পার্বত্য চট্টগ্রামের নিয়োগে অগ্রাধিকার কোটা কি বিলুপ্ত হবে নাকি আরো দীর্ঘতর হবে?
![]()
সৈয়দ ইবনে রহমত
পার্বত্য চট্টগ্রামের নিয়োগ কোটার ব্যাপারে নির্দেশনা চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে ৩১ আগস্ট ২০২৫ (রোববার) স্বাক্ষর করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম।
চিঠিতে বলা হয়েছে,
“২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য বিলোপপূর্বক মেধার অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার পুনর্বিন্যাস করা হয়। উক্ত পুনর্বিন্যাসকৃত প্রজ্ঞাপনে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জন্য ১% কোটা নির্ধারণ করা হয়।”
“পক্ষান্তরে, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (সংশোধিত ১৯৯৮) এর ধারা ৩২ (২) অনুযায়ী পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী উপজাতি বাসিন্দাদের চাকরিতে নিয়োগে অগ্রাধিকার প্রদান করার বিষয় বলা আছে। … চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ উক্ত পরিষদ ও পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগসমূহের শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে কোটার বিষয়টি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে জানতে চেয়েছেন। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ রাঙ্গামাটি/বান্দরবান খাগড়াছড়ি এর ক্ষেত্রে বিষয়টি সমভাবে প্রযোজ্য।”
“বর্ণিত অবস্থায়, রাঙ্গামাটি/বান্দরবান/খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগসমূহের শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে কোটা নির্ধারণের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে বিনীত অনুরোধ করা হলো।”
এই চিঠি প্রদানের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সুবিবেচকের মতোই কাজ করেছে বলতে হবে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘অগ্রাধিকার কোটার’ নামে বিরাজমান জাতিগত বৈষম্যের বিলুপ্তির মাধ্যমে পাহাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে ন্যায় বিচার ও জাতিগত ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্বটি তুলে দেয়া হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোর্টে।
আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার সুফল পার্বত্যবাসীও যাতে সমভাবে পায় সেটা তারা নিশ্চিত করতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়কে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অবহিত করবে।
এক্ষেত্রে জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় কোটা সংক্রান্ত ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই সরকারের জারিকৃত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন বলবৎ করে পাহাড়বাসীকে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনের সুযোগ দেবে বলে প্রত্যাশা করছি। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯৩% মেধা এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫%; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১% ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% নিশ্চিত করা হবে।
কেননা, বিদ্যমান ‘উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার কোটা’ (যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগে গিয়ে দাঁড়ায়) পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠিগুলোর মধ্যে চরমভাবে বৈষম্য করার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসকারী বৃহত্তর জনগোষ্ঠি বাঙালিরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে। এই বৈষম্য ক্রমেই ক্ষোভ বাড়াচ্ছে পাহাড়ে। ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে এই বৈষম্য কোনোভাবেই চলতে পারে না।
আমি আশাবাদী মানুষ, তাই ভাবতে চাই, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্পিরিট অনুযায়ী তাদের সিদ্ধান্ত নেবে এবং পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠিগুলোর মধ্যে বিরাজমান আকাশ-পাতাল বৈষম্যের অবসান ঘটাবে।
তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈষম্য চলমান রেখে সেখানকার মানুষদের মধ্যে অসন্তোষ/বিভেদ/বৈষম্য জিইয়ে রাখার ষড়যন্ত্রকারীরা সদা তৎপর এবং তারা অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পৃক্ত সকল কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠান যদি এই ব্যাপারে সজাগ এবং সতর্ক না থাকে তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা জুজুর ভয় দেখিয়ে সবকিছু উল্টে দিতে পারে। ফলে দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘতর হতে পারে বৈষম্যের কালো মেঘ।
তাই, জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট বৈষম্যহীন বাংলাদেশের সুফল থেকে পার্বত্যবাসী যাতে বঞ্চিত না হয়, সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ, সতর্ক থেকে ইতিবাচক ভূমিকা নিতেই হবে। তা নাহলে বৈষম্যের তিমির আরো গাঢ়ো হয়ে ঢেকে দেবে চারপাশ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।