আতঙ্কই যাদের রাজনীতি: জনগণের নাম ভাঙিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে ইউপিডিএফ
এভাবেই খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জনদূর্ভোগ তৈরী করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা।
![]()
মোঃ সাইফুল ইসলাম
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড আবারও প্রমাণ করেছে—এই সংগঠনগুলোর লক্ষ্য পাহাড়ে শান্তি নয়, সহিংসতা ছড়ানোই তাদের রাজনীতি। নিজেরাই নিজেদের “জনগণের দল” বলে দাবি করলেও বাস্তবতায় তারা জনগণের জীবনকে জিম্মি করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
খাগড়াছড়ির প্রাণকেন্দ্রে সংঘটিত দিনদুপুরের গোলাগুলির রেশ না কাটতেই তারা এখন পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথগুলো অবরোধ করে তাণ্ডব শুরু করেছে।

আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গভামারা নাপ এগ্রো ফার্মের সামনে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই ধরনের ঘটনা ঘটে গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি জোড়া ব্রিজ এলাকাতেও, যেখানে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে সন্ত্রাসীরা ‘প্রতিবাদ’ জানায়। অথচ, এ সড়ক দুটিই পাহাড়বাসীর জীবনের প্রধান শিরা, যাতায়াতের একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের বিবাদমান দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, গুলি
এ ধরনের সড়ক অবরোধ একজায়গায় সীমাবদ্ধ ছিল না। সাজেকেও ইউপিডিএফের বিক্ষোভের নামে আতঙ্ক ছড়ানো হয়, নিরীহ পাহাড়িদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এনে ঘন্টাব্যাপী সড়কে বসিয়ে রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। রাঙামাটির কুতুকছড়িতেও দুপুর দেড়টার সময় পিসিপি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্যরা সড়ক অবরোধ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। নির্বাণপুর বনবিহারের সামনে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও রাস্তা বন্ধ করে রাখার ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীদের মাঝে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়।

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গোলাগুলির দায় ঢাকতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নাটকীয় প্রতিবাদ কর্মসূচি করছে ইউপিডিএফের ছাত্রসংগঠন পিসিপি। পাহাড়ে নিজেদের দায় চাপিয়ে তারা রাজধানীতেও সহানুভূতি আদায়ের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি শহরে ইউপিডিএফের দুগ্রুপের গোলাগুলি: প্রশাসন কি দায় এড়াতে পারে?
প্রশ্ন হচ্ছে, একটি সশস্ত্র, অনিবন্ধিত, রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনের এই ধরনের লাগাতার তাণ্ডব কি প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে চলছে? জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেও কি তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?

জনগণের নামে রাজনীতি করে যারা আসলে জনগণের স্বাভাবিক জীবনকে রাস্তায় পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন আজ সময়ের দাবি। খাগড়াছড়ি-রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে মানুষকে জিম্মি করা কোনো রাজনৈতিক অধিকার নয়—এটা সুস্পষ্ট সন্ত্রাস।
এই সংগঠনগুলো যখন তাদের ‘অধিকার আদায়ের’ নামে নিজেরাই নিজেদের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়, মানুষ খুন করে—তখনও দায় অন্যের কাঁধে চাপাতে চায়। আবার সেই দায় ঢাকতে গিয়ে সাধারণ মানুষের পথ আটকে তাদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। এটাই কী ‘জনগণের দল’-এর আচরণ?

প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রইল—এই সহিংস কর্মকাণ্ডকে কেন এখনো রাজনৈতিক প্রতিবাদের ছায়ায় ঢেকে রাখা হচ্ছে? একদিকে মামলা আছে, সন্ত্রাস আছে, অবৈধ অস্ত্র আছে—অন্যদিকে খোলা রাজপথে দাপট দেখানোর সুযোগও রয়েছে! এটা কি প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নাকি মৌন সমর্থন?
প্রসঙ্গত, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের জীবনকে জিম্মি করে চলা এসব সহিংস সংগঠনের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। জনতার ধৈর্য একসময় শেষ হবে, তখন দায় এড়ানো কঠিন হবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।