শাহাদাত ফরাজি সাকিবঃ এক দেশপ্রেমিকের বন্দিত্ব ও আমাদের নির্বিকারতা

শাহাদাত ফরাজি সাকিবঃ এক দেশপ্রেমিকের বন্দিত্ব ও আমাদের নির্বিকারতা

হাতকড়া পশাহাদাত ফরাজি সাকিবঃ এক দেশপ্রেমিকের বন্দিত্ব ও আমাদের নির্বিকারতারা প্রথম জুলাই বিপ্লবীর নাম সাকিব
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

সোহেল রিগ্যান

শাহাদাত ফরাজি সাকিব—রাঙামাটির লংগদুর সন্তান, এক সাহসী কণ্ঠস্বর, পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতার লড়াকু সৈনিক। পেশাগত কারণে এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি রাজধানী ঢাকায় বসবাস করলেও, তার হৃদয়জুড়ে ছিল পাহাড়ের বঞ্চিত মানুষের অধিকার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিরলস সংগ্রাম করে এসেছেন। কিন্তু আজ সেই সাকিব কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়—বরং রাষ্ট্রের পক্ষ নিয়ে কথা বলার অপরাধে!

তিন দশকের জীবন পেরিয়ে সদ্য বিবাহিত সাকিব ঢাকার রাজপথের চেনা নাম। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে তার ছিল অনন্য ভূমিকা। সে সময় ঢাকার সাইন্সল্যাব এলাকায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম দায়িত্বশীল ছিলেন। ফলশ্রুতিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি লাভ করেন। বামদের চাপে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

তবে এ বহিষ্কারই তাকে থামাতে পারেনি। বরং তিনি আরও দৃঢ়ভাবে দেশের স্বার্থে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতার পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছেন।

আসি প্রসঙ্গগত বিষয়ে:

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজন করাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়। এই শব্দটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতার জন্য হুমকি—এমনটাই মনে করেন অনেকে, কারণ এটি স্বীকৃত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আরও শক্তিশালী হবে।

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতি অপসারণের প্রতিবাদ জানাতে গত ১৫ জানুয়ারি স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি শিক্ষার্থীরা মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে যায়। সেখানে ”সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা ব্যানারে একদল লোকগিয়ে কোনোপ্রকার উসকানি ছাড়া স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র শিক্ষার্থীরা উপর হামলা চালায়। পরে দু’পক্ষের মধ্যে রক্তারক্তি সংঘর্ষ হয়।

এই ইস্যুতে ১৫ জানুয়ারি স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি ব্যানারে শাহাদাত ফরাজি সাকিব একটি সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি বিতর্কিত ‘আদিবাসী’ শব্দ বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ করেন। অথচ তিনি হামলাকারী নয়। বিশ্লেষণধর্মী ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের সূচনা ঘটে বাম ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আরমান ও আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ-এর নেতৃত্বে অতর্কিত হামলার মাধ্যমে। সংঘর্ষে পাহাড়ি ও বাঙালি—উভয় পক্ষের কর্মীরা আহত হন।

এ হামলার ঘটনায় শাহাদাৎ ফরাজী সাকিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তিনি তখন জাতীয় নাগরিক কমিটির ধানমন্ডি থানা প্রতিনিধি ছিলেন। পরে তাকে বহিষ্কারও করা হয়।

তাকে গ্রেপ্তারের পর ডিবি পুলিশ জানায়, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় মামলা হয়। গ্রেপ্তার শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব মামলার ৬ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি।

বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ দেশে ‘আদিবাসী’ বলে কোনো স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী নেই। সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠী নাগরিকত্বের ভিত্তিতে সমান এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো ‘উপজাতি’ বা ‘নৃগোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত হবে, ‘আদিবাসী’ নয়।

এমতাবস্থায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজন সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ।

একজন দেশপ্রেমিকের হাতে হ্যান্ডকাফ কেন? একজন মানুষ, যিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলেছেন, যিনি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে আপসহীন, তাকে আজ রাষ্ট্রবিরোধিতার মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে!

আমাদের প্রশ্ন—

যদি পাহাড় রক্ষার লড়াই করা অপরাধ হয়, তাহলে কি এই দেশ দেশদ্রোহীদের?

যদি ‘আদিবাসী’ শব্দ নিয়ে মতপ্রকাশের কারণে গ্রেফতার হতে হয়, তাহলে বাকস্বাধীনতার সীমানা কোথায়?

যদি শাহাদাত ফরাজি সাকিব জামিন বা নিঃশর্ত মুক্তি না পান, তাহলে আমরা কি স্বীকার করে নেব যে এই দেশ বাম ও দেশদ্রোহী শক্তির হাতে জিম্মি?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর রাষ্ট্রকেই দিতে হবে।

সাকিব বন্দী, আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

শাহাদাত ফরাজি সাকিব ব্যক্তিগত কোনো অপরাধের জন্য বন্দী হননি। তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলেছেন, আর এই কারণেই তাকে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। আমরা কি চুপচাপ দেখব, কিভাবে একজন দেশপ্রেমিককে অপরাধীর আসনে বসানো হয়?

একটি জাতির লজ্জা ও প্রতিরোধের ডাক: আজ যদি আমরা প্রতিবাদ না করি, তবে কাল আমাদের কণ্ঠও রুদ্ধ হবে। শাহাদাত ফরাজি সাকিব শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি এক আন্দোলনের নাম। তার মুক্তি মানে শুধু একজন মানুষের মুক্তি নয়, বরং দেশের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রামে আমাদের দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ।

এখনই সময় সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তোলার—
“সাকিবের মুক্তি চাই! পাহাড় রক্ষার লড়াই থামবে না!”

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed