কাপ্তাইয়ে সেনা সদস্য কর্তৃক মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যাচার!
নিউজ ডেস্ক
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীতে ৬ সেনা সদস্য কর্তৃক স্থানীয় এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণরুপে একটি অপপ্রচার এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক জবানবন্দীতে কথিত ধর্ষণের স্বীকার ওই কিশোরী তাকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সম্প্রতি, পাহাড়ের আঞ্চলিক উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ইউপিডিএফ ও জেএসএস নিয়ন্ত্রনাধীন অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত হিল ভয়েস ও সিএইচটি নিউজে ৬ সেনা সদস্য কর্তৃক মারমা কিশোরী ধর্ষনের অভিযোগ আনা হয়। এ নিয়ে গত দুদিন ধরে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সমাবেশের নামে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করে তোলে ইউপিডিএফ ও জেএসএস সমর্থিত সহযোগী সংগঠনগুলো।
এর প্রেক্ষিতে এবার কথিত ধর্ষণের স্বীকার সেই মারমা কিশোরী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে এসে ইউপি চেয়ারম্যান, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে নিজের জবানবন্দী দিয়েছেন। সেখানে সেই কিশোরী সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো সন্ত্রাসী দলগুলোর মুখোশ উন্মোচন করেছেন। এছাড়া তিনি সামাজিক ভাবে তার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
৩ সেপ্টেম্বর রবিবার প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ইউপিডিএফ ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল জেএসএস এর নিয়ন্ত্রানাধীন হিল ভয়েস ও সিএইচটি নিউজ তাদের পোর্টাল ও ফেসবুক পেজে ‘কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের মিতিংগাছড়ি আর্মি ক্যাম্পের ৬ জন সাদা পোশাকধারী সেনা সদস্য কর্তৃক একজন মারমা মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে’ মর্মে ব্যাপক প্রচারণা চালায়।
এ অবস্থায় কথিত ধর্ষনের অভিযোগ এনে সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে বিচারের দাবিতে পুরো পাহাড় জুড়ে মিছিল-সভা-সমাবেশের নামে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে দলগুলোর শাখা ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যার প্রেক্ষিতে সামাজিকভাবে তাদের সম্মানহানী করা হয়েছে দাবি করে কথিত ধর্ষণের স্বীকার সেই মারমা কিশোরী হাজির হন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মংকিউ মারমা জানান, ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে যে মারমা মেয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি ব্যাপক প্রচারের ফলে মেয়েটির ও পরিবার সামাজিকভাবে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষে পরিবারটি স্থানীয় কারবারীকে সাথে নিয়ে এসে চেয়ারম্যান অফিসে এই মর্মে বক্তব্য প্রদান করেছে যে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং মারমা পরিবারটিকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই ধরনের মিথ্যা বানোয়াট গুজব প্রচার করছে।
মারমা ওই পরিবারটি স্থানীয় সুশীল সমাজ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট ঘটনাটির সরেজমিনে সত্যতা জেনে, যারা মিথ্যা গুজব এবং অপ-প্রচার করছে তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় সে অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ সময় কিশোরী মেয়েটি স্থানীয় চেয়ারম্যানের নিকট একটি লিখিত জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দীতে ওই কিশোরী সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে তাকে জড়িয়ে হিল ভয়েস ও সিএইচটি নিউজের করা প্রতিবেদনকে সম্পুর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো একটি ঘটনা উল্লেখ করে, ‘সেনাবাহিনীর সাথে আমাদের পাড়ার একটি সু-সম্পর্ক রয়েছে, তা বিনষ্ট করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’ বলেও দাবি করেন।
ওই কিশোরী আরো জানান, আমরা সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করতে চাই। স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক অপপ্রচারে সামাজিক ভাবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন দাবি করে তিনি এর বিচার দাবী করেন।
রাঙামাটির কাপ্তাই চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম জানান, রাইখালী ইউনিয়ন এলাকায় ঐ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত আইন-শৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও গুজব প্রচার করছে। রাইখালী ইউনিয়নে মিতিংগাছড়ি নামে কোন সেনা ক্যাম্প নেই।
কথিত ধর্ষনের ঘটনায় মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী স্বার্থান্বেষী আঞ্চলিক তথাকথিত কালো মিডিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন মিতিংগাছড়ির কারবারী সহ স্থানীয় মারমা সম্প্রদায়ের নেতাগণ।
সূত্র বলছে, কাপ্তাই অঞ্চলে দীর্ঘদিন থেকে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুম এবং অস্ত্রবাজির মাধ্যমে সেখানকার জনসাধারণের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় জনসাধারণের অনুরোধে চাঁদাবাজ এবং অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। চলমান এসব অভিযান বন্ধ করতেই সন্ত্রাসীরা ধর্ষণ নামক তকমাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এধরণের কথিত ধর্ষণ অভিযোগ করে অভিযান কর্মসূচীকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে শান্তি-সম্প্রীতি এবং উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। অতীতেও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে যখনই কোনঠাসা হয়ে পড়ে তখনই তাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড রক্ষা এবং সাধারণ উপজাতিদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে নানা ধরনের মিথ্যাচার চালায়। কথিত ধর্ষণ অভিযোগটিও একই সুতোয় গাঁথা।
উল্লেখ্য, প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক উপজাতীয় সশস্ত্র দল ইউপিডিএফ ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল জেএসএস এর নিয়ন্ত্রানাধীন হিল ভয়েস ও সিএইচটি নিউজ দীর্ঘদিন ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশের সংবিধান, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও জনসাধারণকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্যকে নিয়ে মিথ্যা ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের জেরে অপপ্রচারের অভিযোগে সিএইচটি নিউজের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। সেনাবাহিনী ও সংসদ সদস্যকে নিয়ে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংবাদ সম্মেলন করে সিএইচটি নিউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর প্রতিও অনুরোধ জানানো হয়।