থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বিস্ফোরণ, অনলাইন প্রতারণা কেন্দ্র নিয়ে সংঘাত
![]()
নিউজ ডেস্ক
থাইল্যান্ড–মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মোয়েই নদীর তীরে বিকেলের শান্ত পরিবেশ হঠাৎ তিনটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভেঙে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সীমান্তের ওপার থেকে ধোঁয়ার মেঘ দেখা যায়। প্রায় পাঁচ বছর আগে সামরিক অভ্যুত্থানের পর যে সংঘাত, তা আবারও সীমান্তে ফিরে এসেছে, এবার কারণ অনলাইন প্রতারণা কিংবা স্ক্যাম সিন্ডিকেট।
গত দুই বছরে মিয়ানমারের কারেন স্টেটে চীনা অপরাধচক্র পরিচালিত বহু অনলাইন প্রতারণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুন ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা প্রতারণা ব্যবসা ‘মূলসহ উপড়ে ফেলতে’ কাজ শুরু করেছে। তবে তাদের ওপর দীর্ঘদিনের অভিযোগ—তারা এ ব্যবসাকে প্রশ্রয় দিয়েছে এবং বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে স্থানীয় মিলিশিয়া ও চীনা সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করে।
এই বছরের শুরুতে বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ হারানোয় সেনাবাহিনী নতুন করে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। রাশিয়া ও চীনের সরবরাহ করা ড্রোনসহ নতুন সরঞ্জাম ও নবনিযুক্ত সৈন্য দিয়ে কেএনইউ (কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন)-এর বিরুদ্ধে হামলা চালায়। বহু এলাকা পুনর্দখলের পাশাপাশি অক্টোবরের শেষে তারা আক্রমণ চালায় কারেন স্টেটের সবচেয়ে কুখ্যাত প্রতারণা কেন্দ্র ‘কেকে পার্ক’-এ। হাজারো বিদেশিকে বাধ্য করে অনলাইন প্রতারণা করানো হতো এখানে।
সেনাবাহিনী মোবাইল, ল্যাপটপ, স্যাটেলাইট ডিশ বাজেয়াপ্তের ভিডিও ছড়িয়ে দেয় এবং বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভবন ধ্বংস শুরু করে। বহু কর্মী নদী পার হয়ে থাইল্যান্ডে পালায়। তবে পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া হয়নি; পার্কের বহু ভবন অক্ষত রয়েছে, ছাদে রয়েছে স্টারলিংক ডিশ—যা ইঙ্গিত দেয় স্ক্যামের কাজ এখনো চলতে পারে। পাশাপাশি অঞ্চলে আরও ডজনখানেক কম্পাউন্ড সক্রিয় রয়েছে।
এদিকে কেএনইউ হঠাৎ দখলে নেয় মিনলেটপান এলাকার দুটি নতুন স্ক্যাম সেন্টার—শুন্দা ও বাওইলি। এ অঞ্চল ডিকেবিএ নামে মিলিশিয়া গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে, যারা সেনাবাহিনীর মিত্র। কেএনইউ কমান্ডাররা বলেন, তারা সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক আইনশৃঙ্খলা সংস্থাকে এই কম্পাউন্ড দেখাতে চেয়েছিলেন যাতে ‘প্রতারণার প্রকৃতি বিশ্ব জানতে পারে’—কিন্তু আন্তর্জাতিক সাড়া খুব কম মেলে। এরপর সেনাবাহিনী এলাকাটিতে গোলাবর্ষণ শুরু করে।
হাজারো বিদেশি স্ক্যাম কর্মী ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তজুড়ে; অনেকে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিলেও প্রায় এক হাজার চীনা নাগরিক দেশে ফেরার ভয়ে কম্পাউন্ড ছাড়তে চায়নি। সীমান্তে নদীর ধারে শত শত মানুষ এখনো সাময়িক তাঁবুতে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে আছে গোলার শব্দের মধ্যে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার মূল কারণ, মিয়ানমার সেনা সরকার চলতি মাসে যে নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে। দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ, বিরোধীদলীয় অনীহা ও আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রহণযোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক সরকার মরিয়া হয়ে নিজেদের ভাবমূর্তি শুদ্ধ করার চেষ্টা করছে—চীনকেও সন্তুষ্ট করতে চাইছে, কারণ চীনা নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি প্রতারণা ও মানবপাচারের শিকার।
তবে বাস্তবতা হলো—কেকে পার্ক কিংবা শ্বে কক্কোতে ভবন ভাঙলেও প্রতারণা শিল্প পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। সীমান্তের অন্য অংশে—যেমন ওয়ালে ও পায়াথোনজু—নতুন করে স্ক্যাম কম্পাউন্ড গড়ে উঠছে। তার উপর ছাদের স্টারলিংক সরঞ্জাম, টাওয়ার, কড়া নিরাপত্তা এবং নিবিড় কার্যক্রম ইঙ্গিত দেয় প্রতারণা সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়।
অর্থাৎ জাঁকজমকপূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞের আড়ালে মিয়ানমারের দুর্ধর্ষ অনলাইন প্রতারণা শিল্প এখনো বহাল তবিয়তেই চলছে—আর এর আঁচ পড়ছে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।