জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা: বাস্তবতা, পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেনাবাহিনী শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই থেমে থাকে না, বরং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায়ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখে চলেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক একটি সাক্ষাৎকারে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য করেছেন, যা নানা আলোচনা ও ভুল ব্যাখ্যার জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বাস্তবতা স্পষ্ট করা প্রয়োজন।
সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় সংবিধান, আইন ও জাতীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলে। জনগণের সুরক্ষা ও দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব, যা সেনাবাহিনী বরাবরই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলী চলাকালে সেনাবাহিনী কোনো পক্ষপাতমূলক ভূমিকা নেয়নি এবং কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যবহৃত হয়নি। বরং সেনাবাহিনী তার নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অতীতেও সেনাবাহিনী ১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক রূপান্তরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম প্রধান শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ শুধু বাহিনীর পেশাদারিত্বেরই প্রমাণ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সার্বিক মর্যাদা ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানেরই প্রতিফলন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখছেন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশকে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করছে।
শান্তিরক্ষা মিশন শুধু বাহিনীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। গত দুই দশকে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে প্রায় ২৭,০০০ কোটি টাকা অর্জন করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের কারণে আজ বিশ্বব্যাপী এর প্রশংসা করা হয়।
ভুল ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধানের মন্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে কিছু মহল ও কিছু তথাকথিত মিডিয়া সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে, যা দুঃখজনক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা মানবাধিকার রক্ষা ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যদি সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, তাহলে সেটি গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হওয়া উচিত।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বার্তা পায়নি। যদি এ সংক্রান্ত কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়ে থাকে, তবে তা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়ে থাকতে পারে, সরাসরি সেনাবাহিনীকে নয়।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের কল্যাণ, জাতীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের যে আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে, সেটিকে সম্মান জানিয়ে আমরা সর্বদা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করে যাব।
সেনাবাহিনীর প্রতি কোনো ভুল ধারণা বা উদ্বেগ সৃষ্টি হলে, তা গঠনমূলক আলোচনা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আশা করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গণমাধ্যম এই বিষয়ে নিরপেক্ষ ও বাস্তবসম্মত অবস্থান গ্রহণ করবে।
আমরা আশা রাখি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দেশ ও জনগণের সেবায় সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
সাউথইস্ট এশিয়া জার্নাল।