খাগড়াছড়িতে মহাসমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা: সেনাবাহিনীর টহলে হামলা ইউপিডিএফ সমর্থকদের

খাগড়াছড়িতে মহাসমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা: সেনাবাহিনীর টহলে হামলা ইউপিডিএফ সমর্থকদের

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ে অশান্তির বিষ টার্গেট সেনাবাহিনীমহাসমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা: সেনাবাহিনীর টহলে হামলা ইউপিডিএফ সমর্থকদের
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় গতকাল থেকে এক ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয় জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পরীক্ষার পরিবেশ ভেঙে পড়েছে, একই সঙ্গে মহাসমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা আগামীকাল (শনিবার) ভোর ৫টা থেকে রবিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে—যা জনজীবন ও আইনি কার্যক্রমে ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন।

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলা কলেজ-প্রশাসন ও পরীক্ষার্থীরা বলছেন, প্রথম পর্ব (সকাল ৯টা—দুপুর ১২টা) পরীক্ষায় মোট ১১০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়া দরকার ছিল; অপরপর্ব দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সরকারি কলেজ মাঠে সমাবেশ ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের কারণে পরীক্ষাভিত্তিক পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে, পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, সমাবেশ চলাকালে সেনাবাহিনীর একটি টহল যানবহরে লাঠি, পাথর নিক্ষেপ করে হামলা চালানোর ঘটনাও ঘটে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে স্লোগানদানে এবং উস্কানিমূলক আচরণে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। সূত্রের বরাতে দাবি করা হচ্ছে, এই হামলাকারীরা সাধারণ নাগরিক নয় — তাদের মধ্যে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের কর্মী ও সমর্থক রয়েছে।

সেনা ও স্থানীয় প্রশাসন হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর এ ধরনের আক্রমণ মহাজনহিত বিপরীত এবং তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। একটি অআনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তারা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

খাগড়াছড়িতে মহাসমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা: সেনাবাহিনীর টহলে হামলা ইউপিডিএফ সমর্থকদের

স্থানীয়দের অভিযোগ ও বিশ্লেষক পর্যবেক্ষণ

স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, আজকের মহাসমাবেশের আড়ালে কিছু উস্কানিমূলক ও সংগঠিত কর্মসূচি পরিকল্পিতভাবে চালানো হয়েছে — যার লক্ষ্য ছিল সাধারণ জনজীবন অচল করা ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ করে স্থানীয় পরিবেশ অস্থিতিশীল করা। স্থানীয় এক নিশ্চিত সূত্র বলেন, “সমাবেশ চলাকালে একাংশ উপস্থিত লোক নেতা-সমর্থকদের নেতৃত্বে বলপ্রয়োগে নেমে আসে; পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়।”

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এমন ধরনের নাশকতা অধিকাংশ সময় সুসংগঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটে। তারা বলছেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সিদ্ধান্তহীনতা বা সাংগঠনিক জটিলতা সন্ত্রাসী জোড়সহায়তাকে উসকে দিতে পারে। তাদের ভাষ্য, “সন্ত্রাস ও সশস্ত্র উস্কানিকে নির্মূল করতে যদি দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে সাধারণ মানুষই বারংবার ভুক্তভোগী হবে।”

স্থানীয় প্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও সেনা সূত্র জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সড়ক অবরোধের কোনো আইনি ছাড় নেই। স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছে।

জনমনে উদ্বেগ বৃদ্ধি — শিক্ষা ও অর্থনীতিতে প্রভাব

শিক্ষক ও ছাত্র-অভিভাবকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপে পড়েছে; পাশাপাশি সড়ক অবরোধ বাস্তবায়িত হলে জরুরি পরিষেবা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও তীব্র বিঘ্ন ঘটবে। ব্যবসায়ী ও পরিবহনশিল্পীরা সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা জানিয়েছেন।

দাবি ও অনুরোধ — “সেনাবাহীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ”

কয়েকটি স্থানীয় প্রচারমাধ্যমে এবং বক্তৃতায় দেখা গেছে, অভিযোগকারীরা সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন, যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মূল ভিত্তি নষ্ট করা যায়। এই দাবিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে দীর্ঘদিন ধরেই পার্বত্য এলাকায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়মিতভাবে ঘটছে এবং সাধারণ মানুষ নিত্যদিনের ভয়ে জীবনযাপন করছে।

শেষ কথা — শান্তি ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার আহ্বান

খাগড়াছড়ির বর্তমান পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ সবাই জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তারা বলেছেন, সব ধরনের সহিংসতা ইভেন্ট আনা নাগরিক ও প্রশাসনিক জীবনের জন্য বিপজ্জনক এবং এগুলো দমনের জন্য সংহত ও আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্থানীয় গণ্যমান্য ও নাগরিক-গোষ্ঠীগুলোও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি তুলেছেন।

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি জেলা সদরে এক পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে গণধর্ষনের ঘটনায় জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে আধাবেলা সড়ক অবরোধের পর আজ মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। এছাড়া এঘটনায় আগামীকাল শনিবার নতুন করে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক দেয় সংগঠনটি। আর এই সংগঠনের সাথে একাত্নকতা প্রকাশ করে ইউপিডিএফসহ এর সহযোগী সংগঠনগুলো।

অথচ, ঘটনার পরপরই গতকাল অভিযান পরিচালনা করে চয়ন শীল নামে অভিযুক্ত এক ধর্ষককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

(পাঠকবর্গকে জানানো যাচ্ছে, এই ঘটনাগুলো এখনও তদন্তাধীন; এজন্য সংবাদে প্রকাশিত প্রতিটি দায়-দাবি ও বক্তব্য—যা বর্তমানে থাকে—তাদের উৎস হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সংবাদ সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তী সংবাদ নিশ্চয়ই সংবাদে নজরে আনা হবে।)

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed