বান্দরবানে আটককৃত কেএনএফের নারী সন্ত্রাসীদের মুক্তি দাবি, মানবাধিকার না অপরাধের পক্ষপাত?

বান্দরবানে আটককৃত কেএনএফের নারী সন্ত্রাসীদের মুক্তি দাবি, মানবাধিকার না অপরাধের পক্ষপাত?

বান্দরবানে গ্রেপ্তার কেএনএফের নারী সন্ত্রাসীদের মুক্তি দাবি, মানবাধিকার না অপরাধের পক্ষপাত?
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা ও থানচিতে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া বম নারী সদস্যদের মুক্তির দাবিতে ঢাকার শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক কর্মসূচিকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।

‘জুলাই কন্যা দিবস’ উপলক্ষে গতকাল সোমবার আয়োজিত এই কর্মসূচিতে মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘নিরপরাধ’ নারীদের মুক্তির দাবিতে দাঁড়ান, অথচ এ দাবির পেছনের বাস্তবতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ানোদের মধ্যে সায়দিয়া গুলরুখ নামের একজন বলেন, “তারা দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে নিরাপরাধ হয়েও জেল খাটছেন।” কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে সংঘটিত ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট, ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানে কেএনএফ-এর ৫০ জনেরও বেশি সদস্য গ্রেপ্তার হয়—যাদের মধ্যে নারী সদস্যরাও ছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও, ছবি ও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে—অস্ত্রধারী নারী সদস্যরাও ওইসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। এমনকি ব্যাংক লুটের সময় নারী সদস্যদের উপস্থিতি ছিল স্পষ্ট।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জীবনবাজি রেখে সেসব সশস্ত্র অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছিলেন, যার ফলে আজ বান্দরবানে আবারও শান্তির আবহ ফিরে এসেছে। যারা অস্ত্র হাতে রাষ্ট্র ও নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের ‘নিরপরাধ’ আখ্যা দিয়ে মুক্তির দাবি করাটা নিছকই মানবাধিকার চর্চা নয়—বরং একধরনের পক্ষপাতদুষ্ট ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কৌশলগত দিক থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কেএনএফ-এর নারী সদস্যদের শুধু ‘নারী’ হওয়ার কারণেই রাজনৈতিক দাবির ঢাল বানিয়ে তাদের অপরাধকে আড়াল করার অপচেষ্টা হচ্ছে। অথচ পাহাড়ের নিরীহ মানুষ, যারা কেএনএফ-এর দমন-পীড়নে নিজভূমি ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন, আজ সেনাবাহিনীর অভিযানের ফলে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছেন।

আলোচিত এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন একাধিক আলোচিত ব্যক্তিত্ব, যাদের কেউ কেউ অতীতে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর পক্ষাবলম্বনে বক্তব্য দিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে শহীদ মিনারের মতো জাতীয় স্মৃতির প্রতীকস্থলে এমন একতরফা দাবি নিয়ে দাঁড়ানোয় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

আলোচিত ওই অনুষ্ঠানে অন্তর্বতীকালীন সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক রিফাত রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর হয়ে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া এবং আইনি প্রক্রিয়ায় আটক অপরাধীদের নির্দোষ প্রমাণের এই অপচেষ্টা শুধুমাত্র বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেই থেমে নেই—এটি নিরাপত্তাবাহিনীর আত্মত্যাগকেও অবজ্ঞা করছে। মানবাধিকার রক্ষার নামে সশস্ত্র অপরাধীদের মুক্তির দাবি আদতে সহিংসতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রশ্রয় বলেই মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।