ফাঁকা খাগড়াছড়ি: মাঠে ম্যাজিষ্ট্রেট-সেনাবাহিনী ও পুলিশ, অব্যাহত জনসচেতনতা মূলক কর্মকান্ড
![]()
নিউজ ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধ, জনসচেতনতা সৃষ্টি, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও এর সংক্রমন এড়াতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার অংশ হিসেবে পুরোপুরি ফাঁকা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা শহর। বিভিন্ন উপজেলা ও গুরুত্বপূর্ন স্থানে টহল অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা, সাথে রয়েছে ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের অভিযান। এর পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে ঘর হতে বের না হবার নির্দেশনা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রং দিয়ে ফার্মেসী ও মুদি দোকানে বৃত্ত অঙ্কনসহ জীবানুনাশক পানি স্প্রে করেছে সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা।
সকাল থেকেই (২৮ মার্চ) প্রবেশ মুখে ৬ষ্ঠ দিনের মতো নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী যুবকরা। জেলা সদরে প্রবেশ করা ব্যক্তি বা গাড়ি স্প্রে, লিফলেট বিতরণ ও মাস্ক বিতরণ করছে তারা। পাশাপাশি জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের পাশাপাশি দেখা গেছে সেনাবাহিনীর টহল।

জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে জীবানুনাশক স্প্রে ও লিফলেট বিতরণ করেছে যুব রেড ক্রিসেন্ট ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা। খাগড়াছড়ি সদরে রেড ক্রিসেন্ট ভবন থেকে চলে জীবানু নাশক স্প্রে ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, খাগড়াছড়ি ইউনিটের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর নেতৃত্বে চলছে এই সচেতনতামূলক কার্যক্রম। কার্যক্রম শেষে করোনা প্রতিরোধে কাজ করতে যুব রেড ক্রিসেন্ট খাগড়াছড়ি ব্রাঞ্চের নয়টি উপজেলা ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য যুব প্রধানদের মাঝে মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান, লিফলেট বিতরণ করা হয়।
এসময় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, খাগড়াছড়ি ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার, নির্বাহী সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন, মোঃ শহিদুল ইসলাম, ইউনিট অফিসার আবদুল গণি মজুমদার, সাবেক যুব প্রধান রবিউল ইসলাম, যুব প্রধান হাফসা বেগমসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

করোনা প্রতিরোধে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে আজও অব্যাহত রয়েছে সেনাবাহিনীর জনসচেতনামূলক কার্যক্রম। সকাল থেকেই উপজেলা সদরের বিভিন্ন ফার্মেসীতে ঔষধ ক্রয় করতে আসা নাগরিকদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রং দিয়ে বৃত্ত এঁকে দিতে দেখা গেছে সেনা সদস্যদের। পাশাপাশি উপজেলার পুজগাং এলাকায় মাইকিং ও জীবানুনাশক স্প্রে করছে সেনাবাহিনী। এছাড়াও করোনা প্রতিরোধে উপজেলার গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোতে বন্ধ রয়েছে জনসমাগম। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে উপজেলার বিভিন্ন রোগীদের সেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পানছড়ির এক যুবক। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগী বা তার পরিবারের কেউ শারীরিক অসুস্থতা রোধ করলে ফোন দিলেই সম্পুর্ন বিনা খরচে মিলবে সিএনজি সেবা। তিনি জানান, চব্বিশ ঘন্টাই ০১৫১৬১৯৫৫০৩ নাম্বারে কল করলে ২৭ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পাবে এ সেবা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে সিভিল প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন ও থানার সমন্বয়ে সেনা ও পুলিশের যৌথ টহল অব্যাহত রয়েছে। সকাল থেকেই উপজেলার বোয়ালখালী, বারাদম, বাবুছড়া, জারুলছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনী কর্তৃক মাইকিং, লিফলেট বিতরন, রাস্তায় জীবানুনাশক পানির স্প্রে সহ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা সদরে অব্যাহত রয়েছে ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম।
পাশাপাশি উপজেলা প্রসাশন এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ওষুধের দোকান এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দোকানে দূরত্ব বজায় রাখার চিহ্ন অঙ্কন করা হয়েছে। উপজেলার বোয়ালখালী বাজার কবাখালী বাজার, মেরুং বাজার, বাবুছড়া বাজারের ওষুধের দোকান এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দোকানে দূরত্ব বজায় রাখার এসব চিহ্ন আঁকা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাশেম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ এবং দীঘিনালা জোনের ক্যাপ্টেন মোঃ সাকিব হোসেন।

জেলার প্রবেশমুখ রামগড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার অংশ হিসেবে অব্যাহত রয়েছে সেনা ও পুলিশের যৌথ টহল। পাশাপাশি বাজারে এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালতের বিভিন্ন অভিযানও চলছে বলে জানা যায়। সকাল থেকেই উপজেলার জালিয়াপাড়া থেকে পাতাছড়া, নাকাপা, কমপাড়া, কালাডেবা, সিনেমা হল বাজার, রামগড় বাজার, সোনাইপুল, খাগড়াবিলে টহল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
অভিযানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদোজা, সেনাবাহিনীর গুইমারা সাবজোন অধিনায়ক মেজর মোঃ জোনায়েদ বিন কবির, রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান অংশ নেন।

করোনা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসী ও মুদি দোকানের সামনে দূরত্ব বজায় রেখে চিহ্ন অঙ্কন করেছে যুব রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা। পাশাপাশি অব্যাহত রয়েছে সেনা ও পুলিশি টহলও।
এদিকে গত বুধবার (২৫শে মার্চ) খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যাওয়া রোগী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. নুপুর কান্তি দাশ।
তিনি জানান,’ বুধবার রাতে নিহত ব্যক্তির বয়স ৩০ বছরের মতো। তিনি দিন মজুরী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছে স্বজনরা। বুধবার সকালে শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসলে লক্ষণ দেখে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। লক্ষণ দেখে সন্দেহ হওয়ায় নিহত ব্যক্তি থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়ে। আইইডিসিআর এর টেস্টে জানা যায় ঐ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। টেস্টে রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে।