তিন দিন সাগরে ঘুরিয়ে ১৫০ রোহিঙ্গাকে টেকনাফে নামিয়ে দিলো দালালরা

নিউজ ডেস্ক
রোহিঙ্গা বোঝাই বঙ্গোপসাগরে ভাসমান একটি ট্রলার কক্সবাজারে টেকনাফ সৈকতে টেনে নিয়ে আসেন জেলেরা। এ ট্রলারে শিশু, নারী ও পুরুষসহ দেড়শ রোহিঙ্গা ছিলেন।
সাগরে তিন দিন কাটানোর পর বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ভোরে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সৈকতের মহেষখালী পাড়া ঘাটে ট্রলারটি আসে। এরপর সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা কান্নাকাটি করে নেমে পড়েন। তাদের স্থানীয় দালালরা জোরপূর্বক পাহাড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য জহির আহমদ বলেন, সাগরে যাত্রীবাহী একটি মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ভাসমান দেখে জেলারা টেনে কূলে নিয়ে আসেন। ট্রলারে দেড়শ মতো যাত্রী ছিলেন। সবাই বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বসবাসকারী। এর মধ্য বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ঘাটে একটি ফিশিং ট্রলার ভাসমান রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনাফের মহেষখালী পাড়ার মেরিন ড্রাইভে ছোট শিশুদের কোলে নিয়ে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ রাস্তায় বসে কান্নাকাটি করছেন। আবার অনেকে টমটমে করে ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন।
এ সময় কথা হয় ট্রলার থেকে নেমে মেরিন ড্রাইভে বসে থাকা হামিদ হোসেনের সঙ্গে। তখন তার আশপাশে সাত শিশুসহ পাঁচ নারী বসে কান্নাকাটি করছিল। তারা সবাই উখিয়া বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।
হামিদ হোসেন বলেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি খুব খারাপ, প্রতিদিন খুনাখুনি হচ্ছে। সে কারণে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে উন্নত জীবনের আশায় সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছিলাম। আমরা ট্রলারে প্রায় ১৫০ জন ছিলাম। সেখানে আমার শিশু সন্তানসহ পরিবারের ছয় সদস্য সদস্য আছে।
তার ভাষ্যমতে, জীবন রক্ষার জন্য সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। প্রথমে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে দালালদের মাধ্যমে টেকনাফের একটি পাহাড়ে পাঁচ দিন ছিলাম। সেখান থেকে ছোট নৌকা নিয়ে সাগরে থাকা ট্রলারে উঠি। ট্রলারে আমার মতো অনেকে ছিল। এরপর মাঝিরা ইন্দোনেশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সাগরে তিন দিন ঘোরাঘুরি করে। একপর্যায়ে কূলের কাছাকাছি এসে মাঝিমাল্লারা ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ছোট নৌকায় দুটি আমাদের ট্রলারটি টেনে কূলে নিয়ে আসে। মূলত আমরা মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ইন্দোনেশিয়া যাত্রা করেছিলাম।
টেকনাফের মহেষখালী ঘাটের এক নৌকার মাঝি মোহাম্মদ আলম বলেন, প্রতি দিনের ন্যায় ভোরে মাছ শিকারে যেতে ঘাটে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় ঘাটে একটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে ঝাঁপ দিয়ে অন্তত ১৫০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সৈকতের কূলে উঠতে দেখা যায়। তখন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা কান্নাকাটি করছিল। ওই ট্রলারে ৪-৫ জন ছাড়া বাকিরা সবাই নারী ও শিশু ছিল। পরে সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ছোটাছুটি করে পালিয়ে যায়।
জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, সাগরপথে মালয়েশিয়াগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রলার টেকনাফে কূলে ফিরে আসার খবর শুনেছি। তবে বিষয়টি কোস্ট গার্ড দেখছেন।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ কোস্ট গার্ডের স্টেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার সোলেমান কবির বলেন, এ ধরনের একটি সংবাদ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।