মণিপুরে জাতিগত সহিংসতায় লুট হওয়া ৩২৮টি অস্ত্র উদ্ধার, উত্তেজনা ছড়াচ্ছে আসামেও

মণিপুরে জাতিগত সহিংসতায় লুট হওয়া ৩২৮টি অস্ত্র উদ্ধার, উত্তেজনা ছড়াচ্ছে আসামেও

মণিপুরে জাতিগত সহিংসতায় লুট হওয়া ৩২৮টি অস্ত্র উদ্ধার, উত্তেজনা ছড়াচ্ছে আসামেও
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে আবারও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মণিপুরে চলমান জাতিগত সহিংসতা ও অস্ত্র লুটের প্রেক্ষাপটে রাজ্যটির পাঁচটি উপত্যকা জেলায় চালানো এক যৌথ অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে লুট হওয়া ৩২৮টি আগ্নেয়াস্ত্র। অপরদিকে, আসামের ধুবড়ি জেলার এক মন্দিরে পশুর মাংস পড়ে থাকার ঘটনায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যা এলাকায় সাম্প্রদায়িক উসকানির আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।

১৪ জুন, ২০২৫ তারিখে মণিপুর রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিজি) লহরি দোর্জি লহাতু জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযানে মণিপুর পুলিশের সঙ্গে অংশ নেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) এবং আসাম রাইফেলস। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এ অভিযানকে রাজ্যে “শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি” হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

লহাতু জানান, “মণিপুর পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এটি একটি বড় অর্জন। আমরা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ধরনের অভিযান চলবে এবং নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তা আরও জোরদার করা হবে।”

পুলিশের এক বিবৃতিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, অবৈধ অস্ত্র বা সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য দিয়ে যেন নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সক্রিয় সহযোগিতা করা হয়। এতে বলা হয়, “জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এই ধরনের অভিযানে পূর্ণ সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়।”

উল্লেখ্য, মণিপুরে ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে মেইতেই ও কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘাত শুরু হয়। সংঘাতের সূচনা হয় মণিপুর হাইকোর্ট কর্তৃক মেইতেইদের তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত করার সুপারিশের প্রেক্ষিতে, যার প্রবল বিরোধিতা করে কুকি-জো গোষ্ঠী। সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত এবং বহু গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়, ফলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।

সেই সময় রাজ্যের বিভিন্ন থানার অস্ত্রাগার থেকে লুট হয় প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র এবং লক্ষাধিক গুলি। এবারের অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে অনেকগুলিই সেই সময়ের লুট হওয়া অস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা লুট হওয়া অস্ত্র সমর্পণের জন্য সাত দিনের সময়সীমা ঘোষণা করেন। ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই প্রায় ১,০২৩টি অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ সমর্পণ করা হয়। তবে কুকি-জো গোষ্ঠীগুলি পৃথক প্রশাসনের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র না ফেরানোর ঘোষণা দেয়, যা এখনো বলবৎ রয়েছে।

সাম্প্রতিক অস্ত্র উদ্ধার অভিযান রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে ভূমিকা রাখলেও, বিশেষ করে কুকি-জো গোষ্ঠীর প্রতিরোধ ও অস্ত্র সমর্পণে অনীহা এবং মেইতেইদের সঙ্গে চলমান বিরোধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, যতক্ষণ না সব পক্ষ রাজনৈতিক সমাধানের পথে আসছে, ততদিন অস্ত্র উদ্ধার অভিযান সাময়িক স্বস্তি দিলেও মূল সংকট কাটবে না।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।