তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যুৎহীন ৬৮৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সৌর প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ
 
                 
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্যুৎবিহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সৌরপ্যানেল স্থাপন ও নিরাপদ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলার দুর্গম এলাকাগুলোর ৬৮৪টি বিদ্যুৎবিহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সৌরপ্যানেল স্থাপন করা হবে, পাশাপাশি পানির সংকটে থাকা ৫১৫টি বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রত্যেকটি বিদ্যুৎবিহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রস্তাবিত ‘তিন পার্বত্য জেলাগুলোর বিদ্যুৎবিহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সৌরপ্যানেল স্থাপন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার দুর্গম এলাকায় অবস্থিত শতাধিক বিদ্যুৎবিহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সৌর প্যানেল স্থাপন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম আরও কার্যকর হয়। একই সঙ্গে প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে টিউবওয়েল বা পরিশোধন প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হবে। এই লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, তিন পার্বত্য জেলা অর্থাৎ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে বর্তমানে মোট ১ হাজার ৭৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮৪টি বিদ্যালয়ে এখনও বিদ্যুৎ ও নিরাপদ পানির সুবিধা নেই। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৬৮৪টি বিদ্যুৎবিহীন বিদ্যালয়ে সৌরপ্যানেল স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ১৬৯টি বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাকি ৫১৫টি বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা সংযুক্ত করা হবে। বিশেষভাবে, বিদ্যুৎবিহীন এবং নিরাপদ পানির সংকটে থাকা ৫১৫টি বিদ্যালয়ে ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতার সৌরপ্যানেল স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। অপরদিকে, যেসব বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানি রয়েছে, তবে বিদ্যুৎ নেই, সেগুলোতে ৩ কিলোওয়াট ক্ষমতার সৌরপ্যানেল স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনও বিদ্যুৎ ও নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল শিক্ষার সুবিধা পাচ্ছে না, এমনকি সন্ধ্যার পর শিক্ষকদের কোনো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাছাড়া পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় মাল্টিমিডিয়া, টেলিভিশন, প্রজেক্টর বা চার্জিং সুবিধাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিদ্যালয়গুলোতে প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের সুযোগ তৈরি হবে।
একইসঙ্গে নিরাপদ পানির সংকটও এসব অঞ্চলে একটি বড় সমস্যা। অধিকাংশ বিদ্যালয়েই শুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়, যা নিয়মিত উপস্থিতি ও শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রকল্পের আওতায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, মনোযোগ ও বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবানের রুমা উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, সে অনেক সময় পানি আনতে বাইরে যায়, তাতে অনেক সময় ক্লাস সময়তো উপস্থিত হতে পারে না। যদি স্কুলেই পানি থাকে, তাহলে আর বাইরে যেতে হবে না। সময়মতো ক্লাসে যেতে পারবে।
রাঙামাটির একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই কারণে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। তবে, যদি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়, তবে আমাদের শিক্ষার্থীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষার সুযোগ পাবে এবং শিক্ষায় এক নতুন মাইলফলক অর্জন করতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ পানি পান করতে বাধ্য হয়, যা প্রায়ই পানিজনিত নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। তবে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা হলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং তারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবে। এর ফলে তাদের পড়াশোনার মান ও বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। শুধু পুঁথিগত শিক্ষা নয়, একটি শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য নিরাপদ পানি ও অনুকূল পরিবেশ অপরিহার্য।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফজলে এলাহী বলেন, ‘অধিদপ্তর থেকে প্রস্তাবিত একটি প্রকল্প আমরা ইতোমধ্যেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির ওপর একটি বিস্তারিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর পরবর্তী ধাপে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে একনেক সভায় পাস হলেই আমরা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
