পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর জন্য একজন আব্দুর রশিদের আত্নত্যাগ... - Southeast Asia Journal

পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর জন্য একজন আব্দুর রশিদের আত্নত্যাগ…

লংগদুর ১ম উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ রশিদ সরকার

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

ফিচার ডেস্ক

লংগদু উপজেলা পরিষদের ১ম নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকার। বাগেরহাট জেলার স্মরনখোলা থানার মৃত আব্দুল গনি হাওলাদার এর পুত্র। তিনি একজন সৎ ও জন দরদী মানুষ ছিলেন। তিনি নিজ এলাকায় মাদ্রাসা লাইনে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষা গ্রহন শেষ করে পটুয়াখালীতে একটি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রশিদ। বিভিন্ন সময়ে তার নিজ এলাকার সাধারন মানুষের উপরে অন্যায় অত্যাচার ও বৈষম্যহীনতার কারনে তৎকালীন সময়ের ক্ষমতাসীন দল বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালিদের বিভিন্ন সুবিধাদি দেয়ার কথা বা পূর্ণবাসনের ব্যাপারে জানতে পেরে ঢাকার হাজি ক্যাম্পে গমন করেন এবং হাজি ক্যাম্পে গমন কালে তিনি দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা হতে হাজি ক্যাম্পে আগত লোকদেরকে ৩৫ টি গ্রুপে ভাগ করে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করে তৎকালীন সরকার। তার মধ্যে আঃ রশিদ সরকার কে একটি গ্রুপ কমান্ডার করে লংগদু উপজেলার ইয়ারাংছড়ি এলাকায় পাঠানো হয় এবং তার নেতৃত্বগুন থাকায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাকে কমান্ডার নিযুক্ত করা হয় । এছাড়াও পাশ্ববর্তী এলাকায় আরো ৪ টি গ্রুপের গ্রুপ কমান্ডার করা হয় তাকে। এর পাশাপাশি তিনি ইয়ারাংছড়িতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তার মেধা-শক্তি ও নেতৃত্বগুন এবং সাধারন বাঙ্গালীদের উপর মানবিকতার করনে অত্র এলাকার বাঙ্গালী সাধারন জনগন আঃ রশিদ সরকারকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হলে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার সততার কারনে ও জনসাধারনের প্রতি ভালো মনোভাব থাকায় দীর্ঘ সাড়ে চার বছর লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেন।

পরে ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় বাঙ্গালীরা তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হননি। কিন্তু বাঙ্গালীদের দাবি দাওয়া ও ভালবাসার টানে বিশেষ করে বাঙ্গালীদের পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায়ের কথা চিন্তা করে তিনি প্রার্থী হন এবং বিপুল ভোট পেয়ে প্রথম লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। অতঃপর তিনি জেনারেলের এরশাদ সরকারের আমলে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। তিনি তার নিজ এলাকায় দুইটি বিবাহ করেন। তার দুইটি ছেলে ও দুইটি মেয়ে রয়েছে।

তৎকালীন শান্তিবাহিনীকে চাঁদা দিতে অপারগতা, সন্ত্রাসদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, মিছিল-মিটিং-সভা-সমাবেশে নেতৃত্ব প্রদান, বাঙ্গালী সংগঠন থেকে বেরিয়ে না আসা, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এবং শান্তিবাহিনীর ডাকে সাড়া না দেওয়া, পরিশেষে শান্তিবাহিনী তাকে লংগদুর বড়াদম নামক এলাকায় দেখা করে উভয়ের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির জন্য কথা বলবেন বলে ডাকলেও তিনি যাননি, ফলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৯৮৯ সালের ৪ ঠা মে প্রথম লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব আঃ রশিদ সরকার মাইনি বাজার হতে লংগদু নিজ বাসায় যাওয়ায় পথে উপজেলাস্থ কাঠালতলা নামক স্হানে শান্তিবাহিনী তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে পবিত্র মাহে রমজানের ২৭ রমজান ইফতারের ঠিক পুর্ব মুহূর্তে নির্মম ভাবে তাকে ১০ টি গুলি করে হত্যা করে। মূলত শান্তিবাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে লংগদুকে বাঙ্গালী নেতৃত্ব শূণ্য করে দেয়। আজ ৩১ বছর পার হলেও এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার এখনো তার পরিবার পায়নি।

ধারণা করা হয়েছিলো, শান্তিবাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালী নেতৃত্ব শূন্য করা। যাতে বাঙ্গালীরা পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে। শান্তিবাহিনী পাহাড়ের আনাচে কানাছে প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে চলতে পারে এটাই ছিল হত্যাকান্ডের মুল কারন।