বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জাতি গঠন এবং জাতীয় উন্নয়নের ধারক
![]()
লে. কর্নেল মো. রফিকুল আলম
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা অর্থাৎ দেশের অখণ্ডতা রক্ষা এবং বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখা সেনাবাহিনীর মুখ্য কাজ। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম তিনটি ভূমিকা হলো আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষণাবেক্ষণে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা (যখন দায়িত্ব দেওয়া হয়), বিপর্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা (অনুরোধ করা হলে। এবং প্রয়োজন অনুযায়ী জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা। ‘সমরে আমরা, শাস্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা, দেশের এ সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ জাতিগঠনমূলক, সেবা এবং উন্নয়নমূলক শেছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। জাতিগঠনমূলক 66 কাজ থেকে শুরু করে দেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রায় সব ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সেনাবাহিনী বদ্ধপরিকর এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহে সেনাবাহিনীর চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার ফলস্বরূপ অতিসম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরসহ প্রকল্প পরিচালক হিসেবে একজন যোগা সামরিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তীব্র স্লোগান তোলেন। এরে’ এই মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারণ
আভ্যন্তরীপ নিরাপভা বলতে একটি দেশের অথবা সমাজের চাহিদা এবং স্বার্থকে সন্তুষ্ট করার প্রক্রিয়া বোঝায়। স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রের চাহিদা মোতাবেক সেনাবাহিনী দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপভায় সর্বাত্মকভাবে কাজ করেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে যেসব সায়িত্ব পালন করছে সেগুলো হলো অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ করা, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কুটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং দূতাবাসসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, কেপিআই এবং সরকারি বেসরকারি স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মূল সড়কসমূহ বাধামুক্ত রাখ্যা, অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করাসহ সার্বিকভাবে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার যাতে দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে, সেজন্য স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা। প্রতিটি দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে সেনাবাহিনী দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ কারখানাসমূহ চালু রাখার জন্য মালিক এবং শ্রমিকপক্ষ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
৫ আগস্টের পর নিষ্ক্রিয় থাকা সব থানা সচল করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী অভূতপূর্ব সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। দুই দফায় ১২০ দিনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব পর্যায়ের সদস্য সচেষ্ট রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোট চব্বিশটি অবৈধ অস্ত্র এবং ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদয়ের দুর্গাপূজা এবং বৌদ্ধ সম্প্রাদায়ের কঠিন চীবরদান উৎসব সুষ্ঠুভাবে পালন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অপপ্রচারের মাধ্যমে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা প্রদান করত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ব্যতিরেকে উভয় ধর্মীয় উৎসব সুষ্ঠুভাবে পালন নিশ্চিত করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৩০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুতর আহত চার জনকে উন্নত সুচিকিৎসার জন্য সিংগাপুর এবং থাইল্যান্ডে পাঠিয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা এবং আর্থসামাজিক মূল্যায়নে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। পদ্মা সেতুর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মাওয়া প্রান্তের পদাতিক ব্যাটালিয়ন মাওয়া প্রান্তের এক নম্বর পিলার থেকে ধলেশ্বরী সেতু পর্যন্ত ৭৭ বর্গকিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তের পদাতিক বাটালিয়ন পদ্মা ব্রিজের ৪১ নম্বর পিলার থেকে পাঁচ্চর পর্যন্ত ১৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকা সার্বক্ষণিক সরাসরি নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। এছাড়া সেতুর পূর্ব এবং পশ্চিমে ছয় কিলোমিটার নদীপথের নিরাস্তা নিশ্চিত করছে সেনাবাহিনীর একটি রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫৩২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা তৈরি, যাতায়াতের সুবিধার্থে ছোট নদী এবং খালের ওপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেতু/সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। খাগড়াছড়ি-নীঘিনালা-বাঘাইহাটি, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি-মাসালং- সাজেক, দীঘিনালা-ছোটমেরুং-চঙ্গরাছড়ি-লংগদু, দীঘিনালা-মারিশ্যা, চিম্বুক-খানটি, বান্দরবান- আলীকদম সড়ক নির্মিত হওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বাণিজ্যে পাহাড়ি জনপদে এসেছে প্রাণের স্পন্দন। পর্যটনশিল্পের ব্যাপক বিকাশের মাধ্যমে পাহাড় এবং সমতলের মানুষের মধ্যে সহযোগিতা এবং সৌহার্দ্যের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে পার্বত্য জেলাসমূহের সীমান্ত বরাবর নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, সীমান্তসংলগ্ন অবৈধ ব্যবসা বন্ধ, পাহাড়ি জনগণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে। বাঙ্গালহালিয়া-চন্দ্রঘোনা-খাগড়া এবং খা-উ-
সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ি অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আট মাসে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘কেএনএ’- এর পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণ এবং অতর্কিত হামলায় সাত জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের হাত থেকে স্থানীয় নিরীহ জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ যৌথ অভিযান ২০২৪-এর এপ্রিল থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে মানবাধিকার রক্ষা করে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কেএনএ সক্রিয় সদস্য/সহায়তাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিগঠনমূলক কার্যক্রমে প্রশংসনীয় অবদান রাখার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে, যার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ড, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, রাস্তাঘাট নির্মাণ, ফ্লাইওভার এবং আন্ডারপাস নির্মাণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ২০০৮ সাল থেকে বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি শুরু হ্যা। সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং মেশিন রিডেবল ভিসার কার্যক্রম শুরু হয়। দুর্যোগ প্রস্তুতিতে প্রশিক্ষিত হয়ে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বন্যা এবং ভূমিধসসহ যে কোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার মাধ্যমে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস এবং ভালোবাসা অর্জন করেছে। বন্যা, ঘূর্ণিবাড়, ভূমিকম্প, ভবনইস, দুর্যটনাজনিত অগ্নিকাণ্ডসহ যে কোনো দুর্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে দ্রুত সহায়তা দিতে সক্ষম। দেশের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত অঞ্চলে আর্তমানবতার সেবায় সেনাবাহিনী সর্বদা আন্তরিকতা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ব্যায় মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং খাগড়াছড়িতে বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর দয়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিটসমূহ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।
২০২২ সালেও সিলেট এবং সুনামগঞ্জে বন্যা এবং বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়। সেনাসদস্যরা বন্যাকবলিত মানুষের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া, ত্রাণ বিতরণ, খাবার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা, আটকে পড়া অসংখ্য ব্যক্তিকে উদ্ধার, চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা এবং বাঁধ নির্মাণে সহায়তা করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৩ সালের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে সার্বিকভাবে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাসদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ধারণার চেয়ে কম সময়ে উদ্ধারকাজ সম্পাদন করা সম্ভব হয়, ফলে অনেক জীবনও বেঁচে যায়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ঢাকার বঙ্গবাজারের ভয়াবহ আগুন নেভাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে আগুন নেভানোসহ উদ্ধারকাজ ত্বরান্বিত হয়।
মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বারোটি ক্যাডেট কলেজ, চৌচল্লিশটি কান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এবং কলেজ এবং উনিশটি ইংলিশ মিডিয়াম ভার্সন স্কুল এবং কলেজ এবং সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্কুল-কলেজসমূহে বেসামরিক পরিবারের শিক্ষার্থীরাও উন্নত পরিবেশে মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রয়াস স্কুল প্রতিষ্ঠা একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, যা দেশে-বিদেশে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। ঢাকা সিএমএইচ থেকে বেসামরিক ব্যক্তিদের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। চিকিৎসাক্ষেত্র প্রসারিত করার লক্ষ্যে আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনসহ বগুড়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর এবং রংপুর সেনানিবাসে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে দেশের সকল স্তরের ছাত্রছাত্রী রছাত্রী উচ্চ চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে কোয়ারেন্টাইন সুবিধা স্থাপন, চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ এবং সারা দেশে স্বস্থ্যসেবা প্রদন করে। কোভিত-১৯-এর বিস্তার রোধে সেনাবাহিনী লকডাউন নিশ্চিত করে। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন টিম এবং টহল দল মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, চিকিৎসা প্রচন্তাভিযান এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনাবাহিনীর চিকিৎসকগণ কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিয়েছেন। সেনা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প পরিচালনা করে ৫০ হাজার ৮৩১ জনকে চিকিৎসা। সেবা প্রদান করেছেন।
ভূমিহীন এবং আশ্রয়হীন জনগোষ্ঠীর আবাসনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যারাক নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে সরকার খাস জমিতে আবাসন প্রকল্প নির্মাণে ১৯৯৭ সাল থেকে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত রয়েছে এবং স্বল্প বাজেটের মধ্যে ব্যারাক নির্মাণ করে সুষ্ঠুভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করছে। জাতীয় পর্যায়ের লোকসানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ২০০০ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিশত হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত সেনা কল্যাণ সংস্থা নির্ভেলল ভোজা দ্রব্য (যেমন: চাল, আটা, সুজি, মিনারেল ওয়াটার ইত্যাদি) বাজারে সরবরাহ করে জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে অবদান রাখছে।
দেশ এবং জাতির কল্যাণে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যেমন: পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহিপাল ফ্লাইওভার, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, সীমান্ত সড়ক প্রকল্প, খুরুশকুল আশ্রয়গ প্রকল্প বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেললাইন প্রজেক্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
ঢাকা এবং তার আশপাশের সড়কব্যবস্থা উন্নয়নসহ যানজট নিরসনে হাতিরঝিল ইউলুপ, ঢাকা শহরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সিফটিংয়ের কাজ, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোডে ফ্লাইওভার, করনী রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্পসমূহ সফলভাবে সেনাবাহিনী সম্পন্ন করেছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মহিপাল ফ্লাইওভারটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম সড়ক পথের যাতায়াত সহজ হয়েছে। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওয়ারটিও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে এবং নগরীর যানযট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটি বংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সম্পন্ন করার ফলে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার মানুষকে ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে নিরাপদ রাখছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জাতির স্বার্থে সদা বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ/স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদান এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যমান আইন মেনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে জনজীবনে জভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ জুড়ে কজ করে যাচ্ছে। যে কোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করে জাতি গঠন এবং উন্নয়নমূলক কাজে আরো সম্পৃক্ত হওয়ার দৃঢ় শপথে অর্থকারবদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সদা জাগ্রত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
লেখক: সেনাবাহিনী কর্মকর্তা।