করোনার প্রভাবে ক্ষতির মুখে খামারিরা, দেশজুড়ে ব্রয়লার মুরগী সংকটের আশঙ্কা - Southeast Asia Journal

করোনার প্রভাবে ক্ষতির মুখে খামারিরা, দেশজুড়ে ব্রয়লার মুরগী সংকটের আশঙ্কা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

 

নিউজ ডেস্ক

প্রানঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রায় আড়াই মাস ধরে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। লকডাউনের মধ্যে দেশের অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে করোনার প্রভাব পড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার সামগ্রীর উপরও, অন্যসব কিছুর মতো বাদ যায়নি ব্রয়লার মুরগীর বাজারও।

গত ২২ এপ্রিল ফার্মে এক কেজি ব্রয়লার মুরগীর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, একমাস পর গত ২২ মে এর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯০ টাকা। ধারনা করা হচ্ছে, কিছুদিন পর হয়তো ৩০০ টাকা কেজিতেও মিলবে না ব্রয়লার মুরগী। কারণ খামারে এখন আর মুরগী নেই। অর্থনৈতিক ক্ষতি সামলাতে না পেরে খামারিরা উৎপাদন থেকে শুরু করে পালন ও বাজার জাতকরণ বন্ধ করে দিয়েছেন, একদম বেকার বসে আছেন খামারিরা।

বাচ্চা উৎপাদনকারীরা বলছেন, মুরগীর বাচ্চাও বেচাকেনা তেমন নেই। যাও বা হচ্ছে প্রতিপিচ বাচ্চায় ১০/১২ টাকা লস হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায় চাষিরা সেদিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের ভয় মুরগী তুললে আবার যদি লস হয় তখন সামাল দিতে পারবেন না। এদিকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী তাদের দেখবেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাঠ পর্যায়ে তার কোনো দৃশ্যমান নজির নেই।

এক মাস আগে দেখা গেছে, ৩৫ টাকার মুরগীর বাচ্চার দাম ছিল ১ টাকা, তাও কেউ খামারে তুলছে না! ফ্রি মুরগীর বাচ্চা দিতে চাইলেও কোনো খামারি নতুন করে মুরগীর বাচ্চা নেয়নি। লাখ লাখ বাচ্চা প্রতিদিন মেরে ফেলতে হয়েছে খামারিদের। কারণ করোনার শুরুতে গোটা দেশ যখন অচল হয়ে যায় তখন মুরগী, বাচ্চা ও ডিম কোনো কিছুই বেচাকেনা হয়নি। লস খেয়ে হাজার হাজার খামারি পথে বসে গেছে। সরকার পোল্ট্রি খাতে প্রণোদনা দিয়েছে। তারা লোন নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খামারিদের কাছে খবর নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে কোনো লোক যায়নি। প্রণোদনার টাকাটা তারা কিভাবে পাবেন সেটাও তারা বলতে পারেন না।

গাজীপুর জেলার এক পোল্ট্রি খামারের মালিক বলেন, আমার এখন আর কোনো ব্যবসা নেই। খামার খালি পড়ে আছে। ব্রয়লার এবং লেয়ার কোনো শেডেই মুরগী নেই। শুনলাম সরকার নাকি আমাদের লোন দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। করোনার শুরুতে ১০ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে ডিমপাড়া মুরগীগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। ডিমের দাম ক্রমান্বয়ে কমতে থাকা এবং খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ডিম পাড়া মুরগী বিক্রি করেছি। তিন হাজার ব্রয়লার মুরগী ছিল। কেজি প্রতি খরচ হয়েছে ১১০ টাকা। আর বিক্রি করেছি ৪০/৪৫ টাকা। এখানেও কয়েক লাখ টাকা লস হয়েছে। তিনি বলেন, এখন আমরা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগী ক্রয়করে খাচ্ছি। এ ব্যাচটা ফুরিয়ে গেলে ৩০০ টাকা কেজিতেও মুরগী কিনতে পাওয়া যাবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের আশেপাশে যতো ফার্ম ছিল সব বন্ধ হয়ে গেছে।

বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক মালিক জানান, আমাদের এখানে ব্রয়লার মুরগী হোলসেল হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা কেজি। আগে আমরা প্রতি সপ্তাহে ৩ লাখ ৫০ হাজার কেজি ব্রয়লার মুরগী বিক্রি করতাম। এখন সপ্তাহে শুধু ৫০ হাজার কেজি মুরগী বিক্রি করতে পারছি। ১০টি শেডের মধ্যে ৮টি শেডের মুরগী ফুরিয়ে গেছে। এখন মাত্র ২টি শেডে মুরগী আছে। এই দুই শেডের মুরগী ফুরিয়ে গেলে আবার মুরগী আসতে দেরি হবে। তিনি বলেন, শুধু আমাদের শেডে নয়। হাজার হাজার খামারির শেড ফাকা পড়ে আছে। আমরা এখনো প্রতিপিচ মুরগীর বাচ্চা ১০/১২ টাকা লোকসানে বিক্রি করছি। তাও নেওয়ার লোক পাচ্ছি না। খামারিরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। করোনার পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত খামারিরা মুরগী তুলতে চাচ্ছেন না। ফলে আগামী কিছুদিনের মধ্যে অনেক দাম দিয়েও হয়তো ব্রয়লার মুরগী পাওয়া কষ্টকর হবে।

সরকার পোল্ট্রি ফার্মের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রী বলেছেন, এটা শুনেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম নজরে পড়েনি।

টাঙ্গাইলের পোল্ট্রি খামারি ফরহাদ হোসেন বলেন, এখন আমার খামারে কোনো মুরগী নেই। যাদের খামারে আছে তারা প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি করছে। লকডাউনের পর এক কেজি ব্রয়লার মুরগীর মাংস উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা। তখন আমরা প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এভাবে লস খেয়ে এখন বাচ্চা উঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আর বাচ্চা উঠাচ্ছি না। পরিস্থিতি দেখে-শুনে তারপর বাচ্চা উঠাবো। এখন অধিকাংশ খামারে মুরগী নেই। অনেক জায়গায় এমন সময় আসবে যে ১৯০ নয়, তার চেয়ে বেশি টাকা দিলেও ব্রয়লার মুরগী পাওয়া যাবে না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রজনন) একেএম আরিফুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ট্রি খামারিদের তালিকা করা হচ্ছে। আমাদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, আমরা তালিকা করছি। প্রণোদনা কে কীভাবে পাবে সে বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। তালিকা হয়ে গেলে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।