ধর্ষকের বিচার চাই, কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি কেন?- একটি দ্বৈত মানসিকতার বিশ্লেষণ

ধর্ষকের বিচার চাই, কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি কেন?- একটি দ্বৈত মানসিকতার বিশ্লেষণ

ধর্ষকের বিচার চাই, কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি কেন?- একটি দ্বৈত মানসিকতার বিশ্লেষণ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকায় মারমা সম্প্রদায়ের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন—এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। একজন পাহাড়ি মেয়ের প্রতি বীভৎস এই নির্যাতনের অভিযোগে স্থানীয় হিন্দু যুবক চয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে সোপর্দ করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অপরাধী যেই হোক—ধর্ষণকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া আবশ্যক। এতে বিন্দুমাত্র আপসের সুযোগ নেই।

ইতিমধ্যে, ধর্ষক চয়ন শীলকে ৬ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

কিন্তু যে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা হলো—এই অপরাধ ঘটেছে একজন বেসামরিক ব্যক্তির হাতে, অথচ ঘটনা মোড় নিয়েছে ভিন্নখাতে। ধর্ষণের প্রতিবাদ সমাবেশের আড়ালে হঠাৎই উত্থাপিত হয়েছে “সেনাবাহিনী প্রত্যাহার” এর দাবি! শুধু তাই নয়—পাহাড়ে দায়িত্ব পালনরত সেনা টহল দলের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে এবং সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে মহাসমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা: সেনাবাহিনীর টহলে হামলা ইউপিডিএফ সমর্থকদের

প্রশ্ন হলো—ধর্ষক যদি চয়ন শীল নামে একজন বেসামরিক ব্যক্তি হন, তাহলে সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হচ্ছে কেন?

একজন ব্যক্তি অপরাধ করলে তার বিচার আইন অনুযায়ী হবে। কিন্তু সেই অপরাধকে পুঁজি করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানো এবং তাদের উপস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা কোনোভাবেই ন্যায়বিচারের দাবি নয়; বরং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উস্কানিমূলক আচরণ।

আমাদের মনে রাখতে হবে—পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু দশক ধরে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে, তার পেছনে সেনাবাহিনীর নিরলস ভূমিকা রয়েছে। শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের মূলমন্ত্রে দুর্গম পাহাড়ে সড়ক নির্মাণ থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, ত্রাণ সহায়তা—সবখানেই এ বাহিনীর মানবিক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও অপহরণ বন্ধে সেনাবাহিনীই ছিল নিরাপত্তার শেষ আশ্রয়স্থল।

ধর্ষকের বিচার চাই, কিন্তু সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি কেন?- একটি দ্বৈত মানসিকতার বিশ্লেষণ
ধর্ষণে অভিযুক্ত চয়ন শীল, যাকে ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে সেনাবাহিনী।

এখন যদি অপরাধীর বিচার চাওয়ার নামে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়—ধর্ষণ-প্রতিরোধের আন্দোলন নয়, বরং নিরাপত্তা কাঠামো ভেঙে ফেলার চক্রান্ত।

ন্যায়বিচার হোক, তবে সঠিক পথে

আমাদের অবস্থান স্পষ্ট হওয়া জরুরি—

✅ ধর্ষণকারীর দ্রুত বিচার চাই।
✅ ভুক্তভোগীর পরিবারকে নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দিতে হবে।
❌ কিন্তু কোনোভাবেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না।

ধর্ষক একজন ব্যক্তি—তার অপরাধ ব্যক্তি পর্যায়ের। তাকে শাস্তি দিক আদালত, আইনের ধারা। কিন্তু তার অপরাধকে পুঁজি করে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি তোলা মানে ন্যায়ের লড়াইকে অন্য খাতে প্রবাহিত করা।

ধর্ষণের ঘটনা যেমন মানবিক বিবেককে নাড়া দেয়, তেমনি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলাও সমানভাবে নিন্দনীয়। পাহাড়ের মানুষ চান শান্তি ও নিরাপত্তা, বিশৃঙ্খলা নয়। তাই ধর্ষণের বিচারের দাবি গর্জে উঠুক—কিন্তু আইন ও মানবিক শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে। ন্যায়বিচার চাই, কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিরোধী অরাজকতা নয়।

জেনে রাখা দরকার, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন এ অঞ্চলের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেনাবাহিনী বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ধর্ষণ, অপহরণ কিংবা অন্য যেকোনো সামাজিক ইস্যুকে তারা পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সেনাবাহিনীকে দায়ী করার চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক সিঙ্গিনালা ঘটনার ক্ষেত্রেও দেখা গেল—ধর্ষক একজন বেসামরিক নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ইউপিডিএফের নেতৃত্বাধীন মহল “পাহাড় থেকে সেনা হটাও” স্লোগান তুলে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে এবং আন্দোলনের নামে সরাসরি সেনা টহলে হামলা পর্যন্ত করেছে। এটি স্পষ্ট যে, ইউপিডিএফ মূলত ন্যায়বিচার চায় না—বরং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দুর্বল করে নিজস্ব সশস্ত্র প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করতে চায়। এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক উসকানি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং পাহাড়ের সাধারণ মানুষের শান্তির জন্য গুরুতর হুমকি।

খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও সেনাবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের তীব্র নিন্দা

উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রাইভেট শিক্ষক থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হন অষ্টম শ্রেণির ওই মারমা স্কুলছাত্রী। রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজির পর শাসন রক্ষিত বৌদ্ধ বিহারের পাশের একটি কাদা ও পানিভর্তি জমি থেকে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। ভুক্তভোগীর বাবার অভিযোগ, অজ্ঞাত তিন যুবক মেয়েকে অজ্ঞান করে নিয়ে যায় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপি, জামা্য়াতসহ আঞ্চলিক পাহাড়ি ও বাঙ্গালি সংগঠনগুলো এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed