খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবঃ গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে নেয়া হচ্ছেনা নতুন সদস্য, জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন - Southeast Asia Journal

খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবঃ গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে নেয়া হচ্ছেনা নতুন সদস্য, জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৮৬ সালে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ (তৎকালীন স্থানীয় সরকার পরিষদ), পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও নিরাপত্তাবাহিনীর সহায়তায় ও অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরে কর্মরত সাংবাদিকদের পেশাগত কাজের মূল ঠিকানা খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব। অত্যন্ত সুনামের সাথে ও দক্ষ নেতৃত্বে মাধ্যমে উক্ত প্রেসক্লাবটি দীর্ঘসময় পরিচালিত হয়ে আসলেও সম্প্রতি প্রেসক্লাবের বর্তমান নেতৃত্ব ও গঠনতন্ত্র নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে জেলার সাংবাদিক মহলে। বর্তমান কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথাকথিত গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে জেলার প্রকৃত সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবে অন্তর্ভুক্তি না করা ও বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে হুমকি-ধামকিসহ নানা অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১০ই জানুয়ারি ও ২২ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বরাবরে এর সুরাহা ও বিএনপি-জামাত মদদপুষ্ট সাংবাদিকদের দিয়ে প্রেসক্লাব পরিচালনার অভিযোগ এনে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুইটি পত্র দেয়া হয়েছে প্রেসক্লাবে সদস্য প্রার্থী সাংবাদিকদের পক্ষ হতে। ঐ আবেদন পত্রের অনুলিপি রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বরাবরে পাঠানো ঐ আবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের পেশাগত কাজের মূল ঠিকানা হলেও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের কতিপয় সদস্যের স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করার মানসিকতার কারণে মূল ধারার অনেক সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে বলা হয়, খাগড়াছড়ি প্রেসেক্লাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৯জন হলেও অর্ধেকের বেশী সদস্য বর্তমানে এই পেশায় সক্রিয় নেই। রাজনীতি, ব্যবসা বা চাকুরির সুবাদে অনেকেই জেলার বাহিরে বসবাস করেন। মূলত সাবেক সভাপতি চৌধুরী আতাউর রহমান রানা, বর্তমান প্রেসক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ, আবু দাউদসহ কয়েকজন প্রেসক্লাবটিকে নিজেদের কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে জেলায় কর্মরত অন্যান্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে তাদের পেশাকে চালিয়ে নিতে পারছেন না। চৌধুরী আতাউর রহমান রানাসহ বর্তমান কমিটির অনুগতরা ছাড়া আর কাউকে প্রেসক্লাবে সদস্য করা হচ্ছেনা। অথচ চৌধুরী আতাউর রহমান রানার আঞ্চলিক সংবাদপত্র অরণ্যবার্তার পরিচয় দিয়ে তারই অনুগত প্রেসক্লাবের অধিকাংশ সদস্য প্রেসক্লাবে সদস্যপদ লাভ করেছেন। অন্যরা যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও প্রেসক্লাবে সদস্য হতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করা হয় আবেদনে।

ছবি-১: গত ২২ জানুয়ারি প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বঞ্চিত সাংবাদিকদের পক্ষ হতে সুরাহা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদনের কপি।

এছাড়া আবেদনে অভিযোগ করে বলা হয়, চৌধুরী আতাউর রহমান রানার অরণ্য বার্তা ও তার অনুগত সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবে সদস্যপদ দেয়ার পাশাপাশি প্রেসক্লাবের বর্তমান নেতৃত্ব বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে তাদের মনোনীত ব্যক্তি ও সংবাদপত্র ব্যতীত অন্যদের সরকারী-বেসরকারী বিজ্ঞাপন না দেওয়ার জন্য একপ্রকার হুমকি প্রদান করায় সংবাদ প্রকাশে ও বিজ্ঞাপন না পাওয়ায় অনেকটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রেসক্লাবের বাহিরের মূল ধারার সাংবাদিকরা।

অন্য একটি আবেদনে সদস্যপদ বঞ্চিত সাংবাদিকরা দাবি করেন, বর্তমান প্রেসক্লাবের কমিটি সরকার বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি ও বিএনপি-জামায়াত মদতপুষ্ট সাংবাদিকদের দিয়ে গঠিত ও পরিচালিত হওয়ায় সরকারের উন্নয়নের পক্ষের ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাংবাদিকরা তাদের কারণে বিভিন্ন ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা একচেটিয়া সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে গেলেও বঞ্চিতই রয়ে যাচ্ছেন জেলার প্রায় সকল সাংবাদিক। এতে বলা হয়, যাদের সাংবাদিকতার বয়স অন্তত ১০-১৫ বছর হয়েছে তাদের অনেকেও প্রেসক্লাবে সদস্য হতে পারেনি। অন্যদিকে আতাউর রহমান রানার অনুসারী নতুন ধারার অনলাইন সাংবাদিক, অপ-সাংবাদিকরাও প্রেসক্লাবের সদস্য বনে গেছেন। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রেসক্লাবে বর্তমানে ১৯ জনের নামীয় কমিটি থাকলেও এর মধ্যে আজিম উল হক, দিলিপ চৌধুরী ও নাজিম উদ্দিন বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশায় নেই। এছাড়া আল ফারুক আযম ও ওমর ফারুক শামীম অন্তত ১০ বছর ধরে জেলার বাহিরে আছেন। বাকিরা বছরের পর বছর সিন্ডিকেট করে নিজেদের পক্ষের সাংবাদিকদের দিয়ে মন মতো করে কমিটি গঠন করে প্রেসক্লাবটি পরিচালনা করছে বলেও জানানো হয় আবেদন পত্রে।

উল্লেখিত তথ্য মতে, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি জয়ন্তি দেওয়ান, যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি শাহরিয়ার ইউনুস, সবুজ পাতার দেশ পত্রিকার সম্পাদক জুলহাস সুজন, সাপ্তাহিক আলোকিত পাহাড়ের সম্পাদক মোহাম্মদ সাজু, ডেইলি স্টার ও ডিবিসি টিভির জেলা প্রতিনিধি সৈকত দেওয়ান, দৈনিক যায়যায় দিনের জেলা প্রতিনিধি রিপন সরকার, একাত্তর টিভির রুপায়ন চাকমা, গিরিদর্পন পত্রিকার আবু তৈয়ব, যুগান্তর, আজাদী ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি সমির মল্লিক, চ্যানেল ২৪ এর জেলা প্রতিনিধি নুরুচ্ছাফা মানিক, আমাদের সময়ের রফিকুল ইসলাম, দেশ টিভির জেলা প্রতিনিধি মংসাপ্রু মারমা, চট্টগ্রাম মঞ্চের শংকর চৌধুরী, মানবজমিনের আব্দুর রউফসহ অসংখ্য সাংবাদিক জেলাব্যাপী নিরলস পরিশ্রম করে সরকারের নানা উন্নয়ন, সম্ভাবনা ও পাহাড়ের সমস্যা তুলে ধরে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করে আসলেও দীর্ঘদিন যাবৎ তারা প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারেন নি।

আবেদনের সূত্র মতে, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় খাগড়াছড়ির সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূইয়ার সহযোগীতায় জেলার কিছু বিএনপি-জামায়াত পন্থি সাংবাদিক প্রেসক্লাবকে কব্জা করে অদ্যাবদি পরিচালনা করে আসছে। সেসময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাংবাদিকদের বিভ্ন্নি হামলা-মামলা দিয়ে হয়রাণীও করা হয়। এছাড়া তৎকালীন শান্তি চুক্তির সময় এ চুক্তিকে কালো চুক্তি আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও তৎকালীন সরকার বিরোধী সংবাদ প্রকাশ করা সাংবাদিকরা আজো এ প্রেসক্লাবের শীর্ষ পদে বিদ্যমান। এদিকে বিএনপি নেতা ওয়াদুদ ভূইয়ার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত চৌধুরী আতাউর রহমান রানা তার সম্পাদিত সংবাদ পত্র অরণ্য বার্তা খাগড়াছড়ি হতে নিয়মিত প্রকাশের কথা থাকলেও তা ঢাকা থেকে অনিয়মিত ভাবে প্রকাশ করছেন এবং বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের গোপন টেন্ডার প্রকাশের মাধ্যমে অন্যান্য মূল ধারার স্থানীয় সংবাদপত্রকে কোনঠাসা করার অপচেষ্টা করছেন বলেও আবেদনে অভিযোগ করা হয়।

এছাড়া জেলা প্রশাসক বরাবরে নানা অভিযোগ সম্বলিত অভিযোগপত্র গুলো দাখিলের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবকে দূর্ণীতিমুক্ত স্বাধীন সাংবাদিকদের ঠিকানা গড়ে তুলতে এবং জেলায় কর্মরত মূলধারার স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবে সদস্য করার বিষয়ে সুরাহা চাওয়া হয়েছে সদস্যপদ বঞ্চিত সাংবাদিকদের পক্ষ হতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাগড়াছড়ির একাধিক সংবাদকর্মী জানান, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি চৌধুরী আতাউর রহমান রানার নির্দেশেই এখনো খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব পরিচালিত হচ্ছে। তার মতের বাহিরের কোন সাংবাদিকদের তিনি প্রেসক্লাবে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্তি দিতে বর্তমান সভাপতি-সম্পাদকের উপর অলিখিত এক হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। তার কথার বাহিরে গিয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি-সম্পাদকের কিছুই করার নেই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়ুয়ার মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তার ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ অভিযোগের অনুলিপি পাওয়া বা ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রেসক্লাবে সদস্য নেয়া হচ্ছেনা এটি সত্য নয়, প্রেসক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৯জন করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে আরো ২জনকে সদস্য করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, বান্দরবান প্রেসক্লাবের সদস্য সংখ্যা মাত্র ১০ জন, রাঙ্গামাটিতে গত ৩০ বছরেও কোন সাংবাদিককে নতুন করে প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত মদদপুষ্ট বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না, বা কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে তাও তার বোধগম্য নয়। তবে সদস্য হওয়ার জন্য কেউ প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র মোতাবেক আবেদন করলে ও কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যের সম্মতি থাকলে যে কেউ প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারবেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাতের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। এছাড়া তার কার্যালয়ে গিয়েও তার সাথে সাক্ষাত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তার মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।