দেশের একমাত্র নান্দনিক কক্সবাজার বিমানবন্দর, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এগিয়ে চলছে সম্প্রসারণ কাজ - Southeast Asia Journal

দেশের একমাত্র নান্দনিক কক্সবাজার বিমানবন্দর, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এগিয়ে চলছে সম্প্রসারণ কাজ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

দেশের সবচেয়ে নান্দনিক বিমানবন্দরে উন্নীত হচ্ছে কক্সবাজার আভ্যন্তরীন বিমানবন্দরটি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ‘রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ন: বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’এ অনুমোদনের পর এর সম্প্রসারণ কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।

ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য প্রথমে কক্সবাজার বিমানবন্দরটি নির্মাণ করেছিল। যুদ্ধ শেষ হবার পর এটির ব্যবহার বন্ধ হয় এবং বহুদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার এর সংস্কার করে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য চালু করে। এ সময় কিছু দিনের জন্য কক্সবাজারে পিআইএর বিমান চলাচল শুরু করে তবে অনতিবিলম্বে এই ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়, এভাবে দুই দফা পিআইএর ফ্লাইট চালু হয় এবং আবার বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে এই বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সংস্কার করে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালনা শুরু হয়। ওই সময় বিমানের ফ্লাইট যাতায়াত করত সপ্তাহে একদিন। পর্যটনের খরা-মৌসুমে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকত। ২০১২ সালের ৩০শে জুন বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পুরোপুরি বন্ধ হবার আগ পযন্ত পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ বিমান প্রথমে সপ্তাহে দুটি এবং তারপর সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করত। বাংলাদেশে বেসরকারি বিমান সংস্থা আসার পর জিএমজি এয়ারলাইন্স কক্সবাজার বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে । বর্তমানে সেই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি চারটি এয়ারলাইন্স সপ্তাহের প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে (২রা অক্টোবর ২০১৪ পযন্ত তথ্য মতে )। গত দশ বছর ধরে প্রতিদিনই কার্গো বিমান এই এয়ারপোর্ট ব্যবহার করছে। কার্গো বিমানে মূলত চিংড়ি পোনা পরিবহন করা হয়।

সিভিল অ্যাভিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করেছিল। ওই সময় সরকার দ্রুত বিমানবন্দরটি আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করেছিল, যাতে প্রয়োজনে যুদ্ধবিমান অবতরণ করতে পারে।

পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পদক্ষেপ হিসাবে, কক্সবাজার বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর এর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার হবে বাংলাদেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

দুই পর্যায়ে এই সম্প্রসারন প্রক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যমে এটিকে আধুনিক সুযোগ সুবিধা প্রদানে সক্ষম বিমানবন্দর হিসাবে রূপান্তর করা হবে, বিশেষ করে সুপরিসর বিমান গুলোকে উড্ডয়ন-অবতরণ ও পার্কিং এর জন্য ভাল সুবিধা প্রদান করতে পারবে। এই পুরো কার্যক্রমের জন্য চিনের সাথে ১ হাজার ৬০০ কোটি বাংলাদেশি টাকার ঋণ চুক্তি সই হয়।

বর্তমানে বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ৬৭৯০ ফুট থেকে বাড়িয়ে এটিকে ৯০০০ ফুটে আর প্রস্থ ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। সুপরিসর বিমানের জন্য রানওয়ের ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হবে সাথে সাথে রানওয়ের লাইটিং ফ্যাসিলিটিজ ও নেভিগেশন এইড বাড়ানো হবে। দূরত্ব পরিমাপক সরঞ্জাম, ডপলার ওমনি ডিরেকশন রেঞ্জ, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা হালনাগাদ করা হবে। যান্ত্রিক অবতরণ ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় মেট্রোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আধুনিক টার্মিনাল ভবন, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোচ ও বোর্ডিং ব্রিজসহ লাইটিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে।

জানা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর (আইএটিএ: CXB, আইসিএও: VGCB) হল কক্সবাজার শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর। কক্সবাজারে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত যা কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম পর্যন্ত একটানা ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত, যা একটি পর্যটক আকর্ষণের বিষয় এবং এই কারণেই দেখা যায় এই বিমানবন্দরের বেশিরভাগ যাত্রীই স্থানীয় অথবা বিদেশী পর্যটক। এছাড়া এই বিমানবন্দরে কিছু এয়ার কার্গো পরিচালিত হয় যা মূলত চিংড়ি পোনা পরিবহন করে।

এর আগে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ‘রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ন: বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১’ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় দ্বিতীয় এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়ার আগে কিছু পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলো এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় যোগ করা হবে।

এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রী যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, তা সভা শেষে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম।

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে বড় করে তুলতে হবে। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর হবে। কারণ এটা আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের রুটের মধ্যে।’

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্প:

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২ জুলাই, ২০১৫ তারিখে শুভ উদ্বোধন করেছিলেন। বিমানবন্দরের রানওয়ে ৬৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯০০০ ফুট এ উন্নীত করা হয়েছে। গত ৬ ই মে বংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোয়িং ৭৩৭ বিমান যোগে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরন করেন এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের শুভ উদ্বোধন করেন।

প্রকল্পটির লক্ষ্য সমূহঃ
(ক) প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬৭৭৫ ফুট হতে ৯০০০ ফুটে বর্ধিত করণ।
(খ) রানওয়ের চওড়া ১৫০ ফুট হতে ২০০ (শোল্ডারসহ) ফুটে বর্ধিত করণ।
(গ) রানওয়ের শক্তিবৃদ্ধি করণ।
(ঘ) এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন।
(ঙ) ফায়ার ফাইটিং ভেহিকেল ক্রয়।
(চ) নব্যযোগাযোগ যন্ত্রপাতি যথা- আইএলএস, ডিভিও আর প্রভৃতি স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ।

অগ্রগতি:

বর্তমানে রানওয়ে প্রশস্তকরণ, রানওয়ের দৈর্ঘ্য বর্ধিত করণ, রানওয়ের সোল্ডার নির্মাণ কাজ ও ৩৫ প্রান্তে ওভার রানওয়ে Aggregate Base Course এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে Asphalt Base/Binder Course এর কাজ চলছে। এছাড়াও Airfield Ground Lighting System, Nav-Aid এবং রানওয়ে ১৭ প্রান্তে রক্ষাপদ বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প-১ম পর্যায় (এলজিইডি অংশ) এর আওতায় সদর উপজেলাধীন বাঁকখালী নদীর উপর কস্তুরীঘাটে ৫৯৫ মিঃ দীর্ঘ Pre-Stressed Box Girder Bridge এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণাধীন রয়েছে।নিমার্ণ কাজের জন্য মোট প্রকল্প ব্যয় থেকে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। One stage Two Envelop Tendering Method (NCT) পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান পূর্বক দরপত্র গ্রহণ করা হয়।দরপত্রের মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন। ব্রীজের সংযোগ সড়কের ২৩.০২৬৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বোয়িং-৭৭৭ জাতীয় বিমান চলাচল করতে পারবে। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরসহ বর্হিবিশ্বের সাথে কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে যা দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।