খাগড়াছড়ি শহরে ইউপিডিএফের দুগ্রুপের গোলাগুলি: প্রশাসন কি দায় এড়াতে পারে?

খাগড়াছড়ি শহরে ইউপিডিএফের দুগ্রুপের গোলাগুলি: প্রশাসন কি দায় এড়াতে পারে?

আধিপত্য বিস্তারখাগড়াছড়ি শহরে ইউপিডিএফের গোলাগুলি: প্রশাসন কি দায় এড়াতে পারে?কে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের বিবাদমান দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, গুলি

সংঘর্ষ চলাকালে দুই সন্ত্রাসীকে গুলি করতে দেখা যায়।

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কয়ার—জেলার কেন্দ্রস্থল, শহরে প্রবেশের প্রধান মুখ। এমন একটি জায়গায় দিবালোকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটবে, সাধারণ মানুষ দিগ্বিদিক পালাবে, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে পুরো শহরে—এবং প্রশাসন নির্বিকার থাকবে, তা কল্পনা করাটাই বিস্ময়কর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঠিক এমনটিই ঘটেছে এবং এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বারবার যে প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসে, সেটিই আবার নতুন করে সামনে এসেছে—এই প্রশাসন আসলে কার?

এই গোলাগুলির পেছনে রয়েছে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ নামের একটি অনিবন্ধিত, পার্বত্য চুক্তিবিরোধী, সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। যারা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, গুম—কোন অপরাধ নেই যেটির সঙ্গে এ সংগঠন জড়িত নয়। এমনকি সংগঠনটির প্রধান প্রসীত বিকাশ খীসার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে এবং তিনি বহুদিন ধরে আত্মগোপনে।

সেই ইউপিডিএফ যদি খাগড়াছড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রকাশ্যে মিছিল করে, সমাবেশ করে এবং সেখানে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে গুলি চালায়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—এই মিছিল বা সমাবেশের অনুমতি কে দিল?

জেলা প্রশাসন বা পুলিশ কি জানত না এই কর্মসূচি সম্পর্কে? যদি জানত, তবে কেন অনুমতি দিল এমন একটি সংগঠনকে, যাদের অস্তিত্বই বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত? আর যদি না জানত, তাহলে পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দারা কী করছিল? একটি অনিবন্ধিত সশস্ত্র গোষ্ঠী শহরে মিছিল করবে আর প্রশাসন কিছুই জানবে না—এই ব্যর্থতা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

খাগড়াছড়ি শহরে ইউপিডিএফের দুগ্রুপের গোলাগুলি: প্রশাসন কি দায় এড়াতে পারে?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা গুলি চলার সময় কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার পরপরই পুলিশকে ঘটনাস্থলের পাশে বসে থাকতে দেখা গেছে, যেন তারা শুধু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই দায়িত্ব মনে করছে। প্রশ্ন হলো—যে বাহিনী শহরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা, তারা কেন দৃশ্যমান কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি? কেন আগেভাগে কড়া অবস্থান নেয়া হয়নি?

এই ঘটনার পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই নৈরাজ্যের দায়ভার কে নেবে? সন্ত্রাসীরা যদি জেলা শহরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রকাশ্যে গোলাগুলি চালায়, তাহলে দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটা নাজুক, তা সহজেই অনুমেয়।

এই একটি ঘটনাই পরিষ্কার করে দিয়েছে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয় উদাসীন, নয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে নির্লিপ্ত। আর এই নির্লিপ্ততাই সন্ত্রাসীদের বারবার সাহসী করে তুলছে। যে ইউপিডিএফকে রাষ্ট্র কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি, যার অস্তিত্বই আইনবহির্ভূত, সেই সংগঠন বারবার জনপদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে দিব্যি বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে—এটা কি প্রশাসনের অক্ষমতা, না নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে জন্ম নেওয়া এক ভয়াবহ মদদ ব্যবস্থার ইঙ্গিত?

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফেরাতে হলে কেবল পাহাড়ি-বাঙালি সমন্বয় নয়, প্রয়োজন সুশাসন ও কঠোর আইন প্রয়োগ। প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা শুধু তা-ই প্রমাণ করে যে, তারা হয় ভয় পায়, নয়তো দায়িত্ব নিতে চায় না।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু খাগড়াছড়ির এই ঘটনায় স্পষ্ট, সেই দায়িত্ব পালনের ন্যূনতম সচেষ্টতা প্রশাসনের ভেতরে নেই। শুধু নিন্দা বা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দায়সারা ঘোষনা দিরেই চলবে না—এই দায় নিয়ে প্রশাসনকে জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হবে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।