পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম দখলের লড়াইয়ে একদিনে নিহত ১৬ - Southeast Asia Journal

পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম দখলের লড়াইয়ে একদিনে নিহত ১৬

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বোমা, গুলি, হানাহানি, মৃত্যু মিছিল; পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট উৎসবে কিছুই বাদ গেল না। ১৬ জনের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে শেষ হলো রাজ্যটির ১০ম পঞ্চায়েত নির্বাচন।

শনিবার (৮ জুলাই) গ্রাম বাংলার ভোটে রক্তাক্ত গণতন্ত্রের উৎসবে মাতলো রাজ্যের সবকটি রাজনৈতিক দলের দুষ্কৃতিকারীরা। ভোটকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলি, অবাধ ভোট লুট, বেলাগাম সন্ত্রাস দেখলো রাজ্যবাসী, যা বিগত নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে।

এ দিন প্রিসাইডিং অফিসারের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে চলল অবলীলায় ছাপ্পা ভোট। আহত পুলিশ, আতঙ্কে কাঁদলেন ভোট কর্মীরা। এমন গণতন্ত্রের উৎসবে ক্ষোভে ফুঁসছেন ভোটাররা। গত ৮ জুন ভোটের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এদিন পর্যন্ত ভোট কেন্দ্র করে ঝরল ৩৪ প্রাণ। নির্বাচন গণতন্ত্রের ভিত তৈরি করে। তারই যেন জীর্ণ চেহারা বেরিয়ে এদিনে পঞ্চায়েত ভোটে।

এদিকে, শাসকদল ছাড়া বাকি সব বিরোধীদলগুলো নির্বাচন বাতিলের দাবি তুলেছে। আদৌ এটা ভোট হয়েছে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। ভোট বাতিলের দাবি তুলেছে কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন ও বামজোট।

তবে উল্লেখযোগ্যভাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার অভিমত ভোটের দিনে খুন হয়েছেন মাত্র তিনজন। তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টা পুলিশ প্রশাসনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। বলেছেন, আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর।

তিনি আরও বলেছেন, ৬১ হাজারের বেশি বুথের মধ্যে মাত্র সাড়ে তিন হাজার বুথে কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা সামনে এসেছে। ফলে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলেই বলা যায়।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের এই তথ্য দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন, সিপিআইএম-এর নেতা শতরূপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, তিনি (রাজীব সিনহা) যদি এই সমীকরণ বলেন, তাহলে তো রাজ্য কোনো সহিংসতাই হয়নি। তাহলে তো আমি বলব, পশ্চিমবঙ্গের ১০ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৩৪ জন মারা গেছেন। বাকিরা তো বেঁচে আছেন। এই মৃত্যু কোনো মৃত্যুই নয়। এ রকম একটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন কথা বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

তিনি আরও বলেন, গতকাল শুক্রবার (০৭ জুলাই) রাত ১২টার পর থেকে এত মানুষের মৃত্যু হলো, সংবাদ মাধ্যমে বারবার তুলে ধরা হয়েছে। উনি কি দেখতে পাচ্ছেন না? এবারের নির্বাচনে আমরা যত মানুষকে হারিয়েছি, ২০১৮ ভোটও এত সহিংসতা দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছিল ২৩ জনের। এবার সংখ্যাটা ৩৪।

সিপিআইএম-এর এই নেতা বলেছেন, সবকিছুর পরে এবারের নির্বাচন একটা সিগনিফিকেন্ট। সেটা হলো, একা তৃণমূল মার দেয় নি। মার দিতে গিয়ে পাল্টা প্রতিরোধের সামনেও পড়ছে। এটাই হচ্ছে ২০২৪ এর ভবিষ্যৎ। বিজেপিকে জায়গা পাইয়ে দেওয়ার জন্য তৃণমূল যে খেলাটা শুরু করেছে আগামী লোকসভায় তাদের জন্য এতটা সহজ হবে না। প্রসঙ্গত, এই নির্বাচনে ১৬ জনের মধ্যে নয়জন তৃণমূল কর্মী মারা গিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিধানসভা বিরোধী নেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, বাংলায় গণতন্ত্র মারা গিয়েছে। এ পঞ্চায়েত ভোট মানছি না। এই পরিস্থিতি রুখতে, গণতন্ত্র বাঁচাতে পতাকা ফেলে সমস্ত বিরোধীর একজোট হওয়া উচিত।

তার কথা, কালীঘাটে চলুন। ইটগুলো খুলে নিয়ে আসি। গুলি করুক। প্রথম ১০-২০ জন মরবে। তাতে আমি থাকতে রাজি আছি। তারপরেও বাংলার ১০ কোটি লোক বেঁচে যাবে।

তিনি আরও বলেছেন, দিল্লির কে কী ভাববে, আমার এ কথায় কে কী বলবে? আমার জানার দরকার নেই। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে বাংলার পরিত্রাণের জন্য তাদের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে এখানে এসেছি।

মূলত, শনিবার (০৮ জুলাই) সকাল ৭টায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট নেওয়া শুরু হতেই গোটা রাজ্য থেকে সহিংসতা ও মৃত্যুর খবর আসতে শুরু করে। সবচেয়ে বেশি অশান্তি এবং মৃত্যুর খরব সামনে এসেছে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে। এরপর মালদহ, কোচবিহার, পূর্ব বর্ধমান, নদীয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনার মত জেলাগুলো রয়েছে।

এদিকে, এত সহিংসতার ঘটনা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করেছেন বিএসএফের কর্তারা। এবারে ভোটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য ফোর্স কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছিল বিএসএফের আইজি পদমর্যাদা এক কর্তাকে।

জানা যায়, শনিবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ তিনি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারকে চিঠি দিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার অভিযোগ, বাহিনীর জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থাও করেনি কমিশন। বহু জায়গায় বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি পাননি বলে অভিযোগ এসেছে। তাদের কোথায় মোতায়েন করা হয়েছে তা নিয়ে পুরো অন্ধকার রেখেছে নির্বাচন কমিশন। এমনকি ফোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করাও যাচ্ছে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। বিএসএফ কর্তার এই চিঠির পর কিছুটা নড়েচড়ে বসে নির্বাচন কমিশন।

শনিবার একধাপে ভোট হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ২২টি জেলায়। কলকাতা বাদ দিয়ে রাজ্যটির এই ২২ জেলার মধ্যে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় ভোট হয়েছে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট। এবং বাকি জেলাগুলিতে ত্রি-স্তর বিশিষ্ট (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ) অংশে ভোট হয়েছে। ভোট চলেছে স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

You may have missed