সরকারের নীতির বিপরীত অবস্থানে জেনেভা মিশন - Southeast Asia Journal

সরকারের নীতির বিপরীত অবস্থানে জেনেভা মিশন

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে একটি পাইলট প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। যেখানে চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারও আগ্রহী রয়েছে। এই পাইলট প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে। এসব রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমির পরিবর্তে রাখাইনের মংডুর অভ্যর্থনা ও অস্থায়ী শিবিরে রাখা হবে। এরপর তাদের নতুন করে তৈরি ১৫টি গ্রামে নেওয়া হবে। এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ সফল হলে পরবর্তীকালে নিয়মিত প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে।

বর্তমানে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে—পরীক্ষামূলক উদ্যোগ তথা পাইলট প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়া। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। চীনও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সহায়তা দিচ্ছে। তাই সরকার এই লক্ষ্যে বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো পাইলট প্রকল্পের প্রতি তাদের আগ্রহ দেখায়নি, আপত্তি দিয়েছে। প্রত্যাবাসন টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছায় হওয়ার পক্ষে তারা। যদিও এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান ভিন্ন। সরকার মনে করে মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন একটি জটিল, দীর্ঘ মেয়াদি এবং অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তাই বাংলাদেশ পাইলট প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এজন্য জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনসহ প্রতিটি দূতাবাস সক্রিয় থাকলেও ব্যতিক্রম সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। এই মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান নিজেই এই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫৩তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা বিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত মনোনীত দুই জন বিশেষজ্ঞ (প্যানেলিস্ট)। তারা পাইলট প্রকল্পের বিরোধিতা করেন এবং সরকারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পশ্চিমা দেশগুলোর সুরেই কথা বলেন দুই বিশেষজ্ঞ—মিস ক্রিস লেওয়া ও মহসিন হাবিব। তারা পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার—দুই দেশের প্রত্যাবাসন উদ্যোগের সরাসরি বিরোধিতা করেন। তারা এমন বক্তব্য দেন যা থেকে স্পষ্ট হয় যে, রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশ সরকার থেকে একেবারেই আলাদা। অথচ এই দুই বিশেষজ্ঞ মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ নীতি সমর্থন করেই বক্তব্য দেওয়া প্রত্যাশিত ছিল। এতে মানবাধিকার কমিশনের পাইলট প্রকল্পের সপক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ ও বৈশ্বিক সমর্থন আদায়ের কাজ এগিয়ে যেত। মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশন শেষে গত ১৪ জুলাই জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তাতেও পাইলট প্রকল্পের বিষয়টি উল্লেখ নেই। দায়সারা, গতানুগতিক প্রস্তাব প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

অথচ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও অন্যান্য দূতাবাস পাইলট প্রকল্পের ব্যাপারে সরকারের নীতির আলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে স্থায়ী প্রতিনিধি আব্দুল মুহিত নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি পাইলট প্রকল্পকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করেন এবং বৈশ্বিক সমর্থন কামনা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং সচিব মাসুদ বিন মোমেন বিভিন্ন সময়ে অনবরত পাইলট প্রকল্প নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বছরের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গাকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ফেরত পাঠানোর জন্য সমর্থন চেয়ে যাচ্ছেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এই পাইলট প্রকল্প ইস্যুতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ইতিবাচক। ইতিমধ্যে সামরিক জান্তার দুটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মিলে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রাখাইন সফর করেছিল। প্রত্যাবাসনের আয়োজন নিয়ে প্রথমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল রোহিঙ্গারা। কিন্তু পরে কেউ কেউ অনাগ্রহ দেখায়।

পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রত্যাবাসন শুরু করতে সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপের বিপরীতে জেনেভা মিশন ও রাষ্ট্রদূতের অবস্থান ও কর্মকাণ্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের নীতি ও সিদ্ধান্ত দূতাবাস বা মিশন পর্যায়ে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বয় থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু পাইলট প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না। আগামী নভেম্বরে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে নিয়মিত অধিবেশনে ইউনিভার্সল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) হবে। বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হবে। সংসদ নির্বাচনের আগে এই পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সরকারের সঠিক অবস্থান তুলে ধরা হয় কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।