দেশে কোন অংশে পিছিয়ে নেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা - Southeast Asia Journal

দেশে কোন অংশে পিছিয়ে নেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা আজ কোন অংশে পিছিয়ে নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের ধারায় সমানতালে এগিয়ে তারা। সমতলের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা রয়েছে পার্বত্য অঞ্চলে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করা হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে সার্বিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্নমুখী কর্মসংস্থান। ফলে কমেছে বেকারত্ব, বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। আজ বুধবার (৯ আগষ্ট) বিশ্ব আদিবাসী দিবস। আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিবছর ৯ আগষ্ট পালন করা হয় এই দিবসটি। আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবদান ও অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে এই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। প্রতিবছর দিবসটি পালন করার জন্য একটি প্রতিপাদ্য বিষয় বেছে নেওয়া হয়। এ বছর আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য হল, “আত্ননিয়ন্ত্রনাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি”।

সরকারি চাকরি ও উচ্চ শিক্ষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা বরাদ্ধ।। তবে বাংলাদেশে সরকারি চাকরি ও উচ্চ শিক্ষায় কোটার কারণে পিছিয়ে নেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। বাংলাদেশের সার্বিক শিক্ষার হার ৭৪ দশকি ৬৬ শতাংশ ও চাকমা সম্প্রদায়ের শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি চাকরি, বাৎসরিক আয়, আর্থ সামাজিক অবস্থা পর্যবেক্ষনের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন এখন আর অনগ্রসর নয়, অথচ তারা এখনো রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটার অধিক সুবিধা গ্রহন করছে। ২০১৬ সালে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট কর্তৃক পরিচালিক এক গবেষণায় বলা হয়, খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসকারী চাকমা জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষার হার ও পেশার উন্নয়ন হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, কোনো কোনো চাকমা গ্রামের শতকরা ৪০ ভাগ লোক শিক্ষিত আবার কোথাও এই হার দ্বিগুন এবং শিক্ষিত চাকমাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন। কোটা সুবিধার কারনে সরকারি চাকরি ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই তারা।

দেশের সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষা, বৈষম্য নিরসন ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী, নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ দুর্গম এলাকার জনগণের জন্য শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে নির্ধারিত যোগ্যতার মাপকাঠি কিছুটা শিথিল করে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত রেখে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা প্রদানের জন্য প্রথমে এই চালু হলেও ক্রমান্বয়ে দেশের জনগণের উন্নয়নে কোটার পরিধি বাড়ানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ২৯ এর ৩ (ক) অনুযায়ী বাংলাদেশের পার্বত্য গ্রামসহ সারাদেশের উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়কে অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে বিবেচনা করে ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য পাঁচ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজসমূহেও আসন ব্যবস্থার ভিত্তিতে বিভিন্ন হারে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং বা ম্রো, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, বম খুমী ও চাক জনগোষ্ঠী বসবাস করছে। বকর্তমান সরকারে উন্নয়নের ধারায় পিছিয়ে নেই এ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্বে তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন প্রায় ১৩১৪৮ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ বাঙালি এবং ৪৮ শতাংশ উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। গভীর পাহাড়ি ভূখন্ড পার্বত্য চট্টগ্রামকে সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ৪৫টি। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬,৫০,১৫৯ জন। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর মধ্যে পার্বত্যাঞ্চলে ৯,২০,২১৭ জন (৫৬ শতাংশ) ও সমতল অঞ্চলে ৭,২৯,৯৪২ জন (৪৪ শতাংশ) বসবাস করে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট জনসংখ্যা ১৮,৪২,৮১৫। তন্মধ্যে বাঙালি ৫১ শতাংশ (৯,২২,৫৯৮), চাকমা ২৫ শতাংশ (৪,৬৬,৬৯৫), মারমা ১১ দশমিক ৫ শতাংশ (২,১৩,৭৫২), ত্রিপুরা ৬ শতাংশ (১,১৪,২৩০), ম্রো ২ দশমিক ৮ শতাংশ (৫২,৪৫৫), তঞ্চঙ্গ্যা ২ দশমিক ৫ শতাংশ (৪৫, ৯৭২) ও অন্যান্য এক দশমিক পাঁচ শতাংশ (২৭,১১৩)

অনেক দেশে আদিবাসীরা স্বীকৃতিই পায়নি
১৯৮২ সালের ৯ আগষ্ট জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকের পর জাতিসংঘ কর্তৃক আদিবাসী জনসংখ্যা সংক্রান্ত প্রথম ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। বৈঠকে জাতিসংঘের সংস্থাকে আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বের ৭০টি দেশে ৩০ কোটি আদিবাসী বাস করে। যাদের অধিকাংশই অধিকারবঞ্চিত। অনেক দেশে আদিবাসীরা স্বীকৃতিই পায়নি। কোনো দেশে উপজাতি, কোনো দেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে অভিহিত করা হয় তাদের।