জামিল আহমেদ গংদের ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রতিষ্ঠার নামে নতুন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত

জামিল আহমেদ গংদের ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রতিষ্ঠার নামে নতুন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত

জামিল আহমেদ গংদের ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রতিষ্ঠার নামে নতুন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. জামিল আহমেদের পদত্যাগ এবং তার পদত্যাগপত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারের স্বাধীনতা চাওয়ার দাবি নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে দেশের সচেতন মহলকে। রাষ্ট্র যখন বারবার বলে এসেছে, বাংলাদেশের কোনো জনগোষ্ঠী আন্তর্জাতিকভাবে সংজ্ঞায়িত আদিবাসী (Indigenous) নয়, বরং এরা দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি, সেখানে একজন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরাসরি ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারের স্বাধীনতার দাবি তোলেন — বিষয়টি নিছক ব্যক্তিগত মত নয়, বরং একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই মনে হচ্ছে।

সরকারি চাকরিতে বহাল থেকেও ড. জামিল আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে সরকারের প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করে নিজের মতাদর্শ প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক পদে থেকেও তিনি সরকারি ভাষানীতি ও দিকনির্দেশনার বাইরে গিয়ে বিতর্কিত ‘আদিবাসী’ শব্দের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেন, যা সরকারি চাকরির শপথ ও নৈতিকতার পরিপন্থী। এর মাধ্যমে তিনি প্রকারান্তরে রাষ্ট্রীয় নীতিকে অগ্রাহ্য করে আন্তর্জাতিক লবির এজেন্ডা বাস্তবায়নের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন।

কেন বিতর্কিত ‘আদিবাসী’ শব্দ?

বাংলাদেশের জন্ম ও ইতিহাসের সঙ্গে এ দেশের মূল জনগোষ্ঠী অর্থাৎ বাঙালির অস্তিত্ব ও ভূমিকার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কিছু জাতিগোষ্ঠী নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে পরিচয় দিতে চাইলেও, রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দাবিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। কারণ, আন্তর্জাতিকভাবে আদিবাসী বলতে এমন জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়, যারা কোনো ভূখণ্ডের আদি বা প্রথম অধিবাসী এবং যারা বহিরাগতদের দ্বারা উচ্ছেদ বা শোষিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে বাঙালিরাই এ ভূখণ্ডের আদি জনগোষ্ঠী, আর অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর অনেকেই ঐতিহাসিকভাবে ভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী।

জামিল আহমেদের ভূমিকা ও বিতর্কিত অবস্থান

ড. জামিল আহমেদের অতীত কর্মকাণ্ড ও মতাদর্শ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি বরাবরই তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় থেকেছেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি, নিরাপত্তা ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রশ্নে তিনি বরাবরই একপেশে অবস্থান নিয়েছেন। তার পদত্যাগপত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দের স্বাধীনতা চাওয়ার বিষয়টি নিছক একাডেমিক মুক্তচিন্তার অংশ নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, কিছু এনজিও এবং তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনের দীর্ঘদিনের চাপ ও লবিং।

আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ছায়া

জাতিসংঘের কিছু অঙ্গসংস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বহুদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু উপজাতি গোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এ স্বীকৃতি আদায় করতে পারলে পার্বত্য অঞ্চলে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের বৈধতা তৈরি হবে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। ড. জামিল আহমেদের পদত্যাগপত্রের এই বক্তব্য সেই আন্তর্জাতিক এজেন্ডারই প্রতিফলন বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে।

উদ্দেশ্য কী?

আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিককরণ করা এবং ভবিষ্যতে সেখানে বাঙালিদের ভূমি, বসবাস ও অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে প্রশ্রয় দেয়া। এটি শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নয়, এটি গোটা বাংলাদেশের অখণ্ডতার প্রশ্ন।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

সতর্কতা ও করণীয়

বাংলাদেশের জনগণকে এখনই এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ, সন্ত্রাসী হামলা ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির নাটক করে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায়ের এই নীলনকশা রুখতে হবে। রাষ্ট্রকে আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে — বাংলাদেশে কেউ আদিবাসী নয়, সবাই নাগরিক; সবাই সমান।

শেষ কথা

ড. জামিল আহমেদ পদত্যাগ করলেও, তার রেখে যাওয়া এই বিতর্কিত দাবির পেছনে যে গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে, তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। এ দেশের মাটি, মানুষ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

-মোঃ সাইফুল ইসলাম
সাউথইস্ট এশিয়া জার্নাল