বাংলাদেশকে না জানিয়েই রোহিঙ্গাদের তথ্য সরবরাহ জাতিসংঘের - Southeast Asia Journal

বাংলাদেশকে না জানিয়েই রোহিঙ্গাদের তথ্য সরবরাহ জাতিসংঘের

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্টে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ তাদের তাড়িয়ে না দিয়ে থাকা-খাওয়ার জায়গা দিয়ে দুঃসময়ে পাশে থেকেছে। অপরদিকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা শুধু আশ্বাসের মধ্যেই আটকে আছে। এ বিষয়ে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কাছ থেকে ভুলভাবে তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে কিছু জানানো হয়নি। এসব তথ্য মিয়ানমারের কাছে পৌঁছেছে এবং তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।

২০১৮ সাল থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) কয়েক লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশি ক্যাম্পে নিবন্ধিত করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার তাদের পরিচয়পত্র প্রদান করেছে। প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পরিষেবার জন্য পরিচয়পত্র আবশ্যক। এর আগে বাংলাদেশ সম্ভাব্য প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের কাছে শরণার্থী সম্পর্কিত তথ্য জমা দেওয়ার জন্য অ্যানালগ বা অনুরূপ স্থির ছবি, বৃদ্ধা আঙ্গুলের ছাপ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর সংকট ও সংঘাত বিষয়ক পরিচালক লামা ফাকিহ বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমগুলো সংস্থাটির নিজস্ব নীতিমালার পরিপন্থী ছিল এবং এর ফলে শরণার্থীদের আরও ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে সম্মতির ভিত্তিতেই অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নিয়ম অনুযায়ী স্বাধীনভাবে তথ্য সংগ্রহ করা উচিত ছিল। এরপরেই তা সম্পৃক্ত দেশগুলোর কাছে প্রকাশ করা যেত। কিন্তু সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করা হয়নি।

কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার থেকে বের করে দেয়া হয়েছে অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমনকি মিয়ানমারে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এখনও বর্ণবাদ, নির্যাতন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ চালানো হচ্ছে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের কক্সবাজারে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে মিলে ২৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এবং ২০ জন মানবিক সহায়তা কর্মী, বিশ্লেষক, স্থানীয় অধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং যারা রোহিঙ্গা নিবন্ধনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন বা অংশ নিয়েছেন তাদের সাথে কথা বলেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিলে ইউএনএইচসিআরের কাছে বিস্তারিত প্রশ্ন এবং এর গবেষণার ফলাফল পাঠিয়েছে। গত ১০ মে ইউএনএইচসিআর এর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

ইউএনএইচসিআর কোনও রকম ভুল বা নীতি লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছে যে, তারা তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রমের সকল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছে এবং এ কাজে সম্মতি পেয়েছিল। সংস্থাটি বলছে, তাদের তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল শরণার্থীদের জন্য দীর্ঘকালীন সমাধান খুঁজে বের করা এবং কোনো রোহিঙ্গা যেন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সেই চেষ্টা করা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাথে জানুয়ারির একটি বৈঠকে ইউএনএইচসিআর বলেছিল, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মূল্যায়নের জন্য তাদের তথ্য সরবরাহ করার অনুমতি চেয়েছিলেন। তবে নিবন্ধকরণ কার্যক্রমের সময় অর্থাৎ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা কমিউনিটি রেডিও শো এবং ২০১৮ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে দেওয়া মন্তব্যসহ ইউএনএইচসিআর কর্মীরা প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে, তথ্য সংগ্রহ প্রত্যাবাসনের সাথে যুক্ত ছিল না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২১ জন শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিল যাদের নাম প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারের যাচাই করা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৯ সালের প্রত্যাবাসন মূল্যায়নে ২১ জনের মধ্যে ১২ জনকে যুক্ত করা হয়েছিল-যা ইউএনএইচসিআর সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা তালিকা।

ওই ২১ জন জানান, নিবন্ধভুক্ত হওয়ার পরে তারা জানতে পারেন যে তাদের তথ্য মিয়ানমারের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে এবং তাদের নাম প্রত্যাবর্তনের জন্য যাচাই করা লোকদের তালিকায় রয়েছে। তারা সবাই অন্য ক্যাম্পে লুকিয়ে গিয়েছিলেন কারণ তারা জোরপূর্বক ফিরে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো ক্যাম্প থেকে কোনো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়নি।

স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইউএনএইচসিআর-এর নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে, কখনই স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উদ্দেশ্যে করা নিবন্ধকরণের সাথে নিবন্ধকরণ বা অন্যান্য যাচাইকরণ কার্যক্রমের সাথে সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করা উচিত নয় কারণ এই দুটিকে সংযুক্ত করলে তা শরণার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং এমন ধারনা হতে পারে যে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় প্রাপ্ত দেশে সহায়তা পাওয়ার জন্যে একজন ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য নিবন্ধন করতে হবে। এটা ভুক্তভোগীকে গুরুতর বিপদে ফেলতে পারে।

যোগ্যতার মূল্যায়ন এবং সেবার জন্য নিবন্ধিত তথ্যের মধ্যকার সংযোগ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে। সাক্ষাৎকার নেওয়া শরণার্থীদের মধ্যে কেউই বুঝতে পারেনি যে তাদের তথ্য মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রকাশ করা হবে। একটি ঘটনায় যেখানে এক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বলা হয়েছিল যে, এমনটি করা হবে। তখন তিনি বলেছিলেন যে, তিনি সেবা প্রাপ্তির বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

মানবিক সহায়তা বিষয়ক এক কর্মী বলেন, ইউএনএইচসিআর-এর উচিত ছিল মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের তথ্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত গুরুতর উদ্বেগের বিষয়টি চিন্তা করা। ন্যূনতম নিশ্চয়তা না থাকা পর্যন্ত এই কমিউনিটি সম্পর্কিত তথ্য মিয়ানমারের কাছে প্রকাশ করা বা মিয়ানমারের সাথে তথ্য শেয়ার করার অনুমতি দেওয়ার ধারণাটি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার বাইরে থাকা উচিত ছিল যা সেখানে ছিল না।