রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা: গাম্বিয়ার সঙ্গে তথ্য বিনিময় করেছে যুক্তরাষ্ট্র
নিউজ ডেস্ক
রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার অভিযোগে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে; সে বিষয়ে গাম্বিয়াকে তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ২৬ আগস্ট রবিবার বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক ইউএস আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া এ কথা জানান।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেন, “আমরা নৃশংসতার দীর্ঘ ইতিহাস মোকাবেলার জন্য একটি সামগ্রিক অন্তর্বর্তীকালীন ন্যায়বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে প্রস্তুত রয়েছি।” তিনি বলেন, “এই বিচার প্রক্রিয়া সত্য, ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচারের দাবিতে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে তার জন্য ভুক্তভোগী এবং বেঁচে থাকা মানুষের দাবিকে সম্মান জানানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”
তিনি আরো বলেন, “গণহত্যার কথা স্বীকার করাই একমাত্র কাজ নয়। সহিংসতার অবসান ঘটাতে এবং নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে, সবাইকে একসঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।”
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা শুরুর ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেয়া এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া রোহিঙ্গা প্রবাসী সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি। বলেন, “চলমান নিপীড়নের মুখে আমি আপনাদের সহনশীলতার প্রশংসা করি।”
২০১৬-২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। নির্যাতন, যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা এবং পদ্ধতিগত সহিংসতা ও গণহত্যার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন এবং হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটিকে লক্ষ্যে পরিণত করে। তারা ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। এসব আক্রমণের ভয়াবহ প্রভাব ছয় বছর পরও অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরো অনেকে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জেয়া বলেন, “জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছি। তারা মিয়ানমারে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সহিংসতার বর্ণনা দেন। একই সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে গেলে আবার নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।”
আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া বলেন, “আমরা দায়ীদের জবাবদিহি করা, বেঁচে থাকা ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমাদের দেয়া প্রতিশ্রুতিতে অটল।” বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে পারবে না; এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “পুনর্বাসন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, সেখানে আমরা অবদান রেখেছি।”
আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া-কে সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ম্যান্ডেট হলো, ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারে সংঘটিত সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা।”
জেয়া বলেন, “আমরা জবাবদিহি চাওয়ার ক্ষেত্রে একা নই। বুধবার, আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি যৌথ বিবৃতিতে সামরিক সরকারের করা নিরবচ্ছিন্ন সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়ে আরো ১২টি দেশের সঙ্গে আমরা একমত প্রকাশ করেছি।”