দেশে ২৯তম গ্যাসফিল্ড আবিষ্কার - Southeast Asia Journal

দেশে ২৯তম গ্যাসফিল্ড আবিষ্কার

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

দ্বীপ জেলা ভোলায় তৃতীয় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ইলিশা-১ বাংলাদেশের আবিষ্কৃত গ্যাসফিন্ডের মধ্যে ২৯তম। নতুন গ্যাসক্ষেত্রটিতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ইলিশায় মজুদ গ্যাসের বাজারমূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৬৫০০ কোটি। আর যদি আমদানিকৃত এলএনজির দর বিবেচনা করি তাহলে মূল্য দাঁড়াবে ২৬ হাজার কোটি টাকা। এটা খুবই আনন্দের সংবাদ এবং সৌভাগ্যের। ভোলাতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩ টিসিএফ গ্যাস মজুদ আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নদীর ঠিক উপর দিকে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছি। এখান থেকে ২৬-৩০ বছর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাবে। আমাদের একটি প্রসেস প্ল্যান্ট রয়েছে, আরও একটি আনার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে পাইপলাইনে দেওয়া সম্ভব হবে। ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যাবে একটি পাইপলাইন। প্রি-ফিজিবিলিটি শেষ এখন ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে।

দ্বীপ জেলা ভোলাতে আগে থেকে দুটি গ্যাসফিল্ড রয়েছে। ৩টি গ্যাসক্ষেত্রের ৯টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। এগুলো হলো বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহাবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৬টি কূপ, সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ভোলা নর্থের ২টি ও সর্বশেষ ইলিশা ক্ষেত্রের ইলিশা-১ কূপ।

তবে দ্বীপ জেলার এই আবিষ্কার শিগগির কাজে লাগানোর সুযোগ অনেক কম। ভোলা গ্যাসফিল্ডে দৈনিক ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। সেখানে সব গ্রাহক মিলে চাহিদা রয়েছে ৯২.৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্রাহক না থাকায় ২৭.৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকছে দীর্ঘদিন ধরে। পাইপ লাইন না থাকায় মূল ভূখণ্ডে আনা যাচ্ছে না ভোলার গ্যাস।

সম্প্রতি ভোলা থেকে গ্যাস ট্যাংকারে করে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। রবিবার (২১ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। চুক্তির আওতায় ভোলার উদ্বৃত্ত ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট (দৈনিক) গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করে তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকায় সরবরাহ করা হবে। ইন্ট্রাকো প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকা দরে কিনে ৪৭.৬০ টাকা দরে বিক্রি করবে। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে পরিবহন খরচ যাবে ৩০ টাকার উপরে।

অন্যদিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেছেন, সিএনজি আকারে আনার বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্ত। আমরা দৈনিক কমবেশি ২২০০-২২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছি। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৪ হাজারের কাছাকাছি। আমরা দুটি এফএসআরইউ দিয়ে দৈনিক ১ হাজার ঘনফুট আমদানি করতে পারি। তারপরও ১ হাজারের মতো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঢাকার আশপাশ ও টাঙ্গাইল এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বল্পচাপ সমস্যায় ভুগছে। যেখানে স্বল্পচাপ বিরাজ করছে সেখানে দেওয়া হবে এই গ্যাস। আমরা খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে ৫ মিলিয়ন আনতে সক্ষম হব, পরবর্তী সময় আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট আসবে। ভোলাতে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমি জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। আমরা কয়েক মাসের মধ্যেই ভোলার গ্যাস আনার বিষয়টি চ‚ড়ান্ত করতে পেরেছি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে টিপ্পনী কেটেছেন। তারা বলেন, পেট্রোবাংলা এখনো ভুল পথেই রয়েছে, এই সিএনজি আকারে আনার বিষয়টি একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। ৫ মিলিয়ন গ্যাস আনার জন্য যে পরিমাণ দৌড়ঝাঁপ এবং আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তাতে উদ্দেশ্য সৎ বলে মনে করা কঠিন। গ্যাসের যদি এতই সংকট কর্তারা মনে করেন তাহলে রশিদপুর-৯ নম্বর কূপটি কেন বসিয়ে রাখা হয়েছে।

সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানির রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডের ৯ নম্বর ক‚পটি ২০১৭ সাল থেকে গ্যাস নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। ক‚পটি থেকে দৈনিক ১৪ থেকে ১৯ মিলিয়ন পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। যা আমদানিকৃত (১৯ মিলিয়ন) এলএনজির সঙ্গে তুলনা করলে দৈনিক দাম দাঁড়ায় ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার উপরে। বছরে এই টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ১৮শ কোটি টাকা। শুধু ৭ কিলোমিটার পাইপলাইনের অভাবে গ্যাস উত্তোলন করা যাচ্ছে না, যা ৩ থেকে ৫ মাসের বিষয়। সেই কাজটি ২০১৭ সাল থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

এসজিএফসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের কাছে প্রশ্ন ছিল ২০১৭ সাল থেকে গ্যাস কূপটি ফেলে রাখা হলো কেন? উত্তরে বলেছেন আগের ম্যানেজমেন্ট ভালো বলতে পারবে। তবে একটি বিষয় বলতে পারি, গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক প্রকল্প এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা আগে হয়তো বাণিজ্যিকভাবে সফল বিবেচনা করা হয়নি। আমার মনে হয় রশিদপুরকে তখন বাণিজ্যিকভাবে উপযুক্ত মনে করা হয়নি। এখন গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় গুরুত্ব বেড়েছে।