সেই সোনা মিয়া আর নেই, স্বপ্নই রয়ে গেলো নিজ ভূমিতে ফেরা - Southeast Asia Journal

সেই সোনা মিয়া আর নেই, স্বপ্নই রয়ে গেলো নিজ ভূমিতে ফেরা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়াস্থ সোনামিয়া টিলার ৮১২ বাঙালি পরিবারের দলপতি ও বাঙালি নেতা সোনা মিয়া (৮৫) আর নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল ১৭ জানুয়ারি বুকে ব্যাথা অনুভব করলে তাকে প্রথমে দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকগণ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে রেফার করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের অখন্ডতা রক্ষা ও এ অঞ্চলকে সারাদেশের মতো গতিশীল করতে তৎকালীন সরকার সমতল এলাকা থেকে বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের জন্য নিয়ে যায়। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৮১ সালে একদল বাঙালিদের’কে নেওয়া হয় খাগড়াছড়ির দীঘিনালায়, সেখানে একটি টিলায় গড়ে তাদের নতুন বসতি, সরকারও তখন পরিবার প্রতি ৫ একর করে তাদের খাস ভূমি প্রদান করে।

মুন্সীগঞ্জের নদী ভাঙনে ভিটে হারানো মৃত আইনুদ্দিন শেখের ছেলে সোনা মিয়ার নামেই ওই টিলার নামও নামকরণ করা হয় সোনা মিয়ার টিলা। সেই টিলায় একসময় সোনা মিয়া ও বাকিদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে সোনা মিয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যাু পরবর্তীতে সরকারিকরণ করা হয়।ু সেসময় ঐ টিলায় বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের দেখভাল ও নিয়ন্ত্রনের জন্য গঠিত বাঙালি দলপতি পরিষদের নেতাওু ছিলেন এই সোনামিয়া। পর্যায়ক্রমে তার হাত ধরেই সোনা মিয়া টিলা হয়ে উঠে একটি পরিপূর্ণ জনপদ।

১৯৮৬ সালে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহ নানা উৎপাতের ফলে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে থাকলে বড় ধরনের সহিংসতা এড়াতে দীঘিনালার বাবুছড়াস্থ সোনামিয়া টিলার সেই ৮১২টি বাঙালি পরিবারকে ওই টিলা থেকে গুচ্ছগ্রামে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ওই টিলায় ফেরত নেওয়ার আশ্বাসে গুচ্ছগ্রামের ছোট ছোট ঘরে ঠাঁই নেয় ৮১২ পরিবারের কয়েক হাজার বাঙালি। এর পর পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর পাহাড়িদের সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান ঘটলেও এই বাঙালিদের ৩৩ বছরেও আর ফেরা হয়নি সেই টিলায়। কিন্তু সেদিনের সেই সোনা মিয়া মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেদের ভূমিতে ফেরার স্বপ্ন থাকলেও তা অধরাই রয়ে গেলো সোনা মিয়ার।

জানা যায়, খাগড়াছড়ির ৮১টি গুচ্ছগ্রামে ২৬ হাজার বাঙালি পরিবারকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দীঘিনালার বাবুছড়া নতুনবাজার গুচ্ছগ্রাম সবচেয়ে বড়, সেখানে থাকে ৮১২টি পরিবার। পরিবারের এই সংখ্যার হিসাব ১৯৮১ সালের, এখন এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গুচ্ছগ্রামে প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১২ হাত দৈর্ঘ্য ও ১০ হাত প্রস্থের একেকটি ঘর। মা, বাবা, ছেলে ও ছেলের বউ, মেয়ে ও মেয়েজামাইসহ সবাইকে থাকতে হয় ওই একটি ঘরেই। গ্রামে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা নেই, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও খুব নাজুক। খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠছে শিশুরা।

তবে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বলেন, “কাজটি খুব সহজ নয়। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীসহ কয়েকটি পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আমরা (প্রশাসন) কাজ করে যাচ্ছি।”