পার্বত্য চট্টগ্রামে মিডওয়াইফারি শিক্ষায় বাঙালি নারীদের প্রতি বৈষম্য কেন?

পার্বত্য চট্টগ্রামে মিডওয়াইফারি শিক্ষায় বাঙালি নারীদের প্রতি বৈষম্য কেন?

পার্বত্য চট্টগ্রামে মিডওয়াইফারি শিক্ষায় বাঙালি নারীদের প্রতি বৈষম্য কেন?
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যতম সংবেদনশীল ও বৈচিত্র্যময় অঞ্চল। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান—এই তিন পার্বত্য জেলায় বহু বছর ধরে বাঙালি ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ পরস্পর সহাবস্থান করে আসছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন—প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এই অঞ্চলের সকল জনগোষ্ঠী পিছিয়ে রয়েছে। তবে সম্প্রতি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের একটি বিজ্ঞপ্তি নতুন করে বিতর্ক ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

২ মার্চ ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে।
এই সুবিধার আওতায় বিনামূল্যে ভর্তি সংক্রান্ত ওরিয়েন্টেশন, লজিস্টিক সহায়তা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি নারীরা এই বিশেষ সুবিধার আওতায় নেই

এই বৈষম্য কেন?

সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি নারীরাও একইরকম আর্থ-সামাজিক সংকটে দিন কাটান। দুর্গম এলাকা, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অভাব, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ—সবকিছুই পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকল নারীর বাস্তবতা।

তাহলে কেন জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে এই বৈষম্য? কেন পার্বত্য বাঙালি নারীদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে?

সংবিধান কি বলে?

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে:
“রাষ্ট্র কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না।”

অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে মিডওয়াইফারি শিক্ষার ক্ষেত্রে বাঙালি নারীদের বাদ দিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের বিশেষ সুবিধা প্রদান সংবিধানের এই স্পষ্ট বিধানের লঙ্ঘন।
জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে এমন বৈষম্যমূলক নীতি রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন দর্শনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

প্রকল্পের আড়ালে বৈষম্য

জানা গেছে, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর UNFPA-এর কারিগরি সহায়তায় Strengthening the National Midwifery Programme (SNMP) প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পে মূলত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রকল্পের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে একই এলাকার বাঙালি নারীদের প্রতি রাষ্ট্রের দায় ও ন্যায়বিচারকে বিসর্জন দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাষ্ট্রের কাছে সকল নাগরিক সমান এবং তাদের প্রতি সমান সুযোগ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি নারীদের দাবি

পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থী ও নারী সংগঠনগুলো এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে যে দাবি জানিয়েছে, তা অত্যন্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী:

১. পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নারী—বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নির্বিশেষে—সমানভাবে মিডওয়াইফারি কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
২. জাতিগত বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৩. পার্বত্য অঞ্চলের সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমতা বজায় রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৪. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নারীকে সমানভাবে ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

শেষ কথা

বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় কাউকে পিছনে ফেলে রাখা চলবে না—এমন নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি নারী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী—উভয়ের সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করাই হবে সংবিধানসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত পথ

সাউথইস্ট এশিয়া জার্নাল বিশ্বাস করে, জাতিগত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি নারীদের অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

– সম্পাদকীয় বিভাগ
সাউথইস্ট এশিয়া জার্নাল

You may have missed