উত্তর ফেনীর বিস্তীর্ণ জনপদ তলিয়ে গেছে, হাহাকার বানভাসীদের
নিউজ ডেস্ক
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর উত্তরের উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আড়াই শতাধিক গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। তলিয়ে আছে রাস্তাঘাট ও ঘরবসতি। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বন্যাদুর্গতরা। বিপৎসীমার ১৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাঘাট থেকে ঘরবসতি কিছুই রেহায় পায়নি বানের পানি থেকে। ডুবে গেছে সব। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেনীর ৪ উপজেলার ৪ লক্ষাধিক মানুষ। গত তিনদিনের ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। গত চার দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যেও বন্যার এমন ভয়াবহতা দেখেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বন্যার পানিতে আটকেপড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের উদ্ধার করতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে ছাত্র-জনতা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।
ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৭০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ ৯০টির বেশি গ্রাম পানিতে ভাসছে।
ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে বন্যা। এরইমধ্যে ফেনীর সদর ও দাগনভূঞার বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চালেও ছুঁয়েছে বানের পানি। আশ্রয় খুঁজছেন স্থানীয়রা।
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বুধবার বিকেলে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছেন সেনা সদস্যরা। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার এলেও, বৈরি আবহাওয়ার কারণে ফেরত যেতে হয়।
ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দেয়া ও উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরাও।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মোসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে বন্যার্তদের সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্চাসেবী সংগঠন।
গত জুলাই মাসের শুরুতে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫ স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। সেসব স্থানে জোড়াতালির মেরামতের পর চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরও ১২ স্থানে ভেঙে প্লাবিত হয় ১০০টির বেশি গ্রাম। অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মাছের ক্ষতি ছাড়িয়ে যায় ৩০ কোটি টাকারও বেশি।
১৫ দিনের মাথায় আবার বন্যা। দিশেহারা সীমান্তবর্তী ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার বাসিন্দারা। ক্ষতির পরিমাণ কয়েশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ দফা ও আগের দুই দফা মিলিয়ে বন্যায় বাঁধের ২৭টি স্থানে ভাঙন দেয়া দিয়েছে। সব জায়গা দিয়ে ঢুকছে পানি।
ফেনীর মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া এ তিন নদী প্রতি বছরই জনপদের লাখো পরিবারের জন্য দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে। অথচ এসব নদীর আগ্রাসন থেকে রক্ষায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ১২২ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, সেই বাঁধ ভাঙার কারণেই প্রতিবছর পড়তে হয় এমন বন্যার কবলে। ফলে একটু ভারি বৃষ্টি হলেই বাঁধ ভেঙে জনপদে ঢুকে পড়ে পানি। ডুবে যায় ঘরবসতি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। ভোগান্তি পোহাতে হয় প্রতি বর্ষা মৌসুমে। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।