সুচির ২৪ মন্ত্রী বরখাস্ত, জরুরি বৈঠকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
![]()
নিউজ ডেস্ক
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিয়ানমারে কয়েক দিন ধরে বেসামরিক সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর দ্বন্দ্ব এবং উত্তেজনার মধ্যে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি ও ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটকের পর দেওয়া হয়েছে জরুরি অবস্থা। ফলে মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে।

জানা গেছে, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের প্রথমে দিনেই ক্ষমতাচ্যুত অং সান সুচির সরকারের অধিকাংশ সদস্যকে বরখাস্ত করে নতুন লোক নিয়োগ করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টর্স এবং বিবিসি বার্মিজ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, সুচি সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সাথে নতুন ১১ জন মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে । নতুন মন্ত্রীদের অধিকাংশই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা। কয়েকজন রয়েছেন সেনা সমর্থিত দল ইউএসডিপির সদস্য। ইউএসপিডির অন্যতম নেতা উনা মং লউনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। জানা গেছে তিনি নভেম্বরের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। সেনাবাহিনী পরিচালিত টেলিভিশনে নতুন এসব নিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়।
এছাড়া, সামরিক অভ্যুত্থানের পর দায়িত্বে থাকা দেশটির সরকারি সংস্থা দেশের সব ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে মিয়ানমারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতের গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

এদিকে, মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। আজ মঙ্গলবারই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পাহাড়ি দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনাকে গণতন্ত্রের ওপর ‘ভীষণ আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘে ব্রিটেনের দূত বারবারা উডওয়ার্ড সাফ জানিয়েছেন, গত নভেম্বর মাসে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলকে বৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। নেত্রী সু চি’র দ্রুত মুক্তির জন্য চেষ্টা করবে লন্ডন।
উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির দল দ্য ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি জয়ী হয়। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সংকটের শুরুটা মূলত এখান থেকেই। ২০১৭ সালে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর গণহত্যা নিয়ে সু চি কার্যত দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষেই ছিলেন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। ২০১৫ সালের তুলনায়ও সে বছর সু চির দল বেশি ভোটে জয়ী হয়। এরপর সু চি ক্ষমতায় আসেন। এ নির্বাচন নিয়ে সেনাবাহিনীর অভিযোগ, ভোটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। সেনাবাহিনীর দাবি, ভোটে কারচুপির এক কোটির বেশি ঘটনার প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে। যাচাই–বাছাইয়ের জন্য সেনাবাহিনী সরকার পরিচালিত নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটার তালিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কিছুদিন আগে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং এক বক্তব্যে মিয়ানমারের সংবিধান বাতিল করার হুঁশিয়ারি দেন। এরপরই উত্তেজনা চরমে ওঠে। গত সপ্তাহে ইয়াঙ্গুনের বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তায়, রাজধানী নেপিডো ও অন্যান্য এলাকায় সেনাবাহিনীর ট্যাংক মোতায়েন করা হয়। নির্বাচনের ফল নিয়ে সেনা–সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন। এসবেরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটল।