বান্দরবানে নাগরিক সংলাপ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন বাড়ানোর দাবি

বান্দরবানে নাগরিক সংলাপ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন বাড়ানোর দাবি

বান্দরবানে নাগরিক সংলাপ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংসদীয় আসন বাড়ানোর দাবি
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রামে (বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা) জনসংখ্যা অনুপাতে নয়, ভৌগোলিক দুর্গমতার বাস্তবতা বিবেচনায় জাতীয় সংসদে সাধারণ ও নারীর আসন বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে দেশে সংখ্যায় অতি কম (দুই থেকে পাঁচ হাজার জনসংখ্যা) জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিত্ব সংসদে নিয়ে আসার ব্যাপারেও ভাবতে হবে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় উঠে আসা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের ভাবনায় বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা এ মতামত ব্যক্ত করেছেন। বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় একশনএইড, বাংলাদেশের নেতৃত্বে সুশীল প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা বিএনকেএস এ জেলা সংলাপের আয়োজন করে। এই বৈঠকের প্রচার সহযোগী হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।

সংলাপে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নারী সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা একসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম হিসেবে পরিচিত। তিন জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। সংরক্ষিত নারী সদস্যদের জন্য একটি আসন আছে। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট আয়তন ২৩ হাজার ১৮৪ বর্গকিলোমিটার।

সংলাপে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ওসমান গণি বলেন, জাতীয় সংসদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার আসন নির্ধারণ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা অনুপাতে তিনটি আসন ও একটি নারী আসন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন দেশের মোট আয়তনের এক দশমাংশ। আয়তনের দিক থেকে হিসাব করলে এখানে সংসদীয় আসন আরও অনেক বেশি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, দুর্গম ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হলে সংসদীয় আসন বাড়ানো দরকার। সাধারণ ও নারী উভয় আসনের ক্ষেত্রে এটি জরুরি।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও জেলা পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আবুল কালাম বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে পতিত ফ্যাসিবাদীদের ঢোকানো হলে তা হবে আপত্তিজনক। এ জন্য জামায়াতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের কথা উত্থাপন করছে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। সব দলের, এমনকি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সংসদে নারীর আসন বৃদ্ধি এবং এসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানান মানবাধিকারকর্মী ও নারীনেত্রী ডনাইপ্রু নেলী। তিনি বলেন, নারীরা আর কোনো দলের করুণায় অলংকার হয়ে থাকতে চায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় তিনটি নারী আসন থাকা জরুরি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা প্রধান সমন্বয়ক শহিদুর রহমান বলেন, জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ব্যাপারে দলীয়ভাবে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী রিপন চক্রবর্তী বলেন, সরকার নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ করা সম্ভব নয়। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। তাই সরকারকে নিরপেক্ষ হতে হবে।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অং চ মং মারমা বলেছেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।

সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ না হলে ভোট গ্রহণ পুরো প্রহসনে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেন খুমি জনগোষ্ঠীর নেতা লেলুং খুমি। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোট গ্রহণ কাজে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা প্রভাবশালী প্রার্থী থেকে সুবিধা নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যান।

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, কবি ও লেখক অনাদিরঞ্জন বড়ুয়া বলেছেন, তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেখেছেন কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নিরপেক্ষ থাকার পরিবেশ না থাকলে কখনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

দুর্গমতার কারণে পাহাড়ের অনেক মানুষ এখনো ভোটার হতে পারেননি বলে গোলটেবিল বৈঠকে জানান ম্রো স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি তনয়া ম্রো।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাধন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, অনেকে ভোটার হলেও বসবাসের পাড়া থেকে ভোটকেন্দ্র অনেক দূরে ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় ভোট দিতে যেতে পারেন না। আবার যেখানে সড়ক যোগাযোগ রয়েছে, সেখানেও ভোটের দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এ অবস্থায় কোনো কোনো প্রার্থী নিজের পক্ষে ভোট নেওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে ও খাবার দিয়ে নিয়ে আসেন।

পাহাড়ের দূরবর্তী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে গাড়ি ও খাবারের ব্যবস্থা থাকতে হবে বলে জানান জেলা পরিষদের সদস্য ও নারী অধিকারকর্মী ম্যাম্যানু মারমা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসীম উদ্দিন।

সংলাপের শুরুতে বান্দরবান পার্বত্য জেলার ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক প্রত্যাশার দাবি তুলে ধরা হয়। সেখানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় সংসদে ৩০ শতাংশ নারীর আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি উঠে এসেছে।

প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ জামান চৌধুরীর সঞ্চালনায় বৈঠকে একশনএইডের উইমেন রাইটস লিড মরিয়ম নেছা স্বাগত বক্তব্য দেন। আরও বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের সদস্য ও আইনজীবী উবাথোয়াই মারমা, জেলা বিএনপির সদস্য নুমংপ্রু মারমা ও বান্দরবান প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম। শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিএনকেএসের নির্বাহী পরিচালক হ্লাচিংনু মারমা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।