রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে এডিবি থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার
![]()
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ হিসেবে দেবে ১০১ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং অনুদান দেবে ৩৮৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থাকছে ১০৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইনটিগ্রেটেড সার্ভিস অ্যান্ড লাইভহুড ফর ডিসপ্লেস পিপল ফ্রম মিয়ানমার অ্যান্ড হোস্ট কমুনিটিস ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (এলজিইডি পার্ট) শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর। এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্প এলাকা হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ উপজেলা ও নেয়াখালী জেলার উখিয়া, টেকনাফ উপজেলা বলা হয়েছে।
প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বিষয়ে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক এবং পার্শ্ববর্তী ক্ষতিগ্রস্ত হোস্ট সম্প্রদায়ের জন্য সাহায্য এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা সহজতর করার লক্ষ্যে সংযোগ সড়ক উন্নয়ন; কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়ক, অভ্যন্তরীণ সড়ক এবং পার্শ্ববর্তী ব্রিজ/কালভার্টের উন্নয়ন ও পুনর্বাসন এবং বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগ মোকাবিলায় অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন যেমনÑ খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র, নেচার বেজড সল্যুশনের মাধ্যমে ক্যাম্পের খাল পুনরুদ্ধার করা, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র কাম জিপিএস, বহুমুখী কমপ্লেক্স ভবন এবং স্ট্রিটলাইট সরবরাহ, স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ।
প্রধান কার্যক্রমের বিষয়ে বলা হয়েছে, আউটসোর্সিং, পরামর্শক সেবা। ইউনিয়ন, গ্রাম সড়ক উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়ন। নতুন স্ট্রিটলাইট সরবরাহ ও স্থাপন। উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন। ব্রিজ নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, পুনর্বাসন, প্রশস্তকরণ (৩টি)। কালভার্ট নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, পুনর্বাসন, প্রশস্তকরণ (৯০টি)। খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র। নেচার বেজড সল্যুশনের মাধ্যমে ক্যাম্পের খাল পুনরুদ্ধার করা। মাল্টি-পারপাস সাইক্লোন শেল্টার কাম জিপিএস। মাল্টি-পারপাস কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ এবং বিদ্যমান ও নতুন স্ট্রিটলাইটের অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ।
প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যেখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়মিত মোকাবিলা করতে হয়। দেশের উন্নয়নে বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ১০ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয়। মানবিকতা বিবেচনায় মিয়ানমারের এফডিএমএন নাগরিকদের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা এবং নোয়াখালী জেলার হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, সুরুচির এবং বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার জনগোষ্ঠীর আকস্মিক আগমন এই জেলাগুলোর বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। তাদেরকে প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর জন্য উদ্ভূত স্বাস্থ্যঝুঁকি, সম্পদের সীমাবদ্ধতা, কর্মসংস্থানের চাপ, জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, পরিবেশগত পরিবর্তন (বৃষ্টির ধরন, তাপমাত্রা), বিশাল বন উজাড় এবং ভূমিধস ইত্যাদি কারণেও হোস্ট সম্প্রদায়কে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকায় অস্থায়ী কর্মী হিসেবে বিপুলসংখ্যক বাইরের মানুষকে বাস করতে হচ্ছে। এদের জন্য আবাসন, আশ্রয় ও অন্যান্য দৈনন্দিন চাহিদা প্রয়োজন হচ্ছে। উদ্ভূত এসব সমস্যার নিরসনসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজার এলাকার অধিকতর উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে বেশকিছু উন্নয়ন কাজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বিভাগের ২টি জেলার ৬টি উপজেলায় আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও সেখানকার স্থানীয় জনগণের জীবমান উন্নত হবে, গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ কাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।