অনুপ্রবেশ: বাংলাদেশে গ্রেফতার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা আইনি জটিলতায় রাষ্ট্রহীনতার শঙ্কায়

অনুপ্রবেশ: বাংলাদেশে গ্রেফতার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা আইনি জটিলতায় রাষ্ট্রহীনতার শঙ্কায়

বাংলাদেশে গ্রেফতার পশ্চিমবঙ্গের দুই নারী, আইনি জটিলতায় রাষ্ট্রহীনতার শঙ্কা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

আইনি জটিলতায় কার্যত রাষ্ট্রহীন অবস্থায় আছেন সোনালি বিবি। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ২৯ বছর বয়সী এই নারীকে ভারত থেকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে, অনুপ্রবেশের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) তাদের গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ খবর জানিয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, সোনালি বিবি, তার ছেলে এবং স্বামীকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আটক করা হয়। একই জেলা থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের সুইটি বিবি ও তার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোনালি বিবির পৈত্রিক বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে হলেও কয়েক সপ্তাহ আগে তাকে দিল্লি থেকে আটক করে সপরিবারে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তারা দুই দশক ধরে জীবিকার জন্য দিল্লির বাসিন্দা। তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে ভাঙারি কুড়ানো এবং গৃহকর্মীর কাজ করতেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর পর একটি অজ্ঞাতনামা স্থানে সোনালি ও অন্যরা সাহায্যের জন্য কাকুতি-মিনতি করছেন।

সোনালির মতোই সুইটি বিবির পৈতৃক বাড়িও বীরভূম জেলায়। দুই নাবালক ছেলেসহ এই পরিবারকেও প্রায় একই সময়ে আটক করা হয়। উভয় পরিবারকে প্রথমে দিল্লির কে এন কাতজু মার্গ থানায় আটক রাখা হয়েছিল। পরে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম ফোনে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের ভারতের আসাম সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রাম থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। এরপর তারা কিছুদিন ঢাকায় কাটিয়েছেন। সেখানে বেশির ভাগ সময় রাস্তার ওপর থেকেছেন। গত এক মাস ধরে তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় থাকছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সোনালি ও তার পরিবারের কাছ থেকে ভারতীয় নথিপত্র পাওয়া গেছে। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। যেহেতু এখানে নারী ও শিশু রয়েছে, তাই আমরা বিষয়টি যথাযথ সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে সামাল দিচ্ছি।

তাদের গ্রেফতারের ঘটনা যখন সামনে এলো, তখন কলকাতা হাইকোর্টে এই দুই নারীর পরিবারের দায়ের করা হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের শুনানি চলছে। হেবিয়াস কর্পাস আবেদনে খতিয়ে দেখা হয় যে, কাউকে আইনবহির্ভূতভাবে আটক করা হয়েছে কি না।

বাংলাদেশে সোনালি ও সুইটির সপরিবারে গ্রেফতারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্র্যান্ট লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সমীরুল ইসলাম। এটিকে গভীর উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার এই সদস্য বলেন, সোনালি গর্ভবতী এবং তাদের সঙ্গে শিশুও রয়েছে। তারা সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। সব ধরনের আইনি উপায়ে আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আদালতে শুনানি চলছে।

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক অর্ণব পাল বলেন, এখন তারা রাষ্ট্রবিহীন মানুষে পরিণত হয়েছেন। আমাদের মতে, আইনি লড়াইয়ের চেয়ে নেপথ্যের সংলাপই বেশি কার্যকর। দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দ্রুত ফেরানোর দিকে জোর দেওয়া উচিত।

এর আগে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের আরও অঙ্গরাজ্য থেকে কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ আটক অভিযান চালাচ্ছে ভারতীয় পুলিশ। এতে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বেশ কিছু বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিককে আটক করা হয়। কিন্তু এসব আটক ব্যক্তির অনেকের পৈতৃক বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগীদের পরিবার।

অনুপ্রবেশের অভিযোগে এর আগে মুম্বাই ও রাজস্থান থেকে আটক করে ৯ জনকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের ফেরত নেয়।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed