পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের আঞ্চলিক রাজনীতি কোন পথে যাচ্ছে? – পর্বঃ ৬
![]()
ফিচার ডেস্কঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীদেরকে ঘিরে বিভিন্ন মহল থেকে পরস্পরবিরোধী মূল্যায়ন পাওয়া যায়। পাহাড়ীদের একাংশ, যারা সক্রিয়ভাবে আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তারা বাঙ্গালীদের বড় একটি অংশকে “সেটেলার” বলে দাবি করে। তারা পার্বত্য অঞ্চলকে একটি “বিশেষ অঞ্চল” বলে প্রতীয়মান করে, বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো সকল নাগরিকদের প্রচলিত অধিকারের বিষয়টি মানতে চায়না। অপরদিকে বাঙ্গালীদের মধ্যে যারা সক্রিয় আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তারা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের অধিকার সমান, এমন যৌক্তিক দাবি করছে। এছাড়া গত শতকের ৮০’র দশকে তৎকালীন সরকার প্রদত্ত যেসকল ভূমি অসহায় বাঙ্গালীদেরকে বন্দোবস্তি দেয়া হয়েছে তার পূর্নবাস্তবায়নসহ সম অধিকার চায় তারা। তবে আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাঙ্গালীদের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করে তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। বাঙ্গালীদের মধ্যে এই অনৈক্যর সুযোগ নিচ্ছে উপজাতি আঞ্চলিক দলগুলো। অপরদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণ উপজাতিদের মধ্যে যে পরিমান আগ্রহ রয়েছে বাঙ্গালীদের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে গুনগতমান ধরে রাখার বিষয়ে ঐ পরিমান আগ্রহ নেই। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা সরকার প্রদত্ত বিশেষ কোটা সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি নিজ যোগ্যতাতেও দেশে ও বিদেশে সুনামের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। অপরপক্ষে বাঙ্গালীরা আন্তঃকলহ, গুনগত শিক্ষা অনুপস্থিতি এবং সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেইভাবে এগুতে পারছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন অবস্থানের পরেও বাঙ্গালীদের মধ্যে থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের গুনগত নেতৃত্ব বেড়ে উঠার ক্রমধারা মন্থর গতিতে এগুচ্ছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীলতা আনয়নে বাঙ্গালীদের মধ্যে থেকে যোগ্য নেতৃত্ব এবং বাঙ্গালী ভিত্তিক আঞ্চলিক দলের ঐক্যবদ্ধ সক্রিয় কর্মকান্ড একান্ত প্রয়োজন।
সাউথইস্ট জার্নালের পক্ষ হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীদের মধ্যে থেকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে যারা উল্লেখযোগ্য ভাবে সম্পৃক্ত তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের ৬ষ্ঠ পর্বে পার্বত্য অধিকার ফোরামের অঙ্গ-সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের দীঘিনালা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবিরের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হলো। তিনি রাঙ্গামাটি কলেজে প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত আছেন।
সাউথইস্ট জার্নালের সাথে তার কথোপকথন নিম্নরুপঃ
সাউথইস্ট জার্নাল: বর্তমানে পাহাড়ে বাঙ্গালীদের রাজনীতির বর্তমান গুনগত মান এবং এর ভবিষ্যৎ কি বলে মনে করেন?
হুমায়ুন: প্রথমেই বলি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা, যিনি দেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। বর্তমানে আমাদের পার্বত্য অঞ্চলটাও কিছুটা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। পাহাড়ে আমরা যারা আছি আঞ্চলিক বাঙ্গালী সংগঠন করি, আমরা আসলে বাঙ্গালীদের অধিকার নিয়ে কাজ করি। আর বর্তমানে আমাদের বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর যে গুনগত মান আমার মনে হয়না এর ভবিষ্যতটা অতটা উজ্জল হবে। আমরা যখনই একটা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাই তখনই আমাদের গুরুত্বপূর্ন নেতারা তখন দালালীর পর্যায়ে পৌঁছে যায়, ঐটা করতে গিয়ে তারা তখন বাঙ্গালীদের আধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়। এজন্যই আমাদের বর্তমান আঞ্চলিক বাঙ্গালী রাজনীতির অবস্থা খুবই খারাপ, যেটা ভবিষ্যতে নিরীহ বাঙ্গালীদের যে চাওয়া-পাওয়া অধিকারের বিষয় সেটায় আমরা পিছিয়ে পড়বো।
সাউথইস্ট জার্নাল: বাঙ্গালীদের যে আঞ্চলিক রাজনীতি আছে সেটার সাথে জাতীয় রাজনৈতিক দলের কোন সাংঘর্ষিক অবস্থা আছে কি? অনেকেই মনে করেন ইতিপূর্বে বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনেকের সাথেই বিএনপি-জামাতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
হুমায়ুন: আমরা যেসব আঞ্চলিক বাঙ্গালী সংগঠন করি সেসব সংগঠনের সাথে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক বা কোন সমস্যা নাই। আর পূর্বের যারা আমাদের সিনিয়র নেতারা ছিলো, অনেকেই বলতো তারা বিএনপি-জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতা ছিলো, কিন্তু বর্তমানে সেটা নাই। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টাতা থাকলেতো সংগঠন এগুতে পারবে না তাই বর্তমানে আমরা এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট নই।
সাউথইস্ট জার্নাল: অনেক বাঙ্গালী আছে যারা আঞ্চলিক রাজনীতি করে, তাদের বিরুদ্ধেতো এলাকার জনগনই মামলা করেছে, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির কারণে! এবিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
হুমায়ুন: হ্যাঁ এটা বাস্তব যে, অনেক বাঙ্গালী সংগঠনের নেতারা আছে যে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে, চাঁদাবাজি করে, তাদের নামে মামলাও রয়েছে। যারা এসব কাজ করে তারা আসলে আমাদের বাঙ্গালী সংগঠনের কেউনা, তারা বাঙ্গালী সংগঠনের লেবাস ধরে এসব অপকর্ম করছে। যারা এসব কর্মকান্ডে লিপ্ত, প্রশাসনের সহায়তায় এসবের প্রতিকার করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
সাউথইস্ট জার্নাল: আপনার কাছে কি মনে হয়, বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর মধ্যে যে বিভেদ আছে সেগুলি একসময় ঐক্যে রুপান্তর করা সম্ভব?
হুমায়ুন: বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য অবশ্যই গড়ে তোলা সম্ভব। আমি মনে করি, যারা আঞ্চলিক বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব পর্যায়ে আছে তাদের এক্ষেত্রে আরো সহানুভূতিশীল হতে হবে, কম্প্রোমাইজ করতে হবে। তাদের এটা ভাবতে হবে যে, আমরা নিজের স্বার্থ নয় বরং বাঙ্গালী অধিকারের জন্য কাজ করছি। ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐক্যবদ্ধ হওয়ার যে মন্ত্র দিয়েছেন, আমি মনে করি সেই মন্ত্র মনে প্রানে ধারণ করে যদি সবাই এগিয়ে আসে এবং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যদিদি সহযোগিতামূলক আচরণ করে তাহলেই বাঙ্গালীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে অধিকার আদায় করা সম্ভব হবে।
সাউথইস্ট জার্নাল: স্থানীয় অনেকেরই শঙ্কা, বাঙ্গালী আঞ্চলিক রাজনীতির নামে আরেকটি চাঁদাবাজ ইউপিডিএফের সৃষ্টি হলো কি না? এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
হুমায়ুন: বর্তমানে আঞ্চলিক যে বাঙ্গালী সংগঠনগুলো আছে তাদের মধ্যে একটা বিভেদ আছে, তারা কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গা থেকে জাতির জন্য কাজ করার নামে সহায়তা নেয় কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করে না। সাধারণ যারা নির্যাতিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী আছে তারা দেখা যায় বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমাদের সহযোগীতা করে, যেমন ধরেন, আমরা ছাত্র মানুষ, বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমাদের নিজেদের অর্থেই যেতে হয়, অনেকেই আমাদের প্রোগ্রামের যাতায়াত ভাড়া ম্যানেজ করে দেয়। কিছু কিছু লোক আছে যারা এসব টাকা নিয়ে নিজেরা ভোগ করে, সংগঠনে ব্যয় করেনা। তখনই ঐ এগিয়ে আসা বাঙ্গালীরা মনে করে তারা মনে হয় সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে, চাঁদাবাজি করে সংগঠনের নামে।
সাউথইস্ট জার্নাল: বাঙ্গালী সংগঠনগুলোতে শিক্ষিত ও উন্নত মানসিকতার কর্মীর অভাব রয়েছে কি?
হুমায়ুন: অবশ্যই বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর মধ্যে শিক্ষিত ও উন্নত মানসিকতার কর্মীর অভাব রয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বাঙ্গালী ও ৪৯ শতাংশ উপজাতি রয়েছে, শান্তিচুক্তির ধারা অনুযায়ী পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালীদের অ-উপজাতি আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমরা বাঙ্গালীরা যখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা চাকুরিতে ভর্তি হতে যাই, তখনই স্থায়ী বাসিন্দা সনদ নামে একটি সনদ জমা দিতে হয়, যা সংগ্রহ করা খুবই কষ্টসাধ্য। আর উপজাতিদের জন্য রয়েছে কোটা পদ্ধতি। যার বলে উপজাতিরা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল কলেজে ভর্তি ও ভালো ফলাফল নিয়ে এসে পাহাড়ে নিজেদের উন্নয়ন করে কিন্তু আমাদের কোটা পদ্ধতি না থাকায় আমরা অনেকটা পিছিয়ে। কিন্তু তবুও আমাদের যেহেতু কোটা নেই সেহেতু ভালোভাবে পড়ালেখা করে, বর্তমান যুগগ হিসেবে সমতলের সাথে প্রতিযোগীতা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যারাই এগিয়ে যেতে পারবো তারাই বাঙ্গালীর জন্য কাজ করতে পারবো। এজন্য যারা শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ আছেন বা যারা পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে আছে আমরা চাই তারা ভালোভাবে লেখাপড়া করে জাতির জন্য কাজ করুক। পাহাড়ে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালীরা আসলে সবাই দরিদ্র। আর দারিদ্রতার কারণে সবাই পড়ালেখা করতে পারে না। যার ফলে বেশীদূর এগুনো সম্ভব হয়না, দেখা যায় কোনমতে এসএসসির পর ভবিষ্যত শেষ, দারিদ্র বাবা-মা খরচ চালাতে পারে না। এরকম অনেকে আমাদের সংগঠনের সাথে থাকলেও আমরাও সেভাবে সহযোগীতা করতে পারিনা, দেখা যায় আমরা নিজেরাও খুব কষ্ট করে পড়া-লেখা করতেছি। যার মাধ্যমে আমরা সামনে এগিয়ে যাবো, জাতির জন্য ভালো কিছু করবো। এজন্যই আমাদের শিক্ষিত কর্মীর অভাব, কেননা আমরা দরিদ্র। দেখা যায়, উপজাতিদের বিভিন্ন সংস্থা, ব্রাক, ইউএনডিপি, এনজিও সংস্থাসহ বেশ কিছু সংস্থা বৃত্তি দেয়, যার সাহায্যে তারা পড়ালেখা করতে পারে। আর বাঙ্গালীরাতো সেরকম সহযোগীতা পাচ্ছেনা। এরকম যদি কোন সংস্থার কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়, যদি আমাদের সহায়তা করতো তাহলে আমাদের বাঙ্গালী ছাত্ররা এগিয়ে যেতে পারতো। আর তখনই আঞ্চলিক রাজনীতিতে শিক্ষিত কর্মীর ঘাটতিটা পূরণ হতো।
সাউথইস্ট জার্নাল: গ্রাম পর্যায়ে যারা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে তাদের বিষয়ে আপনাদের কোন পদক্ষেপ আছে কি ?
হুমায়ুন: গ্রাম পর্যায়ে শুরুতেই লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে তাদের আমরা যতটুকু সম্ভব সহযোগীতা করার চেষ্টা করছি। আমরা নিপীড়িত, নির্যাতিত, অধিকারহারা জনগোষ্ঠী, আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আমরা ভালো একটা প্লাটফর্মে পৌঁছাতে পারলে আমাদের জাতির জন্য আমরা কাজ করতে পারবো। আমরা চেষ্টা করি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে দরখাস্তের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের পাশে দাঁড়াতে। যদি কোন সংস্থা বা সরকারী দপ্তরগুলো এখানকার বাঙ্গালীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতো তাহলে আরো ভালো হতো। আমাদের এ অঞ্চলের আসলে গুনগত মেধাসম্পন্ন শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে। উপজাতিদের জন্য দেখা যায়, ২০ টা পরিবারের জন্য একটা প্রাইমারী স্কুল বা হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে আর বাঙ্গালী এলাকাগুলোতে প্রায় ৫-৬ শ পরিবারের জন্য একটা স্কুল করা হয়। সেখানে বাঙ্গালীরা সঠিকভাবে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেনা, বা পড়ালেখা করতেও পারছে না। এটা থেকে উত্তোরনে এবং বাঙ্গালী শিশুদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এনজিও সংস্থা ও সরকারের সহানুভূতিশীল একান্ত হস্তক্ষেপ দরকার বলে আমি মনে করি।
সাউথইস্ট জার্নাল: শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেতে আপনাদের গ্রাম পর্যায়ে কোন পরিসংখ্যান কমিটি আছে কি না?
হুমায়ুন: গ্রাম পর্যায়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেতে আমাদের কোন পরিসংখ্যান কমিটি এখনও পর্যন্ত নাই তবে আমরা চেষ্টা করবো ওইরকম একটা ইউনিটি গড়ে তুলতে যার মাধ্যমে আমাদের ঝরে পড়া শিশুরা আবারো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
সাউথইস্ট জার্নাল: বাঙ্গালীদের ও বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর মানোন্নয়নে আপনি কি স্বপ্ন দেখেন?
হুমায়ুন: বাঙ্গালী ও বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর মানোন্নয়নে আমি প্রথমেই ঐক্যের স্বপ্ন দেখি। যদি কোন বিভেদ না থাকে এবং ঐক্য থাকে তাহলে আমরা আমাদের জাতির অধিকারের জন্য এগিয়ে যেতে পারবো। বাঙ্গালীরা যারা পাহাড়ে বসবাস করছে তাদের যে ভূমি সমস্যা আছে সেটার জন্য একটা ঐক্য দরকার। আর কাউকে শত্রু না ভেবে আমরা যদি একটা ইউনিটি, গন্ডির মধ্যে থেকে সরকারের কাছে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরতে পারি, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যদি আমরা সঠিক আন্দোলন করতে পরি তাহলে আমাদের অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা সম্ভব। আমি স্বপ্ন দেখি, আমরা একদিন এখান থেকেই ডিসি, ম্যাজিষ্ট্রেট হবো, জনপ্রতিনিধি হয়ে এখানকার বাঙ্গালীদের তথা নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবো। তাছাড়া আমরা নির্যাতিত বাঙ্গালীরা কখনো আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না।
সাউথইস্ট জার্নাল: চাকমা সমাজে দেখা যায়, বর্তমানে ২০-২৫ জন পিএইচডি হোণ্ডার আছেন যারা দেশে-বিদেশে কর্মরত আছেন। বাঙ্গালীদের শিক্ষার গুনগত মান ঐ পর্যায়ে যেতে পারছে কি না, যে পর্যায়ে গেলে কার্যকরী নেতৃত্ব দিতে পারবে?
হুমায়ুন: চাকমাদের মধ্যে বর্তমানে অনেক পিএইচডি হোল্ডার আছে এটা সত্য, আমরা আসলে সেখান পর্যন্ত যেতে পারছিনা কারণ, কোটা ও দারিদ্রতা। দারিদ্রতাই প্রধান সমস্যা, দারিদ্রতার কারনেই পার্বত্য অঞ্চলের নিপীড়িত, নির্যাতিত, অবহেলিত বাঙ্গালীরা তাদের শিক্ষার প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তরগুলোর পার করতে পারছে না। দারিদ্রতা দূর করা গেলে আমাদের শিক্ষার মানও বাড়বে। আর কোটা পদ্ধতিটা বাদ দিয়ে শহরাঞ্চলে যে শিক্ষা পদ্ধতি আছে আমাদেরও পার্বত্যাঞ্চলে সেই পদ্ধতিটা দরকার। অথবা আমরাও যদি কোটা পদ্ধতি পাই বা দারিদ্রতা দূর করতে পারি তাহলে জাতির জন্য আমরাও কিছু করতে পারবো।
দেখা যায়, আজ এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য পেয়ে উপজাতিরা পিএইচডিধারী, আর আমাদের মধ্যে যেসব বাঙ্গালীরা প্রভাবশালী, জাতীয় রাজনীতির সাথে জড়িত, তারা আসলে আমাদের নির্যাতিত বাঙ্গালীদের পাশে দাঁড়ায় না। যেমন ধরেন, উপজাতিদের মধ্যে দরিদ্র কেউ যদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স চায় তখন গ্রামের বিত্তশালীরা সহায়তা করে তাকে ভর্তি করিয়ে দেয়, পরবর্তীতে সেই ছেলেটি অনার্স-মাস্টার্স বা বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে বের হয়ে জাতির মুখ উজ্জল করে। আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে ওরকম সহানুভূতিটা নেই। আমরা ভাবি, আমার আছে থাক, ওর কি দরকার? এই জায়গায় যদি আমরা বাঙ্গালীর উন্নয়ন করতে চাই, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করতে চাই, অখন্ড বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই তাহলে বাঙ্গালীদের মধ্যে যারা প্রভাবশালী আছে তাদেরও অসহায় বাঙ্গালীদের পাশে এগিয়ে আসতে হবে।
সাক্ষাৎকারের ভিডিও: