ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের পাঁচ ভাষার বইয়ে বাংলা অনুবাদ যোগ হচ্ছে

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের পাঁচ ভাষার বইয়ে বাংলা অনুবাদ যোগ হচ্ছে

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের পাঁচ ভাষার বইয়ে বাংলা অনুবাদ যোগ হচ্ছে
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী—এ পাঁচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় প্রাথমিক স্তরের বই সরবরাহ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালে। তিন পার্বত্য জেলা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে এসব বই সরবরাহ হলেও শিক্ষক সংকটে উদ্যোগটি কার্যত ব্যর্থ হয়। তাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে নতুন উদ্যোগ। সহজে পাঠযোগ্য করতে পাঁচ ভাষার এসব বইয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর যুক্ত করবে বাংলা অনুবাদ ও উচ্চারণ নির্দেশিকা।

প্রাথমিক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভাষায় পাঠদানে বই সরবরাহ হলেও বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট ভাষা জানা শিক্ষকের সংকট। আবার যারা আছেন তাদের সিংহভাগই নিজ ভাষা বলতে পারলেও বর্ণ চেনেন না। অনেক বিদ্যালয়ে একাধিক ভাষার শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন কেবল একটি বা দুটি ভাষাভাষীর। এতেও নিজস্ব ভাষার বইয়ের মাধ্যমে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একেকটি এলাকায় ভিন্ন ভাষার শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু একসঙ্গে একাধিক ভাষায় দক্ষ শিক্ষক বিদ্যালয়গুলোয় নেই। আবার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষকরা নিজস্ব ভাষায় পড়াশোনা না করায় নিজেরাও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে পারছেন না। এ কারণে বই বিতরণ করা হলেও এসব বই রেখে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা আগের মতোই বাংলা ভাষার বইয়ের মাধ্যমে পড়াশোনা করছে। এতে বিপুল ব্যয়ে নেয়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যক্রমটি কয়েক বছরের মধ্যেই হয়ে পড়েছে অকার্যকর।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় শিক্ষা অফিস চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় পাঠদানের জটিলতা নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, অধিকাংশ শিক্ষক শোনা-বলার দক্ষতা থাকলেও পড়া-লেখায় দক্ষ নন। মতবিনিময় সভায় উঠে আসে, বইয়ে বাংলা অনুবাদ থাকলে প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষকরা পাঠদান করতে পারবেন। এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু বই ছাপালে উদ্যোগ সফল হয় না। শিক্ষক নিয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে।’

দেশের পার্বত্যাঞ্চলগুলোয় সবচেয়ে বেশি বিভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত হিসাবে এ অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মোট শিক্ষার্থী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৪ জন। বিপরীতে তিন পার্বত্য জেলায় প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক পদের অর্ধেকের বেশি এবং সহকারী শিক্ষক পদের প্রায় ৭৫০টিই শূন্য।

পরিসংখ্যান বলছে, রাঙ্গামাটি জেলায় চলতি বছর প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৩০ হাজার ৫৩৪ শিক্ষার্থীকে মোট ৬৯ হাজারের বেশি বই দেয়া হলেও পাঠদান সম্ভব হয়নি। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে চাকমা ২৩ হাজার ৭০৫, মারমা ৫ হাজার ৪২৫ ও ত্রিপুরা ভাষার ১ হাজার ৪০৪ জন। একই অবস্থা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষেত্রেও। বই বিতরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এসব বই দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাই শিক্ষার্থীরা বাংলা বই দিয়ে পড়াশোনা করছে।

সংকট উত্তরণে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় ছাপানো বইগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিশ্চিত করতে একাধিক বিকল্প চিন্তা করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। নেয়া হয় মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন মতামতও। এরপর একটি নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় অধিদপ্তর—পাঠ্যবই প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট ভাষার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বাংলায় বর্ণ, শব্দ ও উচ্চারণ এবং অনুবাদ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকে পরিমার্জিত এসব নতুন পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘পাঁচটি ভাষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বই সরবরাহ হলেও নিজ নিজ ভাষার শিক্ষক খুবই অপ্রতুল। পার্বত্য এলাকার একটি স্কুলে একাধিক ভাষার শিক্ষার্থী থাকলেও হয়তো একটি ভাষা জানেন এমন শিক্ষক রয়েছেন। ফলে নিয়মিত বই সরবরাহ হলেও পাঠদান করা যাচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে তথ্য ও আলোচনার মাধ্যমে আমরা সরবরাহ করা পাঁচ ভাষার বইতে বর্ণ, শব্দ ও বাক্যের উচ্চারণসহ অনুবাদ অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। এভাবে পরিমার্জিত বই সরবরাহ করা গেলে সহজেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভাষায় পাঠদান সহজ হবে।’

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাঁচ ভাষার পাঠ্যবই কার্যক্রমে চাকমা ও মারমা ভাষা নিয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘চাকমা ও মারমা ভাষার শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও শিক্ষকের স্বল্পতা আছে। চাকমা ভাষা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও মারমা ভাষা পাঠ, লিখন ও পাঠদান স্থানীয় একই ভাষার শিক্ষকদের জন্যও বেশ কঠিন।’

সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‌‌’নিজ ভাষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা নতুন একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। পাঁচটি ভাষার পাঠ্য বইয়ের সবকিছু বাংলায় অনুবাদ রেখে বইগুলো পরিমার্জিত আকারে প্রকাশ করা হবে। এতে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি যেকোনো ভাষা জানা শিক্ষকও প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঠদান করতে পারবেন। আগামী বছরের মধ্যে উদ্যোগটি বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।