ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিন্দুধর্মের প্রতি আনুগত্য আর গোপন নেই, কেন এমন সমালোচনা হচ্ছে?
![]()
নিউজ ডেস্ক
ভারতের সেনাবাহিনী থেকে ২০২১ সালে লেফটেন্যান্ট স্যামুয়েল কমলেসানকে বরখাস্ত করা হয়। কারণ, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী এই সেনা কর্মকর্তা তাঁর রেজিমেন্টের মন্দির ও গুরুদুয়ারার পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে তিনি আইনের আশ্রয় নেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে পুনর্বহাল করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এতে ধর্মের দিক থেকে বৈচিত্র্যময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভেতরকার সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিভাজনরেখাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ধর্ম নিয়ে বিভাজন পুরোনো। কিন্তু এত দিন তা কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। এতকাল তা নিয়ে কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা হতো। সংবেদনশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিকতার দোহাই দিয়ে তা চেপে রাখা হতো।
কমলেসানকে বরখাস্তের আদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এত বছরের স্পর্শকাতর বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এটি কেবল কোনো একজন সেনা কর্মকর্তাকে ধর্মীয় কারণে বরখাস্তের ঘটনা নয়, বরং সেনাবাহিনীর একটি গভীর সমস্যার উন্মোচন। এটা পুরো বাহিনীকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে এবং অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের সাবধানী পর্যবেক্ষণ দিতে বাধ্য করেছে।
বিষয়টি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলরা সম্প্রতি সংবাদপত্রে মতামত লিখেছেন। এসব লেখালেখিতে তাঁরা বলতে চেষ্টা করেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ধীরে ধীরে ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ গড়ে উঠছে। বাহিনীতে দেশপ্রেম, বিশ্বাসযোগ্যতা ও জাতীয় সংহতিকে দেশের প্রধান ধর্মের দৃশ্যমান অনুসরণের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এ পরিবর্তন ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার প্রধান যে নীতি, সেটার একেবারে উল্টো।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়োগব্যবস্থা কয়েক শতাব্দীর ঐতিহ্য থেকে গড়ে উঠেছে। সেনাবাহিনীকে দেশটির সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে দৃশ্যমান ও সমাজের সঙ্গে সবচেয়ে গভীরভাবে যুক্ত বাহিনী হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীই গত এক দশকে বিমানবাহিনী বা নৌবাহিনীর তুলনায় রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।
বিস্তৃত সামাজিক ভিত্তিতে ফাটল
ভারতের বিমান ও নৌবাহিনীর নিয়োগব্যবস্থা মূলত প্রযুক্তি ও দক্ষতাভিত্তিক। এই দুই বাহিনীতে প্রযুক্তিতে দক্ষ লোকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সামাজিক ভিত্তি অনেক বেশি বিস্তৃত। অঞ্চল, জাতি ও সম্প্রদায়গত সম্পর্ক এই বাহিনীর গভীরে প্রোথিত। এ প্রথা উনিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। এই বিস্তৃতি সেনাবাহিনীকে সমাজ বা রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল করে তুলেছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি বিষয়, তা হলো জনসম্পৃক্ততা। সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী অন্য দুই বাহিনীর তুলনায় বেশি কাজ করে। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিদ্রোহ দমন, দুর্যোগে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা এবং অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হয়।
এসব কিছুর কারণে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সামাজিক চাপের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন ও প্রযুক্তিনির্ভর বিমান ও নৌবাহিনীর ওপর এমন কোনো চাপ নেই।
ভারতের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সামাজিক ভিত্তি অনেক বেশি বিস্তৃত। অঞ্চল, জাতি ও সম্প্রদায়গত সম্পর্ক এই বাহিনীর গভীরে প্রোথিত। এ প্রথা উনিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে।
জনসম্মুখে ব্যাপক উপস্থিতি সেনাবাহিনীকে আরও বেশি রাজনৈতিক প্রভাব–বলয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন তিনটি সরকারের টানা শাসন এ বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি নাজুক করে তুলেছে। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রের বিন্যাস (ফরমেশন), সামরিক অভিযান, মহড়া ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের নামকরণে ধর্মীয় প্রতীক ও হিন্দুপুরাণ যুক্ত হতে শুরু করেছে।
দেব–দেবী, পৌরাণিক মহাকাব্য ও প্রতীকী যোদ্ধাদের আলোচনা একসময় রেজিমেন্টের অনানুষ্ঠানিক কাহিনি ও ইউনিটের লঙ্গরখানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন এসব বিষয়কে সেনাবাহিনীর দাপ্তরিক নামকরণ ও নীতিমালায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতীক ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে এলেও এখন তা বদলে যেতে শুরু করেছে। ক্রমশ তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মের প্রতীককে আলিঙ্গন করতে শুরু করেছে, যা একসময় কল্পনাও করা যেত না।
ভাবাদর্শের ধুয়ো
এসব পরিবর্তন বিচ্ছিন্নভাবে ঘটছে, তা কিন্তু নয়। সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব একটি বড় ভাবাদর্শের জায়গা থেকে এ পরিবর্তনের রূপরেখা হাজির করছেন এবং সেটার ন্যায্যতা জোরদার করছেন। তাঁরা এটাকে প্রায় সময় ‘উপনিবেশবিরোধী’ হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করেন।
তবে বাস্তবতা হলো নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকের সেনা সদর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশনা অনুসরণ করছেন। এই রাজনীতিবিদেরা সশস্ত্র বাহিনীকে ‘আত্মনির্ভর’ বা স্বদেশি করাটাকে ‘সভ্যতার মিশন’ হিসেবে উপস্থাপন করেন।
জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সেনাবাহিনী থেকে ‘উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বিদেশি প্রথা’ দূর করাকে লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করেছেন এবং তা অর্জনের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এসব প্রথাকে তাঁরা এমন এক কাল্পনিক সাংস্কৃতিক বিশুদ্ধতা দিয়ে প্রতিস্থাপন করছেন, যা হয়তো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থেকে নেওয়া হয়েছে, অথবা গৌরবময় অতীত থেকে আবিষ্কার করা হয়েছে।
দেব-দেবী, পৌরাণিক মহাকাব্য ও প্রতীকী যোদ্ধাদের আলোচনা একসময় রেজিমেন্টের অনানুষ্ঠানিক কাহিনি এবং ইউনিটের লঙ্গরখানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
‘প্রজেক্ট উদ্ভব’
উদাহরণ হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০২৩ সালের শেষ দিকের ‘প্রজেক্ট উদ্ভব’-এর কথা বলা যায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে গ্রহণ করা প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল—‘প্রাচীন জ্ঞানকে আধুনিক সামরিক অনুশীলনের সঙ্গে সংযুক্ত করা’, যাতে আধুনিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি অনন্য ও সমন্বিত পদ্ধতি তৈরি করা যায়।
সেনা ও থিঙ্কট্যাংক দ্য ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউশন অব ইন্ডিয়া যৌথভাবে ‘প্রজেক্ট উদ্ভব’ চালু করেছে। তবে তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পের লক্ষ্য হলো প্রাচীন জ্ঞান আধুনিক সময়েও কীভাবে প্রাসঙ্গিক ও প্রযোজ্য হতে পারে, ভারতের পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতা-ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে তা উপস্থাপন করা। সেমিনার, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ—পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে এসব কাজ করা হবে।
‘প্রজেক্ট উদ্ভব’ প্রাচীন ভারতের কৌশলগত ও দার্শনিক ভাবনাকে সমসাময়িক সামরিক চিন্তাধারার সঙ্গে মিলিয়ে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছে। এ জন্য সেনা কর্মকর্তাদের চিরায়ত (ক্ল্যাসিক্যাল) গ্রন্থ পাঠ এবং ঐতিহাসিক নানা প্রথা খতিয়ে দেখতে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যাতে প্রাচীন ভারতের কৌশলগত ও দার্শনিক ভাবনাকে আধুনিক নীতি ও কৌশলের সঙ্গে পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
চূড়ান্ত বিচারে সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা ধর্মীয় বা সংস্কৃতির প্রদর্শনীর ওপর নির্ভর করে না। বরং তা সেবাদান, দক্ষতা এবং দেশের প্রতি আনুগত্যের ওপর নির্ভরশীল।
ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের যেসব চিরায়ত পাঠের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে চাণক্যের অর্থশাস্ত্র, মৌর্য সাম্রাজ্য-পরবর্তী সময়ের প্রাচীন হিন্দুনীতিশাস্ত্র ‘কামান্দক’ (নীতিসার) এবং তামিল সাধু-কবি তিরুভল্লুভারের (তিরুক্কুরাল) রচনাবলি অন্যতম। ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ এসব গ্রন্থকে ‘আধুনিক সামরিক নৈতিকতা, সঠিক যুদ্ধনীতি ও জেনেভা কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে ঘোষণা করেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রজেক্ট উদ্ভবকে ‘দূরদর্শী সেনা উদ্যোগ’ বলে ঘোষণা করেছে ভারত সরকারের প্রকাশনা বিভাগ প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো। ‘কৌশলগত চিন্তাভাবনা, রাষ্ট্রনীতি ও যুদ্ধকৌশল’ উন্নত করাকে এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা বিভাগ ও সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, একুশ শতকের পারমাণবিক যুগেও ‘প্রজেক্ট উদ্ভব’ সামরিক বিষয়গুলো গভীরভাবে বোঝাতে এবং পাঠ্যক্রম সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করতে পারে।

সেনাপ্রধানের মন্দিরে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক
ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কখনো একা, কখনোবা রাজনীতিবিদের সঙ্গে মন্দিরে গেছেন। গেরুয়া পোশাক পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে তিনি মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেছেন।
রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ সেনাবাহিনীর প্রধানের এমন সফর নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। বিজেপি তা ব্যক্তি বিশেষের ধর্ম পালনের অধিকার বলে সমর্থনের চেষ্টা করলেও বিশেষজ্ঞরা সেনাপ্রধানের এ আচরণ নিয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুদা ২ ডিসেম্বর দ্য ট্রিবিউনে লিখেছেন, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেন। এসব কার্যক্রমের ছবি সরকারিভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের প্রয়োজন না থাকলেও সম্প্রতি এ ধরনের প্রবণতা বেড়ে চলছে।
জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেন। এসব কার্যক্রমের ছবি সরকারিভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের প্রয়োজন না থাকলেও সম্প্রতি এ ধরনের প্রবণতা বাড়ছে।
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুদা
এমন এক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গত মে মাসে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর সামরিক ইউনিফর্মে আধ্যাত্মিক নেতা জগদগুরু রামভদ্রাচার্যের আশ্রমে যান সেনাপ্রধান দ্বিবেদী। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের চিত্রকূটের আশ্রমটি দ্বিবেদীর জন্মস্থান রেওয়া থেকে ১৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সাক্ষাৎকারটি জনসমক্ষে প্রচারিত হওয়ার পর সামরিক ইউনিফর্মে সেনাপ্রধানের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সফর নিয়ে সমালোচনা নতুন করে শুরু হয়।
সাক্ষাৎকারের পর ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) রামভদ্রাচার্য বলেন, ‘আমি সেনাপ্রধানকে রাম–মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছি।’ তাঁর ভাষায়, ‘সেই একই মন্ত্র, যা হনুমান লঙ্কাজয়ের আগে সীতার কাছ থেকে পেয়েছিলেন।’
‘আমি সেনাপ্রধানকে রাম–মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছি। সেই একই মন্ত্র, যা হনুমান লঙ্কাজয়ের আগে সীতার কাছ থেকে পেয়েছিলেন।’
আধ্যাত্মিক নেতা জগদগুরু রামভদ্রাচার্য
এই গুরু আরও বলেন, ‘যখন দক্ষিণার প্রসঙ্গ এল, তখন আমি তাঁকে (সেনাপ্রধান) বললাম, আমি এমন দক্ষিণা চাই, যা কোনো শিক্ষক কখনো চাননি। আমি বললাম, আমি আমার দক্ষিণা হিসেবে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর চাই। সেনাপ্রধান আমার অনুরোধ গ্রহণ করেন এবং জানান, ভারত পাকিস্তানকে “উপযুক্ত জবাব” দিতে প্রস্তুত।’
এক দিকে সেনাপ্রধানের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাসের এমন প্রদর্শনী এবং অন্যদিকে লেফটেন্যান্ট কমলেশনের ঘটনা সেনাবাহিনীতে প্রতিষ্ঠানগত উত্তেজনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
সুপ্রিম কোর্ট কমলেশনকে পুনর্বহাল করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে এই আদেশ ততক্ষণ পর্যন্ত তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজে তার পেশাদারিকে বাহিনীর কেন্দ্রে স্থাপন করতে পারছে; সেনাসদস্য ও কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা থেকে আলাদা করতে পারছে।
এটা করতে না পারা পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ কার্যকর কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না, বরং তা প্রতীকীই থেকে যাবে। চূড়ান্ত বিচারে সেনাবাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা ধর্মীয় বা সংস্কৃতির প্রদর্শনীর ওপর নির্ভর করে না। বরং তা সেবাদান, দক্ষতা ও দেশের প্রতি আনুগত্যের ওপর নির্ভরশীল।
-প্রথম আলো।
