অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপনে বাধা দিয়ে ধর্মীয় আবরণে সন্ত্রাসের আস্তানা রক্ষা করল বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী
![]()
মোঃ সাইফুল ইসলাম
পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি আজ আবারও নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি এলাকায় একটি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপনে বাধা দেয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ, যেটি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন। ধর্মীয় আবরণে ‘বিহারের জায়গা দখলের অভিযোগ’ তুলে তারা সাধারণ পাহাড়িদের উসকে দেয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালায় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়। ফলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঝুঁকি তৈরি হয়।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, সেনাবাহিনী সংঘাত এড়াতে বর্মাছড়ি থেকে ওই অস্থায়ী পেট্রোল বেস অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একই সঙ্গে পুরো পার্বত্য অঞ্চলে আরও কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নেয়।
এ প্রথম নয়, ইউপিডিএফ অতীতেও তাদের সশস্ত্র তৎপরতাকে বৈধতার রঙ দিতে ধর্মীয় আবেগকে হাতিয়ার করেছে। এবারও একই কৌশল। বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের জায়গাটি সরকারি খাসজমি- এ তথ্য জেলা প্রশাসন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে। তবুও ইউপিডিএফের প্রপাগান্ডা মেশিন দাবি করে বসে, “আর্য কল্যাণ বনবিহারের জায়গা দখল করা হচ্ছে।”
এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সাধারণ পাহাড়িদের মাঠে নামানো হয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল তাদের অস্ত্র মজুদ ও সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণস্থল রক্ষা করার পরিকল্পনারই অংশ।
নিরাপত্তা সংস্থার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে; ভারত সীমান্ত হয়ে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাহাড়ে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে বর্মাছড়িমুখ পাড়া হয়ে এসব অস্ত্র স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছাচ্ছে। এখান থেকেই অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে সমতলের অপরাধচক্রের কাছে। এই চোরাচালান রোধে সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় বাধা।
তাই সেনাবাহিনীকে দুর্বল বা বিতর্কিত করা ইউপিডিএফের কৌশলগত লক্ষ্য। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে “স্বাধীন এলাকা” গড়ে তোলা।
বার্মাছড়িতে মিথ্যা অপপ্রচার: ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঢাকতে বিভ্রান্তির নাটক
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়নের রক্ষক হিসেবে কাজ করছে। দুর্গম এলাকায় সড়ক, স্কুল, চিকিৎসা কেন্দ্র, ব্রিজ; এসব উন্নয়নমূলক কাজের মূলে রয়েছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধান। তাদের এই দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতিই সন্ত্রাসীদের জন্য ‘অস্বস্তির কারণ’।
বর্মাছড়ি ঘটনাতেও সেনাবাহিনী অসীম ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছে, যেখানে তারা চাইলে বলপ্রয়োগের সুযোগ ছিল। বরং সংঘাত এড়াতে তারা ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মানবিকতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের দৃষ্টান্ত।
ইউপিডিএফের এই নতুন ‘ধর্মীয় কার্ড’ আসলে পাহাড়কে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেওয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র। তারা জানে, একটি দাঙ্গা শুরু হলে সরকার ও সেনাবাহিনীর মনোযোগ সরে যাবে উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান থেকে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশাসন ও মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যা প্রচারণা দমন ও গুজব প্রতিরোধে কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
আমাদের মনে রাখা উচিত, পাহাড়ে শান্তি রক্ষা কেবল সামরিক বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতারও অংশ। তাই প্রয়োজন একটি সমন্বিত কৌশল, যেখানে সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, সিভিল প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃত্ব একই প্ল্যাটফর্মে কাজ করবে। একই সঙ্গে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো, অস্ত্র চোরাচালান রোধ ও অনলাইন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
শেষে, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। পার্বত্য চট্টগ্রামও এই শান্তির অঙ্গ। ইউপিডিএফ বা তাদের মদদপুষ্ট কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কখনোই এই অখণ্ডতা নষ্ট করতে পারবে না- যদি রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী ও নাগরিক সমাজ একত্র থাকে। বর্মাছড়ির ঘটনাটি তাই শুধু একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপন ইস্যু নয়, এটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্ন। এই মুহূর্তে শান্তি ও নিরাপত্তার নামে কোনো বিভ্রান্তি নয়, বরং দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপই হতে পারে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ।
লেখক: সাংবাদিক, পার্বত্য বিষয়ক লেখক।