের জন্য উপযোগী করেছে। দেশের যে কোনো বড় ধরনের অগ্নিসংযোগে সেনাবাহিনী দ্রম্নততার সঙ্গে উদ্ধার কাজে সহায়তা করছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অগ্নি নির্বাপণ থেকে শুরু করে আশপাশে এলাকার নিরাপত্তা বজায় রেখে সুষ্ঠ?ুভাবে উদ্ধার কার্যক্রম সম্পাদনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে হোলি আর্টিসান ক্যাফে সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর চৌকষ ভূমিকা একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ এরকম সন্ত্রাসী হামলা আগে কখনো দেখেনি। সন্ত্রাসীরা ওই ক্যাফে’তে অবস্থানরত বিদেশিদের প্রথমে জিম্মি ও পরবর্তী সময়ে হত্যা করেছিল। ওই হামলায় পুলিশ সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও নিহত হয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’কে ওই সন্ত্রাসী হামলায় জিম্মি উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়ার পর সেনাবাহিনীর কমান্ডো বাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্র করে জিম্মিদের উদ্ধার করেছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে অপারেশন পরিচালনা করে জিম্মি উদ্ধার করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশে ও বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। এই অপারেশনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী তার পেশাদারিত্ব ও কঠিন প্রশিক্ষণের প্রমাণ করেছে।

কোভিড-১৯ ভাইরাস সারাবিশ্বে এক মহামারি আকার দেখা দিয়েছিল ও মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বে অসংখ্য মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। নিজের জীবন বিপন্ন করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি অলিতে গলিতে, বাজারে মাইকিং করে সেনাবাহিনী এই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেছে। দুর্গম এলাকাসহ সেনাসদস্যরা গরিব দুস্থদের মাঝে ওই সময়ে খাবার পানি ও খাবার বিতরণ করেছে। বিভিন্ন সেনানিবাস কর্র্তৃক ১ টাকার মার্কেট পরিচালনা করে সেনাসদস্যরা গরিব ও সাধারণ মানুষের মাঝে খাবারদাবার থেকে শুরু করে জামাকাপড় ইত্যাদি বিতরণ করেছে। এছাড়াও, সিএমএইচে সাধারণ মানুষকে কোভিড-১৯ চিকিৎসা দিয়ে সেনাবাহিনী তাদের জীবন রক্ষা করেছে। এই কোভিড-১৯ চিকিৎসা প্রদান করার সময় সেনাবাহিনীর অনেক ডাক্তার ও চিকিৎসা সহায়তাকারী সেনাসদস্য মৃতু্যবরণ করেছে। চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে সিএমএইচ এর পাশাপাশি সেনাবাহিনী কর্র্তৃক পরিচালিত প্রতিটি স্কুলকে সাময়িক হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, যেন বেশিসংখ্যক রোগীকে এই চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা যায়। এছাড়াও, বিভিন্ন স্থানে কোভিড-১৯ এর টিকা প্রদানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।
নিরলস পরিশ্রম করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেনাবাহিনী সরকার ও সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করে আস্থা অর্জন করেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে শিল্পাঞ্চল রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। এই কাজ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য নিহত ও আহত হয়েছেন। তথাপিও দেশ ও দেশের মানুষের জানমাল রক্ষার্থে সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর।
সেনাবাহিনী আমাদের দেশের একটি গর্বিত প্রতিষ্ঠান এবং অমূল্য সম্পদ। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের কাছে একটি আস্থার প্রতীক এবং শেষ ভরসাস্থল। জাতির সংকটময় সময়ে সেনাবাহিনী একটি আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। তাদের নিরলস পরিশ্রম, অনুকরণীয় শৃঙ্খলা এবং সীমাহীন দেশপ্রেম আমাদের জাতির উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার মূলে রয়েছে। ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কেবল একটি সামরিক বাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সঠিক প্রশিক্ষণ ও পেশাদারিত্ব, আধুনিক প্রযুক্তি এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে সেনাবাহিনী দেশের একটি বড় সম্পদে পরিণত হয়েছে। দেশ রক্ষার্থে এবং দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য তাদের নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কখনো পিছুপা হবে না।