আদিবাসী শব্দের অপব্যবহার ও পাহাড়ের সন্ত্রাসবাদকে ‘নিরীহ’ দেখানোর অপচেষ্টা ইয়ান ইয়ানের
![]()
মোঃ সাইফুল ইসলাম
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচলিত ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’-এর আড়ালে আবারও প্রকাশ পেয়েছে এক পুরনো কিন্তু ভয়ংকর ধূর্ত ষড়যন্ত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তি, বিভাজন ও রাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব জিইয়ে রাখার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এই নোংরা খেলায় সাম্প্রতিক সময়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এক কুখ্যাত চরিত্র — ইয়ান ইয়ান, যিনি একদিকে রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্রবধূ, অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অন্যতম প্ররোচক। তিনি চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়ের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী (বার্মিজ নাগরিক)।
বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ইয়ান ইয়ান ফেসবুকে এক বিভ্রান্তিকর, মিথ্যাচারপূর্ণ এবং রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিনের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার কর্মকাণ্ডকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছেন। তার পোস্টে পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ‘নিরীহ আদিবাসী’ হিসেবে চিত্রিত করে বিশ্ববাসীর কাছে ভুল বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে — যা কেবল ধৃষ্টতাই নয়, বরং পরিকল্পিত রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের স্পষ্ট প্রমাণ।
বাংলাদেশের সংবিধানে ‘আদিবাসী’ শব্দের কোনো স্বীকৃতি নেই। সংবিধান ও আইনে স্পষ্টভাবে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তবুও আন্তর্জাতিক মহল ও তাদের দেশীয় দোসররা সচেতনভাবে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করে বিভাজন, জাতিগত বিদ্বেষ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে উসকে দিচ্ছে। এই শব্দকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের রাজনৈতিক বৈধতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, যা সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত।
সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। পাহাড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজি ও দমননীতির শিকার যে সাধারণ মানুষ, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী একাধিকবার জীবন বাজি রেখে অভিযান পরিচালনা করেছে। অথচ ইয়ান ইয়ানের মতো অপপ্রচারকারীরা এসব ত্যাগ ও দায়িত্বকে মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে বিকৃত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি কেবল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, বরং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা।
এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ ভুল তথ্যের শিকার হয়, গণমাধ্যম বিভ্রান্ত হয়, এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অকারণে জটিল হয়ে ওঠে এবং সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নতুন প্রেরণা পায়।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ‘নিরীহ আদিবাসী’ আখ্যা দেওয়ার মতো অপপ্রচার কেবল ঘৃণ্যই নয় — এটি সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সরাসরি প্রশ্রয়। যারা এই ধরনের মিথ্যা কাহিনি প্রচার করে, তারা আসলে পাহাড়ে রক্তঝরানো সংঘাতের স্থপতি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের পৃষ্ঠপোষক। এদের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
রাষ্ট্রের স্বার্থ ও অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষায় এখনই জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করতে হবে। মিথ্যা অপপ্রচার, ‘আদিবাসী’ শব্দের অপব্যবহার, এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সক্রিয় হতে হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যম ও সচেতন নাগরিক সমাজকে এই বিভাজনবাদী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে — পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে শান্তি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো ষড়যন্ত্র, সেটা যত প্রলেপেই মোড়া হোক না কেন, আসলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। ইয়ান ইয়ানসহ যারা এই ঘৃণ্য প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ নজরে রাখা এবং আইন অনুযায়ী জবাবদিহির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।