গৌহাটি হাইকোর্টে অস্ত্র পাচার মামলা: জেএসএস সংশ্লিষ্ট ৪ আসামী পলাতক, খালাস প্রধান অভিযুক্ত

গৌহাটি হাইকোর্টে অস্ত্র পাচার মামলা: জেএসএস সংশ্লিষ্ট ৪ আসামী পলাতক, খালাস প্রধান অভিযুক্ত

গৌহাটি হাইকোর্টে অস্ত্র পাচার মামলা: জেএসএস সংশ্লিষ্ট ৪ আসামী পলাতক, খালাস প্রধান অভিযুক্ত
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতের মিজোরামে বাংলাদেশি সশস্ত্র গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক বড় অস্ত্র পাচার মামলায় গৌহাটি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ (বিচারপতি আর. ফুকন ও অন্যান্য) জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-এর দায়ের করা আপিল খারিজ করে প্রধান অভিযুক্ত রোহমিংলিয়ানা প্রকাশ হ্মিংটে (বা হ্মিংগা)-কে খালাস দিয়েছে।
তবে মামলার চার বাংলাদেশি আসামী—মনি ত্রিপুরি, রবি চাকমা, সবুজ চাকমা ও সি. লালনঘাকথাঙ্গা—জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

২০১৩ সালে মিজোরামের লেংপুই বিমানবন্দরের কাছে রোহমিংলিয়ানার খামারবাড়ি থেকে যৌথ অভিযানে মিজোরাম পুলিশ ও আসাম রাইফেলস উদ্ধার করে ৩১টি AK-47 রাইফেল, ১টি Ultimax 100 Mark-III রাইফেল, ১টি Browning Automatic Rifle, একাধিক ম্যাগাজিন ও ৮০৯ রাউন্ড গুলি।
এই বিপুল অস্ত্রভাণ্ডারটি মিয়ানমার থেকে এনে ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত ছিল বলে প্রমাণিত হয়।

NIA-এর তদন্তে উঠে আসে, জেএসএস ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে “সশস্ত্র কর্মকাণ্ড” পরিচালনা করে আসছে। এই কারণে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা NIA জেএসএস-কে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত সংগঠন” হিসেবে উল্লেখ করে।

২০১৮ সালে এনআইএ বিশেষ আদালত প্রধান আসামী রোহমিংলিয়ানার বিরুদ্ধে প্রমাণ অপর্যাপ্ত পেয়ে তাকে খালাস দেয়।
এরপর NIA আপিল করে, কিন্তু গৌহাটি হাইকোর্ট ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রায়ে জানায়—“অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অস্ত্রের সরাসরি দখল (possession) প্রমাণ করা যায়নি।”
ফলে আদালত NIA-এর আপিল খারিজ করে রোহমিংলিয়ানাকে পুনরায় খালাস দেয়।

তবে মামলার অন্য চার বাংলাদেশি আসামী—মনি ত্রিপুরি, সবুজ চাকমা, রবি চাকমা ও সি. লালনঘাকথাঙ্গা—এর বিরুদ্ধে মামলা এখনও বহাল আছে এবং তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি রয়েছে।

গৌহাটি হাইকোর্টের এই রায়ের ৬৯ পৃষ্ঠার কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে ইউপিডিএফ ও তাদের ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করে, “আদালত নাকি জেএসএস-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেছে।”

কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দাবি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। আদালত কেবল NIA-এর তদন্তে “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের” উল্লেখ গ্রহণ করেছে, কিন্তু কোনো পর্যায়ে জেএসএস-কে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করেনি।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও এমন কোনো ঘোষণা বা প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি, যা আইন অনুযায়ী অপরিহার্য।

অর্থাৎ, ইউপিডিএফের প্রচার মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত—পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান ক্ষমতা-সংগ্রাম ও অস্ত্র বাণিজ্য রাজনীতির অংশ হিসেবেই একে দেখা হচ্ছে।

২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি মিজোরামের মামিত জেলার সাইথাহ গ্রামে পুলিশ আবারও একটি বড় অস্ত্র চালান আটক করে। উদ্ধার করা হয় ৬টি AK-47 রাইফেল, ১৩টি ম্যাগাজিন এবং ১০,০৫০ রাউন্ড গুলি।

এই চালানটি ছিল মায়ানমারের চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (CNF) এবং বাংলাদেশের ইউপিডিএফ-এর মধ্যে অস্ত্র বাণিজ্যের অংশ।

পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে CNF-এর এক নেতা ও ইউপিডিএফ-সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি ছিলেন। মামলা পরে NIA-র কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং ২০২৫ সালের জুলাই মাসে চার্জশিট দায়ের করা হয়।

এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা এখনো অস্ত্র পাচার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর গোপন জোটের মূল ঘাঁটি।

ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা NIA এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসব গোষ্ঠীর অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক আশ্রয়-রসদ নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed