জুমের আগুনে পুড়ছে সবুজ পাহাড়, ঝুঁকিতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ

নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির পার্বত্য অঞ্চলে এ বছরও মার্চ-এপ্রিল জুড়ে পুড়ছে শত শত পাহাড়-টিলা। প্রথাগত জুম চাষের অংশ হিসেবে আগুন দিয়ে বনজঙ্গল পরিষ্কার করছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারগুলো। ফলে ছাই হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর টিলাভূমির সবুজ বন। আগুনের তাপে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, উপকারী মাইক্রোঅর্গানিজমস, এবং বনভূমির উর্বরতা।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, এ বছর তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ২২ হাজার হেক্টর টিলা পোড়ানো হয়েছে জুম চাষের জন্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জুম আবাদ হয় বান্দরবানে—প্রায় ১১ হাজার হেক্টরে। দ্বিতীয় অবস্থানে রাঙ্গামাটি (৯ হাজার হেক্টর) এবং তৃতীয় অবস্থানে খাগড়াছড়ি (২ হাজার ২০০ হেক্টর)। প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পাহাড় কেটে বন পরিষ্কার করে, বৃষ্টি নামলে ধান, তিল, তুলা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ রোপণ করা হয়।
শুধু বন নয়—জুমের আগুনে পুড়ে যাচ্ছে ফলদ-বনজ বাগান, এমনকি ঘরবাড়িও। গত ১০ বছরে বান্দরবানে জুমের আগুনে মারা গেছেন অন্তত ১৫ জন, পুড়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। এ ছাড়া অগ্নিসংযোগের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ।
বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিয়া জানান, “জুমের আগুনে অণুজীব, কীটপতঙ্গ ও বন্যপ্রাণী সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাটির পুষ্টি চক্র বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ আগুন ছাড়াও জৈবসার তৈরি করে চাষ সম্ভব।”
মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত আগুনে মাটি ইটের মতো শক্ত হয়ে যায়, এতে ফাটল ধরে এবং বর্ষায় ফাটল দিয়ে পানি ঢুকে পাহাড়ধস হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জুলফিকার আলী ফিরোজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পাহাড়ধসে টপসয়েল স্থানান্তরিত হয়ে যায়, যা ফের পেতে শত বছর লেগে যায়। ফলে পাহাড় ক্রমেই অনুর্বর হয়ে পড়ছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, জুম চাষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করলে পরিবেশ রক্ষা এবং অধিক ফলন—দুইই সম্ভব। গাছপালা, বন্যপ্রাণী রক্ষা করেও উৎপাদন বাড়ানো যাবে।
তবে জুমিয়ারা জানাচ্ছেন, জীবিকার কোনো বিকল্প না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে আগুনে বন পোড়ান।
মারমা উন্নয়ন সংসদের সভাপতি মংপ্রু চৌধুরী বলেন, “জুমের ক্ষতিকর দিক পাহাড়িরা জানে। কিন্তু কর্মসংস্থানের বিকল্প না থাকায় তারা এই পথেই থাকছে। সরকার চাইলে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।”
জুম চাষ পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হলেও, পরিবেশগত ঝুঁকি আজ আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই। গবেষক, প্রশাসন ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে বিকল্প ও টেকসই চাষপদ্ধতি গ্রহণ করাই হতে পারে এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।