নৌ চলাচল বন্ধ, খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিনবাসী

নৌ চলাচল বন্ধ, খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিনবাসী

নৌ চলাচল বন্ধ, খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিনবাসী
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়ার কারণে গত ৫ দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে যাত্রী ও পণ্যবাহী সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংকটে পড়েছে।

দ্বীপবাসীর দাবি, এ সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে অবস্থা খুব সংকটাপন্ন হবে। আর বিকল্প পথে যাত্রী ও পণ্য পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বসবাস করে ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় বাসিন্দাদের খাদ্য ও নিত্যপণ্য আসে টেকনাফ থেকে। আর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌরুট। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে প্রতিদিনই দ্বীপের বাসিন্দারা আসা-যাওয়া করে ট্রলারে। একই সঙ্গে খাদ্য পণ্য পরিবহনেও ব্যবহৃত হয় ট্রলার।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত চলছে। এই সংঘাতের জেরে এখন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমার থেকে ছোড়া হচ্ছে গুলি। এরই মধ্যে গেলো ৫ জুন, সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমার থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। এরপর শনিবারও পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলি করে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি।

এমন পরিস্থিতিতে ৫ দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে নৌরুটে সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে দ্বীপের বাসিন্দারা।

দ্বীপের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনার শেষে নাইক্ষ্যংডিয়া এলাকা দিয়ে পার হওয়ার সময় মিয়ানমারের প্রান্ত থেকে দ্বীপে যাতায়াত করা বোটগুলো লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। যার কারণে মানুষ প্রাণের ভয়ে পারাপার করতে চাই না। তবে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। গত কয়েক দিনে ২-৩টি বোটে এ রকম আক্রমণ চালানো হয়। পরে বোট চলাচল বন্ধ করে দেন মালিকরা।

এদিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে সেন্টমার্টিনে দেখা দিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট। দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজার বাসিন্দাদের মধ্যে যারা দিনে এনে দিনে খায় আপাতত কষ্টে বেশি পড়েছেন তারাই। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় সেন্টমার্টিনের দোকানগুলোতে যেমন মজুদ করা খাদ্যপণ্য শেষ হতে চলেছে; তেমনি সেই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম দ্বিগুণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সমস্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় অবস্থিত। সেখান থেকেই গুলি ছোড়া হচ্ছে। তবে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি নাকি বিদ্রোহীরা গুলি করছে তা কেউ বলতে পারছে না। আর এই সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, দ্বীপে আসার পথে নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্ত থেকে সেন্টমার্টিনগামী নৌযানের ওপরে মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়ার কারণে গত ৫ দিন ধরে সেন্টমাটিন-টেকনাফ যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌ-যান চলাচল বন্ধ। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সংকট হচ্ছে। সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর অবস্থা খুব সংকটাপন্ন হবে। সমস্যা দীর্ঘ হওয়ার আগে যেন সরকার সমাধানের চেষ্টা করেন সেই কামনা করছি।

সেন্টমার্টিন স্পিড বোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, বোটে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখে মানুষ ভয়ে যাচ্ছে না। তাছাড়া ওই পথ ছাড়া সেন্টমার্টিনে আসার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা বা রুটও নাই। প্রতিদিন সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌ রুটে ৪টি ট্রলার ও ৬টি স্পিড বোটের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ আসা-যাওয়া করার পাশাপাশি খাদ্য ও নিত্যপণ্য বহন করতেন।

আর কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিড বোটকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। তাই ওই নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরিভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখছি।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।