আদিবাসী দিবস: পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী, ভারতীয় মদদ এবং রাজনৈতিক যোগসূত্রে গভীর উদ্বেগ

আদিবাসী দিবস: পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী, ভারতীয় মদদ এবং রাজনৈতিক যোগসূত্রে গভীর উদ্বেগ

আদিবাসী দিবস: পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী, ভারতীয় মদদ এবং রাজনৈতিক যোগসূত্রে গভীর উদ্বেগ

পাহাড়ে কঠোর পরিশ্রমী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এক নারী।

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

৯ আগস্ট ‘আদিবাসী দিবস’ সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে ফের বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দিবসটি ঘিরে পার্বত্য অঞ্চলে জেএসএস, ইউপিডিএফ এবং একটি পলাতক রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট অংশের মধ্যে একধরনের কৌশলগত যোগাযোগ তৈরি হয়েছে, যা এই অঞ্চলে নতুন করে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি নেতৃত্বে একপ্রকার শূন্যতা দেখা দেয়। এক সময়ের ক্ষমতাসীন আওয়ামীপন্থী উপজাতি নেতাদের অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান, কেউবা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। অথচ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ত্রিপুরা ও মিজোরামের মাটিতে বসেই পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করছে স্থানীয় সচেতন মহল।

বিশেষ করে জেএসএস প্রধান সন্তু লারমার সাম্প্রতিক ভারত সফর এবং তার পরপরই সংগঠনের কর্মতৎপরতা বাড়িয়ে তোলা, এবারের ‘আদিবাসী দিবস’ উপলক্ষে কিছু অস্বাভাবিক প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। জানা গেছে, পার্বত্য জেলার শহরগুলোতে হাজার হাজার লোক সমাগমের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে ভিন্নধর্মী স্লোগান, নতুন বার্তা এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হতে পারে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের চেরাগি পাহাড়, জামাল খান এলাকা এবং ঢাকার শাহবাগ ও শিল্পকলার সামনেও দিবস পালনের নামে অবস্থান কর্মসূচি এবং জনসমাবেশের আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এসব কর্মসূচি আদতে একটি বড় ধরনের উসকানিমূলক মঞ্চ হতে পারে, যেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পাহাড় আবারও রক্তাক্ত হতে পারে। সংগঠনটি ৯ আগস্ট তিন পার্বত্য জেলায় একযোগে সমাবেশ আয়োজনের কথাও ভাবছে।

অন্যদিকে, প্রশাসনিক পর্যায়েও আশঙ্কার মেঘ জমেছে। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলায় বর্তমানে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা—যারা পূর্বতন সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত—তারা নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সীমান্তবর্তী অনেক এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর মতো সংগঠনগুলো ভারতীয় আশ্রয়ে থেকে সময়মতো ফিরে এসে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাদের পাসপোর্ট বা ভিসা প্রয়োজন না হওয়ায় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ না থাকলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে।

উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অশুভ প্রস্তুতির আলামত দেখা যাচ্ছে, তা যথাসময়ে রোধ করা না গেলে শান্ত পাহাড় আবারও অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। এই অঞ্চলের জনগণ বারবার বলছে—সীমান্ত সুরক্ষা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং জঙ্গিবাদ ও অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের এখনই সচেতন না হলে পরিস্থিতি যে কোনো সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed